জাতীয়

মিছিল-মিটিংয়ের কারণে শাহবাগ এড়িয়ে চলায় বৈশাখের বেচাকেনায় ভাটা

মিছিল-মিটিংয়ের কারণে শাহবাগ এড়িয়ে চলায় বৈশাখের বেচাকেনায় ভাটা

দোকানে দোকানে ঝুলছে রঙিন বৈশাখী পোশাক। দোকানের প্রধান ফটকগুলোর সামনে শোভা পেয়েছে আসন্ন বাংলা নতুন বছর ১৪৩২ উপলক্ষে শুভেচ্ছা বার্তা। তবে নতুন বছরের শুভেচ্ছা বার্তা আর রঙিন পোশাকের ভিড়ে অনেকটাই অলস সময় কাটছে দোকানি ও পোশাক বিক্রেতাদের। নতুন বছর উপলক্ষে আগত ক্রেতাদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বার্তা সম্বলিত ব্যনার-ফেস্টুন ঝোলানো হলেও নেই কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা সমাগম। ফলে পহেলা বৈশাখ কেন্দ্রিক বেচা-বিক্রিতে পরেছে ভাটা।

Advertisement

তবে ক্রেতা না থাকার কারণ হিসেবে দুটি বিষয়কে দুষছেন বিক্রেতারা। তাদের অভিযোগ, শাহবাগ নিয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলনের কারণে বর্তমানে অধিকাংশ ক্রেতা শাহবাগকে এড়িয়ে চলেন। এছাড়া ঈদ শেষ হওয়ার পরপরই পহেলা বৈশাখের আগমন হওয়ায় ক্রেতা সংকট বলে ধারণা তাদের।

শুক্রবার (১১এপ্রিল) বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত আজিজ সুপার মার্কেট ঘুরে ও বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে প্রায় প্রতিটা দোকান সেজেছে নতুন নতুন রঙিন পোশাকে। তবে হাতে গোনা কয়েকজন ক্রেতার দেখা মিললেও অধিকাংশ দোকানই রয়েছে ক্রেতাশূন্য।

Advertisement

বিসর্গ শোরুমের বিক্রয় কর্মী সোনিয়া বলেন, এ বছর ঈদের পরপরই পহেলা বৈশাখ। যারা কেনা-কাটা করার তারা ঈদের মধ্যে তা করে ফেলেছেন। তাই খুব একটা বিক্রি নেই। হালকা-পাতলা কিছু বিক্রি হচ্ছে। দুইদিন পরেইতো পহেলা বৈশাখ। এটাই শেষ শুক্রবার। ছুটির দিন হিসেবে যে ক্রেতা থাকার কথা সেই তুলনায় কোনো ক্রেতা নেই। এর থেকে সাধারণ সময়েই ক্রেতা বেশি হয়।

সামনে বিক্রি বাড়বে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আশা করি সন্ধ্যা নাগাদ বিক্রি কিছুটা বাড়তে পারে। তবে সেটাও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তাছাড়া কাল এবং পরশু দুইদিন সময় আছে। যদি কেউ শেষ সময়ে কিনতে আসে তাও আসতে পারে।

কাপড় শোরুমের বিক্রেতা সংযুক্তা দেবনাথ বলেন, মোটামুটি বিক্রি আছে। তবে খুব যে ভালো তা না। খুবই সীমিত। বিগত পহেলা বৈশাখ কেন্দ্রিক বেচা-বিক্রি যেমন ছিল সেই তুলনায় এটা কিছুই না।

বাকি দিনগুলোতে বিক্রি বাড়বে বলে মনে করেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সামনে মাত্র দুইদিন আছে। সেই হিসেবে মনে হয়না বিক্রি বাড়বে বা চাপ পড়বে। কারণ আজকে শুক্রবার ছুটির দিন। আজই ফ্রি ছিল। যারা চাকরি-বাকরি করেন তাদের মূলত উদ্দেশ্য থাকে শুক্রবার বের হব। কিন্তু আজই যদি চাপ না বাড়ে তাহলে শনিবার-রবিবার কোনো চাপ পরবে না।

Advertisement

লন্ঠণ শোরুমের বিক্রেতা মো.আফজাল বলেন, পহেলা বৈশাখ কেন্দ্রিক বিক্রি কিছুই নেই। একদমই না বলার মতো। বিগত দিনের তুলনায় বিক্রি একদমই নেই।

ক্রেতা না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঈদের পরপরই তো পহেলা বৈশাখ, এই কারণে ক্রেতা নেই। এই সময়ে যদি ঈদ না হতো বা ঈদ আর পহেলা বৈশাখের মধ্যে যদি বেশ খানিকটা গ্যাপ হতো তাহলে বিক্রি হতো।

তিনি বলেন, সকাল থেকে মাত্র এক-দুইটা কাস্টমার পেয়েছি, ড্রেসও বিক্রি হয়েছে এক-দুইটা। তাছাড়া সারাদিনই বসে বসে কাটছে। এখন সামনে আর দুইদিন বাকি আছে। আমরা চাই ক্রেতা আসুক। আল্লাহ যদি চান তাহলে বিক্রি হতেও পারে।

পৌষ শোরুমের বিক্রেতা মো.বশির বলেন, বেঁচা কেনা কেমন সেটা তো দেখতেই পাাচ্ছেন। মার্কেটে কোনো ক্রেতা নেই, বসেই আছি। সকাল থেকে সারা দিন এমনই যাচ্ছে। টোটালি কোনো কাস্টমার নেই।

ক্রেতা না আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, শাহবাগে নিয়মিত আন্দোলন হয়। রাস্তা বন্ধ থাকে। যার কারণে মানুষ এখন শাহবাগ অ্যাভয়েড করে। গত বছরের তুলনায় আমাদের আজিজ মার্কেটে ১০ শতাংশ লোকও নেই। আগে তো এক সপ্তাহ বা ১০ দিন আগে থেকে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আজিজ সুপার মার্কেটে ঈদের থেকেও ভালো বিক্রি ছিল। কিন্তু সেই তুলনায় কিছুই নেই। সামনের দুদিনেও বিক্রি বাড়বে না। আজ ছুটির দিন, আজই বিক্রি নেই। তাহলে সামনের দুই দিন বিক্রি হবে কী করে?

তিনি বলেন, শুনলাম আগামীকাল নাকি ফিলিস্তিনের পক্ষে শাহবাগে বড় একটা প্রোগ্রাম আছে। তাহলে তো কাল এদিকে কোনো ক্রেতাই আসবে না। শাহবাগ কেন্দ্রিক এসব আন্দোলনের কারণেই মানুষ শাহবাগ এড়িয়ে চলছেন আর ক্রেতা আসছে না।

কেআর/এএমএ/এমএস