মার্চ মাসেই মুক্তিযুদ্ধে নেমেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষ। এসেছিল বিজয়। সেই যুদ্ধ ও জয়ের গল্পে অনেক সিনেমাই তৈরি হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশের যুদ্ধ ও স্বাধীনতা অর্জন নিয়েও তৈরি হয়েছে সিনেমা। তার মধ্যে কিছু চলচ্চিত্র নজর কেড়েছে বিশ্ববাসীর। বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত সেসব সিনেমা নিয়েই এই ফিচার-
Advertisement
বিদেশি সিনেমার মধ্যে ‘দ্য হরনেটস নেস্ট’ সিনেমাটি ২০১৩ সালে মুক্তি পায়। বেশ চমৎকার গল্পের সিনেমা এটি। আফগান যুদ্ধের প্রেক্ষাপাটে নির্মিত ছবি এটি। এতে সরাসরি যুদ্ধের আবহাওয়াটা অনেক বেশি উপস্থিত। দুজন সাংবাদিককে নিয়ে গল্পটা। যুদ্ধে তাদের উপস্থিতিকে কেন্দ্র করেই এগিয়েছে গল্প। বিশ্বজুড়ে সিনেমাটি বেশ ভালো সাড়া পেয়েছে। ছবিটি যৌথভাকে নির্মাণ করেছেন ডেভিড সালজবার্গ এবং ক্রিশ্চিয়ান তুরেউড।
রোম, ওপেন সিটি১৯৪৫ সালের সিনেমা এটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মানবিক বিপর্যয়ের করুণ চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রবার্ট রোসেলিনির মাস্টারপিস ‘রোম ওপেন সিটি’ ছবিতে। হিটলারের নাৎসি বাহিনীর রোম দখল, ইতালিয়ানদের সাহসী প্রতিরোধ নিখুঁতভাবে দেখিয়েছেন পরিচালক। ছবিটিতে যুদ্ধকালীন নির্মমতাও সফলতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন রোসেলিনি।
দ্য ক্রেনস আর ফ্লাইংরাশিয়ান নির্মাতা মিখাইল কালাতোজোভের একটা মাস্টারপিস এই ছবি। জীবন এবং জীবনের যে উদযাপন তা এখানে আছে। বেঁচে থাকার আকুতি, বিয়োগের ব্যথা- সব মিলিয়েই অসাধারণ চলচ্চিত্র। একবার দেখলে বারবার দেখার ইচ্ছে হয়। ছবিটি ১৯৫৭ সালে মুক্তি পায়। বিশ্ব চলচ্চিত্রে অনন্য এক সংযোজন ‘দ্য ক্রেনস আর ফ্লাইং’।
Advertisement
ফ্রান্স সরকারের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য আলজেরিয়ার সাধারণ মানুষদের লড়াইয়ে নামার কাহিনী নিয়ে নির্মিত হয়েছে এই ছবিটি। ১৯৬৬ সালে এটি মুক্তি পায়। গেরিলা লড়াইয়ের এক অনবদ্য উপস্থাপনা বলা চলে ছবিটিকে। ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণের আগে পেন্টাগনে এই ছবিটি দেখেছিলেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও।
প্লাটুন১৯৮৬ মুক্তি পাওয়া ‘প্লাটুন’ ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে উপভোগ্য একটি ছবি। যুদ্ধের ভয়াবহতার পাশাপাশি পরিচালক অলিভার স্টোন নৈতিকতা ও মানবিকতাকেও দারুণভাবে তুলে ধরেছেন ছবিটিতে।
‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’ইতালিয়ান ছবি ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’। ১৯৯৭ সালে এটি মুক্তি পায়। রবার্তো বেনিনির ছবি হিসেবেও এটি সমাদৃত। ভীষণ মানবিক গল্পের ছবি, প্রেম ও যুদ্ধের গল্প। যুদ্ধকে একটু অন্যভাবে উপস্থাপনের জন্য ছবিটার আবেদন কখনো ফুরাবে না। ছবিটা ট্রাজেডিতে ভরপুর। কষ্ট আর দুঃখ পেয়েও যে মানুষ বিনোদিত হয়, এই ছবি তার প্রমাণ।
শিন্ডলারস লিস্টস্টিভেন স্পিলবার্গ পরিচালিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সত্য কাহিনী অবলম্বনে শিন্ডলারস লিস্ট ছবিটি নির্মিত হয়েছে। অস্কার শিন্ডলার জার্মানির এক ব্যবসায়ী, যিনি হিটলার বাহিনীর গণহত্যা থেকে কমপক্ষে এক হাজার পোলিশ ইহুদিকে রক্ষা করেছেন তার ফ্যাক্টরিতে কাজ দিয়ে। যুদ্ধ বা মুক্তিকামী মানুষের গল্পের সিনেমার আলোচনা হলে সর্বকালের অন্যতম সেরা ছবি ধরা হয় ১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া এ সিনেমাটিকে।
Advertisement
১৩ শতকের স্কটিশ যোদ্ধা উইলিয়াম ওয়ালেস ইংল্যান্ডের রাজার কাছ থেকে স্কটদের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। ছবিটিতে সেই কাহিনী উঠে এসেছে। সেরা ছবি, সেরা পরিচালকসহ (মেল গিবসন) অস্কারে ছবিটি পাঁচটি পুরস্কার পায় ১৯৯৫ সালের সিনেমাটি।
দ্য কিলিং ফিল্ডসনিউইয়র্ক টাইমসের আমেরিকান সাংবাদিক সিডনি স্ক্যানবার্গ ও কম্বোডিয়ার স্থানীয় সাংবাদিক ডিথ প্রানের অভিজ্ঞতার আলোকে ভিয়েতনাম যুদ্ধের নৃশংসতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে ১৯৮৪ সালের এই ছবিতে। কম্বোডিয়ায় ভিয়েতনামের খামাররুজ বাহিনীর আক্রমণে প্রায় ১০ লাখ কম্বোডিয়ান নিহত হন। দ্য কিলিং ফিল্ডস ছবিতে সেই বর্বরোচিত দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক রোল্যান্ড জোয়েফ।
টার্টলস ক্যান ফ্লাইইরাকি ছবি ‘টার্টলস ক্যান ফ্লাই’ ২০০৪ সালে মুক্তি পায়। এখানেও সম্মুখযুদ্ধ নয়, যুদ্ধের ইমপ্যাক্ট দেখানো হয়েছে। অপূর্ব মেকিং। যুদ্ধময় ইরাকের পটভূমিকে ঘিরে। ইরাকের মানুষ তখন যুদ্ধের খবরের জন্য পাগল। এমন ছোট্ট এক গ্রামে খবরের একমাত্র ভরসা ১৪ বছরের এক কিশোর। তার নাম ‘স্যাটেলাইট’। গ্রামের শিশু-কিশোরদের নিয়ে খোলা মাঠে পুঁতে রাখা মাইন অপসারণের কাজও করে সে। এই মাইন বিক্রি করে পয়সাও উপার্জন করে কিশোরটি। ছবিটি যে কারো মনে দাগ কাটবে। সবগুলো চরিত্র গল্পের সঙ্গে অদ্ভুতভাবে জড়িয়ে আছে। যুদ্ধ কতটা অমানবিক তা দৃশ্যে দৃশ্যে অনুভব করাবে।
এছাড়াও যুদ্ধকে কেন্দ্র করে নির্মিত বিখ্যাত ছবিগুলো হলো- দাস বুট (১৯৮১), দ্য ব্রিজ অন দ্য রিভার কাওয়াই (১৯৫৭), অ্যাপোকেলিপস নাউ (১৯৭৯), সেভিং প্রাইভেট রায়ান (১৯৯৮), দ্য পিয়ানিস্ট (২০০২), গ্রেভ অব দ্য ফায়ার ফ্লাইস (১৯৯৮), ফিউরি (২০১৪), ডাউনফল (২০০৪), দ্য ইমিটেশন গেম (২০১৪), অল কোয়াইট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট (১৯৩০), ডানকার্ক (২০১৭), ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ডস (২০০৯), দ্য গ্রেট এসকেপ (১৯৬৩), ডার্কেস্ট আওয়ার (২০১৭), দ্য থিন রেড লাইন (১৯৯৮) ইত্যাদি।
এলআইএ/জেআইএম