স্রেফ অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছেন তামিম ইকবাল। ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকের পর যে অবস্থায় চলে গিয়েছিলেন তিনি, সেখান থেকে আবার জীবন ফিরে পাওয়ার ঘটনা পৃথিবীতে রয়েছে কি না, সন্দেহ। শুধুমাত্র আল্লাহর রহমত আর কিছু মানুষের সময়োপযোগী কিছু কাজ ও সিদ্ধান্তের কারণে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন তিনি।
Advertisement
গতকালই রাজধানী এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন তামিম ইকবাল। ফিরেই মধ্যরাতে নিজের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেজে তাৎক্ষণিক তার জীবন ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে যারা অবদান রেখেছেন তাদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেছেন তিনি।
সেখানে বিকেএসপিতে হার্ট অ্যাটাক করার সময় থেকে শুরু করে কেপিজে হাসপাতালের চিকিৎসকদের ঐকান্তিক চেষ্টার সবগুলো বিষয় তুলে ধরেছেন তিনি। বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন মোহামেডান ক্লাবের ট্রেইনার ইয়াকুব চৌধুরী ডালিম এবং কেপিজে হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মনিরুজ্জামান মারুফ ও তার দক্ষ চিকিৎসক দলের প্রতি।
তামিম ইকবাল তার পোস্টের শুরুতেই লিখেন, ‘আপনাদের সবার দোয়ায় ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর রহমতে এখন আমি বাসায়।’
Advertisement
চারপাশকে নতুন করে আবিষ্কার করার উপলব্দির কথা তুলে ধরে লিখেন, ‘উথালপাথাল এই চারটি দিনে নতুন জীবন যেমন পেয়েছি, তেমনি আমার চারপাশকে আবিষ্কার করেছি নতুন করে। সেই উপলব্ধির সবটুকুতে মিশে আছে কেবল ভালোলাগা ও কৃতজ্ঞতা। আপনাদের সবার ভালোবাসার ছোঁয়া ক্যারিয়ারজুড়ে নানা সময়ই পেয়েছি। তবে এবার তা অনভুব করতে পেরেছি আরও তীব্রভাবে। আমি সত্যিই আপ্লুত।’
বিকেএসপিতে শুরু থেকে যাদের পেয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে লিখেন, ‘বিকেএসপিতে আমার অসুস্থতার শুরু থেকেই অনেককে পাশে পেয়েছি তাৎক্ষণিকভাবে। ম্যাচ রেফারি দেবু দা (দেবব্রত পাল), বিকেএসপির চিকিৎসকরা এবং আরও যারা তখন ছিলেন সেখানে, অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার যে ভাই আমাকে দ্রুতগতিতে নিয়ে গেছেন হাসপাতালে, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।’
মোহামেডানের ট্রেইনার ইয়াকুব চৌধুরী ডালিম যেবাবে সিপিআর দিয়ে তামিমকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন, সেটা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন তিনি। তামিম লিখেন, ‘আমাদের ট্রেইনার ইয়াকুব চৌধুরী ডালিম ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাব কীভাবে, আমার আসলে জানা নেই। আমি পরে জেনেছি, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন যে, ডালিম ভাই ওই সময় সঠিকভাবে সিপিআর না দিলে হয়তো আমাকে বাঁচানো যেত না। উপযুক্ত মানুষকে উপযুক্ত সময়ে আমার পাশে রেখে আল্লাহ আমাকে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরিয়েছেন। মোহামেডানের সাপোর্ট স্টাফ ওয়াসিমের কথা না বললেও নয়। শুরু থেকে এখনও সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয়েই আছে আমার।’
কেপিজে হাসপাতাল ও ডাক্তারদের ভূমিকার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন তিনি। তামিম লিখেন, ‘কেপিজে হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মনিরুজ্জামান মারুফ ও তার দক্ষ চিকিৎসক দল তাদের পেশাদারিত্ব আর আন্তরিকতার মিশেলে যেভাবে দ্রুততায় চিকিৎসা করেছেন, আমাদের দেশের চিকিৎসকদের মান ও কার্যকারিতাই ফুটে উঠেছে তাতে। আমি পরে শুনেছি যে, দেশের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ডা. মারুফ ও তার দল মিরাকল ঘটিয়েছেন।’ ‘গোটা চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় কেপিজে হাসপাতালের চিকিৎসক, সেবিকা থেকে শুরু করে যারা যে কোনোভাবে যতটুকু সম্পৃক্ত ছিলেন, সবাইকে হৃদয়ে লালন করব আজীবন। এই হাসপাতালে যতটুকু সময় ছিলাম, তাদের হৃদ্যতার পরশ অনুভব করে যাব সবসময়।’
Advertisement
বাংলাদেশের চিকিৎসার মান বেড়েছে এবং এ ধরনের হাসপাতাল আরও থাকলে সাধারণ মানুষের প্রাণ বাঁচবে বলেও অভিমত দেন তামিম, ‘ঢাকা শহরের বাইরে ওই এলাকায় এতটা উঁচুমানের হাসপাতাল আছে, এতটা কুশলী চিকিৎসক দল ও স্টাফরা আছেন, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার এগিয়ে চলার একটি প্রমাণ এটি। দেশজুড়ে নানা জায়গায় এর কাছাকাছি মানের হাসপাতাল যদি আরও কিছু থাকে, আমার মতো আরও অনেক মানুষের প্রাণ রক্ষা পেতে পারে।’
‘ধন্যবাদের তালিকা আসলে শেষ হওয়ার নয়। আরও অনেকেই নানাভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন, অনেকের কথা জানি, অনেকের কথা হয়তো জানি না। এতটুকু জানি, ধন্যবাদ পাওয়ার আশায় তারা কিছু করেননি। আমি তাদের ভালোবাসার ঋণে আবদ্ধ সারা জীবনের জন্য। পুরোপুরি সেরে ওঠার পথ এখনও দীর্ঘ। আমাকে ও আমার পরিবারকে প্রার্থনায় রাখবেন। সবার জীবন সুন্দর ও শান্তিময় হোক। ভালোবাসা সবার জন্য।’
আইএইচএস/