পবিত্র রমজানে ফলের মূল্য জনগণের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতে তাজা ফল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ও আগাম কর কমিয়েছে সরকার। এ শুল্ক ও কর কমানোর পর আমদানি করা ফলের দাম কমার বদলে আরও বেড়েছে। সব থেকে বেশি বেড়েছে আপেল ও কালো আঙুরের দাম।
Advertisement
বুধবার (২৬ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আপেলের দাম কেজিতে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কালো আঙুরের দামও কেজিতে ১০০ টাকার ওপরে বেড়েছে। মাল্টা ও কমলার দাম কেজিতে বেড়েছে ২০-৩০ টাকার মতো।
দাম বেড়ে আপেল, আঙুর, কমলা, মাল্টা, বেদানার দাম এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে কেনা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কারণ কোনো আমদানি করা ফলের কেজি এখন ৩০০ টাকার নিচে কেনা যাচ্ছে না।
অন্তর্বর্তী সরকার গত ৯ জানুয়ারি শতাধিক পণ্য ও সেবার বিভিন্ন পর্যায়ে শুল্ক ও ভ্যাট বাড়ায়। সে তালিকায় এসব আমদানি করা ফলও ছিল। শুল্ক ও ভ্যাট বাড়ানোর কারণে রোজার আগেই বিভিন্ন ফলের দাম বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ মার্চ তাজা ফল আমদানিতে আরোপিত সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করে সরকার। সেইসঙ্গে ৫ শতাংশ আগাম কর সম্পূর্ণ অব্যাহতি দেওয়া হয়। এছাড়া ফল আমদানিতে অগ্রিম আয়কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। কিন্তু এর পরও বাজারে আমদানি করা ফলের দাম বাড়েনি।
Advertisement
বাজারভেদে ব্যবসায়ী এখন সবুজ আপেলের কেজি বিক্রি করছেন ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। কিছুদিন আগে এ আপেলের ছিল ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। গালা আপেলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৩০ টাকা। কিছুদিন আগে এ আপেল ৩৫০-৩৬০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। বড় আকারের আপেল কিছুটা কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। এ আপেলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা।
আপেলের পাশাপাশি আঙুরের দামও বেশ বেড়েছে। কিছুদিন আগে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া কালো আঙুর এখন ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর সবুজ আঙুরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। কিছুদিন আগে এ আঙুরের দাম ছিল ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা।
ব্যবসায়ীরা মালটার কেজি বিক্রি করছেন ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। কিছুদিন আগে এ ফলের কেজি ছিল ২৭০ থেকে ৩০০ টাকা। একইভাবে বেড়েছে কমলার দাম। কিছুদিন আগে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া কমলা এখন দাম বেড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বেদানার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। এই ফলটির দাম নতুন করে বাড়েনি।
সেগুনবাগিচার ব্যবসায়ী নান্নু মিয়া বলেন, এখন সব ধরনের ফলের দাম বাড়তি। আজ আড়ত থেকে এক কাটুন আপেল ৭০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে। এক কাটুনে ১৮ কেজির মতো আপেল থাকে। গত কয়েকদিন ধরে আপেলের দাম বেড়েই চলেছে। ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে আপেলের দাম কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে গেছে।
Advertisement
তিনি বলেন, শুধু আপেল না, সব ধরনের ফলের দাম বেড়েছে। আড়তের পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে সামনে ফলের দাম আরও বাড়তে পারে। কারণে আড়তে ফলের মজুদ কম রয়েছে এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
সেগুন বাগিচার আর এক ব্যবসায়ী আলী হোসেন বলেন, রোজার শুরু থেকেই ফলের দাম বাড়তি। দিন যত যাচ্ছে দাম তত বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে সব ধনের ফলের দাম বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণে মানুষ কেনা কমিয়ে দিয়েছে। অল্প অল্প করে ফল আনছি, কিন্তু বিক্রি খুব একটা হচ্ছে না। অনেকেই দাম শুনে চলে যাচ্ছেন।
রামপুরার ফল ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী বলেন, কিছুদিন আগেও সবুজ আপেলের কেজি ৩৫০ টাকা বিক্রি করেছি। আড়তে এখন এত দাম বেড়েছে আমাদের পক্ষে ৪২০ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যান্য আপেলের দামও বেড়েছে। সেইসঙ্গে কমলা, আঙুর, মালটার দামও বেড়েছে। কিছুদিন আগে যে কমলা ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি, এখন তা সাড়ে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।
বিক্রি পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে এই ব্যবসায়ী বলেন, আপেল, আঙুর, মালটা, কমলার বিক্রি এখন অনেক কম। অল্প কিছু ফল আনলে বিক্রি করতে কয়েকদিন লেগে যায়। এসব ফলের বিক্রি কম হওয়ায় এখন দোকানে তরমুজ ও কলাও বিক্রি করছি। আগে আপেল, আঙুর, মালটা, কমলা, বেদানা ছাড়া কিছু বিক্রি করতাম না।
রামপুরা বাজারে ফলের দাম শুনে হতাশ হয়ে চলে যাচ্ছিলেন আমেনা বেগম। তিনি বলেন, বাজারে কমলা কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু অনেক দাম চাচ্ছে। সাড়ে ৩০০ টাক কেজি। অন্যান্য ফলের দামও বেশি। এত দাম দিয়ে ফল কিনে খাওয়া সম্ভব না। তাই না কিনে চলে যাচ্ছি।
এমএএস/এমএএইচ/এমএস