সানজানা রহমান যুথী
Advertisement
শিল্প মানুষের জীবনকে ধারণ করে। জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত শিল্প। কারো কারো ক্ষেত্রে শিল্পই হলো তাদের জীবিকার প্রধান উৎস। আমাদের বাঙালিদের অন্যতম প্রাচীন শিল্প হলো হস্তশিল্প। হস্তশিল্প বলতে এমন শিল্পকে বোঝায় যা মানুষের হাতে তৈরি হয়, কোনো মেশিনের সাহায্য ছাড়াই বা খুব সামান্য মেশিনের সহায়তায়। এটি মূলত বিভিন্ন ধরনের উপকরণ যেমন কাপড়, মাটি, বাঁশ, কাঠ, ধাতু, চামড়া ইত্যাদি ব্যবহার করে তৈরি হয়।
ধারণা করা হয় প্রাগৈতিহাসিক যুগে হস্তশিল্পের সূচনা হয়েছিল। তখন মূলত মানুষ নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে ব্যবহার করত। পরিবারের সদস্যরা সবাই মিলে এই কাজ করতেন। যা ছিল তাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উপায়। প্রাচীনকালে শাসকশ্রেণি এবং অভিজাতশ্রেণি এসব দ্রব্য ব্যবহার করত বলে হস্তশিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটে। তখন এসব দ্রব্য উপহার হিসেবেও ব্যাপক ব্যবহার করা হতো।
আদি ও মধ্যযুগীয় বাংলার গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ছিল হস্তশিল্প ও কুটির শিল্প। বয়ন, ধাতব পদার্থের কাজ, জুয়েলারি, বিশেষ করে রুপার তৈরি অলঙ্কার, কাঠের কাজ, বেত এবং বাঁশের কাজ, মাটি ও মৃৎপাত্র হস্তশিল্প হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল। গ্ৰাম বাংলার মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনের চিত্র তাদের শিল্পে তুলে ধরত। কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিজেদের দুঃখ-দুদর্শার কথা ভাগ করে নিত। এই শিল্পে আয় কম হলেও এখনো অনেকেই ভালোবেসে হস্তশিল্পকে আঁকড়ে আছেন। কেউ কেউ পারিবারিক সূত্রে বংশানুক্রমে এই কাজ করে যাচ্ছেন।
Advertisement
এখনো আমাদের মাঝে কিছু সংখ্যক রুচিশীল মানুষ আছেন, যাদের দরুন এই হস্তশিল্প আমাদের মাঝে বেঁচে আছে। এছাড়াও আমাদের দেশের কিছু কিছু বড় বড় ব্র্যান্ড প্রাচীন বাংলার এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের দেশের হস্তশিল্প মোঘল আমল থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। দেশের বাহিরেও অনেক পন্য রপ্তানি করা হয়। যা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে হস্তশিল্প দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ সৃষ্টি করবে বলে আশা করা যায়।
কিন্তু এখন আর আগের মতো আমাদের দেশে এ শিল্পের ক্রেতা খুব বড় পরিসরে নেই। শহরে কেনাবেচা বেশি হলেও গ্ৰামে নাম মাত্র পারিশ্রমিকের কারণে কারিগরদের কাটাতে হত হতদরিদ্র জীবন। যার ফলে অনেকেই এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প ছেড়ে দিচ্ছেন। শুধু কোনো অনুষ্ঠান আয়োজনে বা বিশেষ দিনে মেলা বসলে এ শিল্পের পণ্য বেশি বেচাকেনা হয়। এছাড়াও বিদেশে আমদানির ক্ষেত্রেও দেখা যায় সংকট। কারণ মূলধন ও উন্নত কাঁচামালের অভাবে ব্যাপকভাবে হস্তশিল্প প্রসারিত হচ্ছে না। এছাড়াও বৈদেশিক নানা রকম শিল্প পণ্যের কারণে মানুষও এখন দেশীয় পণ্যের দিকে কম ঝুঁকছে।
তাই সবার উচিত দেশীয় এই শিল্পের প্রসারে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করে যাওয়া। শিশুদের এ শিল্পের ব্যাপারে অবহিত করতে বিদ্যালয়ে বাৎসরিক হস্তশিল্প মেলার আয়োজন করা যেতে পারে। উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে সরকারি ও বেসরকারি নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করা যেতে পারে। এছাড়াও তৃণমূল পর্যায়ে কারিগররা যাতে সঠিক পারিশ্রমিক পায় তার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এছাড়াও সরকারিভাবে বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা যারা পাশাপাশি উন্নত কাঁচামালের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তবেই আমরা আমাদের শত বছরের পুরোনো শিল্পকে এই আধুনিক যুগেও বাঁচিয়ে রাখতে পারব।
আরও পড়ুন পাতায় কেনা এক টুকরো শৈশব এক সময়ের আধুনিক শহর আজ নিঃসঙ্গ ভুতুড়ে দ্বীপকেএসকে/জিকেএস
Advertisement