ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে মিছিল-স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজধানী। হামলার প্রতিবাদ ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ‘নো ওয়ার্ক নো ক্লাস’ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এদিকে চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রথম দিনে সোমবার (৭ এপ্রিল) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘বাংলাদেশ স্টার্টআপ কানেক্ট ২০২৫’-এর উদ্বোধন করা হয়েছে। এ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন অনেক বিদেশিও।
Advertisement
এই সম্মেলন ঘিরে, গাজায় চলমান ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে কর্মসূচিতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে, যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে এবং রাজধানীবাসীকে নিরাপত্তা দিতে ঢাকার নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সোমবার (৭ এপ্রিল) সকাল থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে পুলিশসহ সেনাবাহিনীকে অবস্থান ও টহল দিতে দেখা গেছে।
পুলিশ বলছে, গাজায় হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিলে নিরাপত্তা দিতে কাজ করছে পুলিশ। এছাড়া রাজধানীতে চলাচলরত নগরবাসীর নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। যে কোনো বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এড়াতে প্রস্তুত রয়েছে পুলিশ।
Advertisement
ঢাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা জানতে চাইলে ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলি রিলেসন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, ঢাকায় পুলিশের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া কিছু কিছু জায়গায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পুলিশ নজরদারি করছে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির খবর পাওয়া যায়নি, সব জায়গায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
কর্মসূচি পালিত হচ্ছে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস এলাকায়। সোমবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে রাজধানীর গুলশানে মার্কিন দূতাবাসের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দুপুর ২টা ১৫ মিনিটের দিকে দূতাবাসের নিরাপত্তার কথা জানতে চাইলে ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. তারেক মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে রাজধানীর গুলশানে মার্কিন দূতাবাস এলাকায় মিছিল বের করেন একদল তরুণ। এখন অল্প কিছু মানুষ আছে ব্যানার হাতে। তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে। তবে এই এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কোনো বিশৃঙ্খলার সুযোগ নেই।
সাইন্সল্যাবে বিক্ষোভ মিছিলরাজধানীর সায়েন্সল্যাব মোড়ে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। বেলা ১১টার দিকে বিভিন্ন সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হয়। বিক্ষোভকারীরা প্ল্যাকার্ড, ব্যানার হাতে ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’, ‘স্টপ কিলিং ইন গাজা’সহ নানা স্লোগান দেন। শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচি চলাকালীন সড়কে যান চলাচলে সাময়িক কিছুটা সমস্যা হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল।
Advertisement
সোমবার বেলা ১১টার দিকে গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে মিছিল-স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজধানীর বাড্ডায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। এসময় নানান প্ল্যাকার্ডে ইসরায়েলি বর্বরতার বিপক্ষে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, অনতিবিলম্বে এই হত্যা বন্ধ করতে হবে। এসময় ইসরাইলকে বিশ্বের মানচিত্র থেকে গণহত্যার দায়ে মুছে ফেলার আহ্বান জানান তারা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, আমেরিকার মতো যেসব দেশ এমন গণহত্যা দেখে নিশ্চুপ, তাদেরও বয়কট করতে হবে। পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলো কাপুরুষতার পরিচয় দিচ্ছে, যার জন্যই সুযোগ পাচ্ছে ইসরায়েল। অনতিবিলম্বে মুসলিম দেশগুলোকে এককাতারে এসে এই গণহত্যার প্রতিবাদ করার আহ্বান জানান শিক্ষার্থীরা। এসময় বাংলাদেশ সরকারকে ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
আরও পড়ুন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের সামনে তরুণদের বিক্ষোভ ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে সায়েন্সল্যাবে বিক্ষোভ মিছিল গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে মোহাম্মদপুরে বিক্ষোভ মিছিলবিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ ও ইউনিসেফ বারবার শুধু বিবৃতি দিচ্ছে। বাস্তবে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না, যা প্রকারান্তরে হত্যাযজ্ঞকে সমর্থনের শামিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আদনান হাসান বলেন, গাজায় প্রতিদিন শিশুরা মরছে, অথচ ইউনিসেফ শুধু সংখ্যা গুনছে। জাতিসংঘও মুখে উদ্বেগ জানিয়ে চুপ করে বসে আছে। এ নীরবতা আসলে হত্যার পক্ষে অবস্থান নেওয়ার মতোই।
বুয়েটে মানববন্ধনইসরায়েলি বাহিনীর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে জেরুজালেম ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনিদের পূর্ণ অধিকার রয়েছে এবং তাদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বৈধ ও ন্যায্য বলেও জানান তারা। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে তারা এমন মন্তব্য করেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বুয়েটের বেশ কয়েকজন শিক্ষকও মানববন্ধনে অংশ নেন।
এসময় তারা ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’, ‘ইস্ট টু ওয়েস্ট, নো ফ্লো টু জায়নিস্ট’, ‘মেঘনা টু জেরুজালেম, ইনসাফ ইনসাফ’, ‘শেম শেম জায়নিস্ট, মেক ফ্রি প্যালেস্টাইন’, ‘ফিলিস্তিন মুক্তি পাক, ইসরায়েল নিপাত যাক’; ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, আল আকসা জিন্দাবাদ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও-মার্কিন দূতাবাস অভিমুখে মার্চের ঘোষণাগাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিন্দা-বিবৃতি, যুক্তরাষ্ট্রের হাইকমিশনারকে তলব করে জবাবদিহি চাওয়ার দাবিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম আজাদ ফিলিস্তিন। একইসঙ্গে নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের কুশপুত্তলিকা দাহ করাসহ মার্কিন দূতাবাস অভিমুখে মার্চ করবে প্ল্যাটফর্মটি।
সোমবার বেলা সাড়ে ১২টায় এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্ল্যাটফর্মটির সংগঠক ঢাবির বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচি অনুযায়ী মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে এ পদযাত্রা শুরু হবে।
স্লোগানে মুখর বায়তুল মোকাররম এলাকাফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের নির্মম হামলার প্রতিবাদ ও গাজাবাসীর ডাকা হরতালের সমর্থনে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সমবেত হয়েছেন মুসল্লিরা। এসময় তারা ‘ফিলিস্তিন জিন্দাবাদ’, ‘ফিলিস্তিন জিন্দাবাদ’ স্লোগানে মুখর করে তোলেন মসজিদের উত্তর পাদদেশ। সোমবার বাদ জোহর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ আয়োজিত ‘বিশ্বব্যাপী মজলুম গাজাবাসীর ডাকা হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশের আগে এমন স্লোগান দেন তারা।
মিছিল পূর্ব সমাবেশে শীর্ষ ওলামা মাশায়েখ এবং জাতীয় নেতাদের বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে বায়তুল মোকাররমে শুরু হয় জোহরের নামাজ। দুপুর ১টা ২৭ মিনিটে শেষ হয় নামাজের কার্যক্রম। এরপরই মুসল্লিরা স্লোগান দিয়ে ওঠেন ‘নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার’। পরেই মসজিদ থেকে বেরিয়ে সবাই সমবেত হন মসজিদের উত্তর পাদদেশে। এখানে সবাই একসঙ্গে ফিলিস্তিনি পতাকা ওড়াতে শুরু করেন। আর স্লোগানে গলা মেলান।
এসময় তারা স্লোগান দেন ‘ইসরায়েলের কালো হাত, ভেঙে দাও ভেঙে দাও’, ‘ফিলিস্তিন জিন্দাবাদ, ফিলিস্তিন জিন্দাবাদ’। নামাজে অংশ নিতে শতশত মুসল্লি বায়তুল মোকাররমে আসেন। আগত মুসল্লিদের অনেকের হাতেই ছিল ফিলিস্তিনের পতাকা।
টিটি/বিএ/এএসএম