‘গতবছর প্রকারভেদে একটা বাঙ্গি বিক্রি করছি ৩০ থেকে ৬০ টাকা দামে। কিন্তু এবছর একটা বাঙ্গি ১৫-২০ টাকা করে বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রচুর খরা ও বৃষ্টি না হওয়ায় গত বছরের চেয়ে এ বছর ফলনও কম হয়েছে। তারপর আবার দামও কম। যে দামে বিক্রি করতে হচ্ছে এতে খরচতো উঠবেই না বরং আমরাদের লোকসানে পড়তে হবে।’
Advertisement
কথাগুলো বলছিলেন গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের বুরুয়া গ্রামের বাঙ্গিচাষি আলম বিশ্বাস। শুধু আলম একা নন, তার মতো লোকসানের শঙ্কায় আছেন কোটালিপাড়া উপজেলার শত শত বাঙ্গিচাষি।
কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এ বছর উপজেলায় ৪৩৪ হেক্টর জমিতে বাঙ্গির চাষ করা হয়েছে।
তবে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় ফলন ভালো হয়নি। তারপর আবার ক্রেতা না থাকার কারণে উৎপাদিত বাঙ্গির বাজার একেবারেই পড়ে গেছে। এ বছর সার, বীজ ও কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঙ্গি চাষে খরচ বেড়েছে। যে কারণে লাভের বদলে লোকসানের শঙ্কায় আছেন এ অঞ্চলের শত শত কৃষক।
Advertisement
উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের বুরুয়া, মাছপাড়া, নলুয়া, তেতুলবাড়ি, হিজলবাড়ী গ্রামে বেশি বাঙ্গির চাষ হয়। এসব গ্রামের কৃষকদের বাৎসরিক আয়ের অন্যতম উৎস হলো তরমুজ ও বাঙ্গিচাষ। আর এই বাঙ্গি বিক্রির জন্য স্থানীয় কালীগঞ্জ বাজারে গড়ে উঠেছে অর্ধশত আড়ৎ। এসব আড়ৎ থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাঙ্গি যায়। তবে এবছর এসব এলাকা থেকে বেপারীরা না আসার কারণে আড়ৎদাররা অলস সময় কাটাচ্ছেন।
হিজলবাড়ী গ্রামের কৃষক মধু বিশ্বাস বলেন, গতবছর বাঙ্গি চাষ করে বেশ লাভ করেছিলাম। এবারও ভেবেছিলাম ভালো লাভ করবো। কিন্তু এবার প্রচুর খরা ও বৃষ্টি না হওয়ায় ফলনও খারাপ হয়েছে। আর দামও পাইনি। এবার লোকসান হবে।
তেতুলবাড়ি গ্রামের লোকনাথ মণ্ডল বলেন, দুই বিঘা জমিতে বাঙ্গির চাষ করেছি। যে দামে বিক্রি করছি তাতে লাভতো দূরের কথা চালান ঘরে নেওয়াই কষ্ট।
কালীগঞ্জ এলাকার আড়ৎদার বিষ্ণু টিকাদার বলেন, প্রতি বছর এই সময়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আমাদের এখানে বেপারীরা বাঙ্গি কিনতে আসতো। কিন্তু এবছর বেপারীরা আসছে না। তাই আমাদের আড়ৎদারদের অলস সময় কাটাতে হচ্ছে।
Advertisement
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার দেবাশীষ দাস বলেন, কোটালিপাড়া উপজেলায় এবছর ৪৩৪ হেক্টর জমিতে বাঙ্গির চাষ করা হয়েছে। বাঙ্গি চাষে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সার, বীজ ও পরামর্শ দিয়ে কৃষকদের সহযোগিতা করা হয়েছে। এবছর ফলন একটু দেরিতে আসায় কৃষকরা তাদের কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছে না।
এফএ/এমএস