বাংলাদেশে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হলো বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্সের স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা ‘স্টারলিংক’। বুধবার (৯ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনের তৃতীয় দিনে এ ইন্টারনেট সেবার পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয়।
Advertisement
সম্মেলনের আয়োজকরা জানান, পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরুর পর বিনিয়োগ সম্মেলনের ভেন্যু ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে সবার জন্য স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা উন্মুক্ত রাখা হয়। সেখানে এ সেবা পেতে ব্যবহারকারীদের কোনো খরচ হয়নি। বৃহস্পতিবারও (১০ এপ্রিল) ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে স্টারলিংকের সেবা সবার জন্য বিনামূল্যে উন্মুক্ত রাখা হবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) বিনিয়োগ সম্মেলনের ভেন্যু ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা প্রদর্শন করছে। এর মাধ্যমে সম্মেলনে আসা অতিথি ও দর্শনার্থীরা সরাসরি স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট প্রযুক্তির অভিজ্ঞতা নিতে পারছেন।
বিএসসিএলের কর্মকর্তারা জানান, ৭ এপ্রিল থেকে তারা স্টারলিংকের ইন্টারনেট চালুর জন্য কাজ করছেন। আজ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এটি চালু হয়েছে। তবে দেশে পূর্ণাঙ্গভাবে চালুর বিষয়ে সরকার বা স্টারলিংকের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।
Advertisement
সর্বোচ্চ গতি ১২০ এমবিপিএসএদিকে পরীক্ষামূলকভাবে স্টারলিংক চালুর দিনে বিনিয়োগ সম্মেলনস্থলে স্টারলিংকের ইন্টারনেটে ডাউনলোড গতি ছিল ১০০ থেকে ১২০ এমবিপিএসের কাছাকাছি। সম্মেলনে আসা অতিথি, গণমাধ্যমকর্মীদের এ সেবা ব্যবহারে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যায়। ফলে গ্রাহকের চাপ বেড়ে যায়। এতে গতি কিছুটা ওঠা-নামা করে এবং কমে যায় বলেও জানান বিএসসিএলের কর্মকর্তারা।
বিনিয়োগ সম্মেলনে স্টারলিংকের একটি বুথ বসিয়েছে বিএসসিএল। বুথে দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠানটির সহকারী ব্যবস্থাপক তৌহিদুল ইসলাম জানান, বিনিয়োগ সম্মেলনে চারটি টার্মিনালের মাধ্যমে পাঁচটি ওয়াইফাই সংযুক্ত করে স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি রাউটারের বিপরীতে একই সময়ে ৭০ থেকে ১০০ জন ব্যবহারকারী ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন।
তিনি আরও জানান, বিটিআরসির নিয়ম অনুসারে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্টারলিংক ইন্টারনেট চালু করতে হলে তার গেটওয়ে স্টেশন স্থাপন করতে হবে। আপাতত মালয়েশিয়ার গেটওয়ে ব্যবহার করে বিনিয়োগ সম্মেলনে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) গত ২৯ মার্চ স্টারলিংককে বিনিয়োগ নিবন্ধন দেয়। যার ফলে প্রতিষ্ঠানটি ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি পেয়েছে। তবে বাণিজ্যিকভাবে ইন্টারনেট সেবা চালু করতে হলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) থেকে এনজিএসও লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে। এ লাইসেন্সের অনুমোদন প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
Advertisement
সম্প্রতি বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ এক ব্রিফিংয়ে বলেন, আমরা তাদের ৯০ দিনের মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দিয়েছি। এরই মধ্যে স্টারলিংকের প্রযুক্তি ইতিবাচকভাবে যাচাই করা হয়েছে।
ইন্টারনেট সেবা পেতে কেমন খরচ হবে?বাংলাদেশে স্টারলিংকের ইন্টারনেট পরিষেবার সম্ভাব্য দাম সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্টারলিংকের মূল্য বেশ ব্যয়বহুল। স্টারলিংক সংযোগ নিতে হলে ব্যবহারকারীদের প্রথমে একটি কিট কিনতে হয়। যার মধ্যে রয়েছে স্যাটেলাইট ডিশ, রাউটার এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশ।
স্টারলিংকের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, স্টারলিংক কিটে একটি রিসিভার বা অ্যান্টেনা, কিকস্ট্যান্ড, রাউটার, ক্যাবল এবং পাওয়ার সাপ্লাই থাকে। এ কিটের দাম ৩৪৯-৫৯৯ মার্কিন ডলারের মধ্যে। বাংলাদেশে এর সম্ভাব্য দাম ৬০-৭০ হাজার টাকা হতে পারে। এরপর প্রতিমাসে সাবস্ক্রিপশন ফি দিতে হবে, যা ১২-১৭ হাজার টাকা হতে পারে।
বিএসসিএলের মুখপাত্র ওমর হায়দার বলেন, আমরা স্টারলিংকের সঙ্গে কাজ শুরু করেছি। আমাদের কারিগরি সক্ষমতা রয়েছে। গ্রাউন্ড স্টেশন, মাঠপর্যায়ের ডিস্ট্রিবিউশন প্যানেল, অভিজ্ঞ লোকবল ও স্যাটেলাইট পরিচালনায় পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। ফলে সরকার চাইলে শিগগির বাণিজ্যিকভাবে স্টারলিংকের পরিষেবা দেওয়া সম্ভব।
এএএইচ/এমআইএইচএস/জেআইএম