লক্ষ্মীপুরে গুলিবিদ্ধ শিশু আবিদা সুলতানা ৭২ ঘণ্টা পর চোখ খুলেছে। তবে কথা বলছে না বলে জানিয়েছেন তার মা আমেনা বেগম। সে এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
Advertisement
শুক্রবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে আমেনা বেগম মোবাইলফোনে প্রতিবেদককে এসব কথা বলেন।
চিকিৎসকের বরাত দিয়ে তিনি জানান, আবিদার অস্ত্রোপচার হয়েছে। তার ফুসফুস, কিডনি, কলিজাতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। শুধু রক্তকনিকা ভালো আছে। চোখ খুললেও কথা বলতে পারছে না আবিদা।
এদিকে আবিদাকে গুলির ঘটনায় তিনজনের নামে চন্দ্রগঞ্জ থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেছেন তার বাবা ইব্রাহিম খলিল। মামলায় অভিযুক্ত ফাতেমা বেগম আঙ্কুরীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় মামলার পর তাকে চন্দ্রগঞ্জ থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
Advertisement
গ্রেফতার আঙ্কুরী মামলার প্রধান অভিযুক্ত অহিদের স্ত্রী। অপর আসামি অহিদের ছেলে মো. ফাহিম। ঘটনার পর থেকে অহিদ ও ফাহিম পলাতক রয়েছেন।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, সোমবার (১ এপ্রিল) সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের কাচারি বাড়ি এলাকায় বাড়িতে শিশু আবিদা গুলিবিদ্ধ হয়। ঘটনার সময় আবিদা প্রধান অভিযুক্ত অহিদের মেয়ে জেরিনের সঙ্গে খেলছিল। আবিদার মা আমেনা তাকে ঘরে আসার জন্য ডাকছিলেন। তখন অভিযুক্ত ফাতেমা ও ফাহিমের প্ররোচনায় আবিদাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পিস্তল নিয়ে অহিদ গুলি করে। গুলিটি আবিদার পিঠের ডান পাশে বিদ্ধ হয়ে পেটের ডান পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। তাৎক্ষণিক আবিদা অচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সদর হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, অহিদ একজন অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। মামলার বাদী ইব্রাহিম প্রবাসে থাকাকালীন অহিদ বিভিন্নভাবে তার কাছ থেকে টাকা নিতো। একবছর আগে বাদী প্রবাস থেকে চলে আসে। এতে অহিদকে টাকা-পয়সা না দেওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে মনমালিন্য সৃষ্টি হয়।
ঘটনার পর হাসপাতালে আনার পথে ধারণকৃত একটি ভিডিওতে শিশু আবিদাকে বলতে শোনা যায়, অহিদ তাকে গুলি করেছেন। তবে কী কারণে, কীভাবে গুলি করেছেন সে কথা বলতে পারেনি।
Advertisement
আবিদার মা আমেনা বেগম বলেন, ঘটনার দিন আছরের নামাজের পর অহিদের ছেলে ফাহিমের সঙ্গে একটি মোটরসাইকেলে করে তিনজন লোক আসেন। মাগরিবের সময় তিনটি মোটরসাইকেল নিয়ে আরও কয়েকজন লোক আসেন। তখন ওজু করতে গেলে দেখি তারা অহিদের বাড়িতে ঢুকছেন। লোকগুলোকে দেখে আমি ভয় পেয়েছি। তাদের দেখলেই ভয় লাগে। আবিদা তখন অহিদের মেয়ে জেরিনের সঙ্গে খেলছিল। লোকজনের কারণে আমি তাকে আনতে যেতে পারিনি। পাশে একটি ঘরে ঢুকে জানালা দিয়ে ডাকছিলাম। তখন ঘরের দরজার পেছনে অহিদ যেন কী করছিল। হঠাৎ সেখান থেকে বের হয়ে ঘরের সামনের একটি আমগাছের নিচে যায়। সেখানে আবিদা ও জেরিন ঘুরে ঘুরে খেলছিল। এরমধ্যেই অহিদ আমার মেয়ের পিঠে গুলি করে। আমি দৌড়ে গিয়ে মেয়েকে কোলে নিয়ে তাকে বলেছি তুই আমার মেয়েকে শেষ করে দিয়েছিস। এসবের পর সে মানিব্যাগ বের করে টাকা দিচ্ছিল চিকিৎসার জন্য। আমি সব ফেলে দিয়ে মেয়েকে বাঁচানোর জন্য হাসপাতাল চলে যাই।
চন্দ্রগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বেলায়েত হোসেন বলেন, শিশুকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা মামলায় তিনজনের নামে মামলা হয়েছে। এরমধ্যে একজন গ্রেফতার হয়েছেন। তাকে লক্ষ্মীপুর আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
কাজল কায়েস/এমএন/এমএস