যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ায় দেশের রপ্তানিমুখী খাতগুলোতে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় শুল্কনীতি পুনর্বিবেচনা ও কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এ প্রেক্ষিতে রোববার (৬ এপ্রিল) ঢাকার একটি হোটেলে বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক এবং বাংলাদেশের রপ্তানি: প্রভাব মূল্যায়ন এবং কৌশলগত অগ্রাধিকারগুলো নিরুপণ (ইউএস ট্যারিফ অ্যান্ড বাংলাদেশস এক্সপোর্টস: এসেসিং ইমপ্যাক্টস অ্যান্ড চার্টিং দি স্ট্র্যাটেজিক প্রায়োরিটিজ)’ শীর্ষক সংলাপের আয়োজন করে বিজিএমইএ।
Advertisement
বিজিএমইএর মহাসচিব মো. ফয়জুর রহমানের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সভায় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার ফলে বিভিন্ন খাতে কী কী প্রভাব পড়বে, সেগুলো মূল্যায়ন করা হয় এবং করণীয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়।
বিজিএমইএর প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সংলাপে অংশগ্রহণ করেন এফবিসিসিআইর প্রশাসক হাফিজুর রহমান, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান সিনহা, সাবেক সভাপতি ড. রুবানা হক, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বিকেএমইএর সভাপতি মো. হাতেম, সাবেক সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী, পিআরআই’র ড. জাহিদী সাত্তার, র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক, সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান, চৈতি কম্পোজিট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম, ড. মোস্তফা আবিদ খান প্রমুখ।
সভায় রপ্তানিকারকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ আরোপের ফলে পোশাক শিল্পসহ রপ্তানিখাতগুলো চরম সংকটের মুখে পড়বে। পাশাপাশি শুল্ক বাড়ানোর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাকসহ বাংলাদেশের পণ্যগুলোর দাম বাড়বে। ফলে পণ্যের চাহিদা কমবে এবং বাজারে প্রতিযোগিতা তীব্রতর হবে।
Advertisement
সংলাপে রপ্তানিকারকরা অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখার জন্য এর যৌক্তিক সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্ভাব্য করণীয়গুলো নিয়েও মতবিনিময় করেন। তারা বলেন, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার উপদেষ্টা, শীর্ষ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে ইতোমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং সংলাপে সবাই আশা করেন যে, সরকার দ্রুততার সঙ্গে একটি একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের উপায় বের করবে।
সংলাপে বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকরা মত প্রকাশ করে বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো ইতোমধ্যেই সমন্বয় প্রক্রিয়ায় অনেকদূর এগিয়েছে। তারা আশা করেন, বাংলাদেশ সরকারও দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের রপ্তানি নির্বিঘ্ন রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।
তারা বলেন, আমেরিকার কটন, ভোজ্য তেল, গমসহ বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্যের যথেষ্ট চাহিদা আছে বাংলাদেশের বাজারে। শুল্ক যৌক্তিককরণের মাধ্যমে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হতে পারে। তারা বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার জন্য সরকারকে শুল্কনীতি পুনর্বিবেচনা এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরও জোরদারকরণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন শুল্ক প্রত্যাহারে রাজি করানোর আহ্বান জানান।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমাদের রপ্তানি আয় মোট আয়ের এক-পঞ্চমাংশ হলেও একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের বাজার বাংলাদেশি পণ্যের বহুমুখীকরণ ও রপ্তানি প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Advertisement
সভায় ব্যবসায়ীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে সরকার বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখার জন্য লজিস্টিক খাতে ব্যয় হ্রাস, কাস্টমস প্রক্রিয়াগুলো সহজীকরণ ও শুল্ক নীতিগুলোর যৌক্তিকীকরণ করে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করার উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
আইএইচও/এমএমএআর/এএসএম