সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। দেশের খ্যাতনামা লেখক, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষক। দীর্ঘ সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। ইমেরিটাস অধ্যাপক। শিক্ষায় অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন।
Advertisement
মার্কসবাদী চিন্তা-চেতনায় উদ্বুদ্ধ এ শিক্ষককে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট দুবার উপাচার্য হওয়ার জন্য মনোনীত করলেও তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। ২০০৩ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে ইউজিসি অধ্যাপক হিসেবে মনোনীত হন। দীর্ঘদিন ধরে সম্পাদনা করেছেন ‘পরিক্রমা’, ‘সাহিত্যপত্র’, ‘সচিত্র সময়’, ‘সাপ্তাহিক সময়’, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা’, ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টাডিস’ প্রভৃতি। তার সম্পাদনায় নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে সাহিত্য-সংস্কৃতির পত্রিকা ‘নতুন দিগন্ত’।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাষ্ট্রক্ষমতা চলে গিয়েছিল বুর্জোয়াদের হাতে। বুর্জোয়ারা যে উন্নতি চায়, সেই উন্নতি হচ্ছে পুঁজিবাদী উন্নতি। বাংলাদেশে পুঁজিবাদী উন্নতি হয়েছে ঠিকই। পুঁজিবাদী উন্নতি বৈষম্য সৃষ্টি করে, বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করে, দেশপ্রেমের ঘাটতি তৈরি করে।
স্বাধীনতার ৫৫ বছরের দ্বারপ্রান্তে এসে এই প্রবীণ লেখক ও শিক্ষকের সঙ্গে জাগো নিউজের কথা হয় স্বাধীনতার লক্ষ্য ও সুফল নিয়ে। তিনি অকপটে স্বীকার করেন, ‘স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন হয়নি। এখনো মুক্তির স্বাদ পাইনি, বা স্বাধীনতার সুফল ভোগ করা যাচ্ছে না। স্বাধীনতার মূল যে কথা ছিল অর্থনৈতিক মুক্তি, সেই অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করা যায়নি। বরং মানুষে মানুষে বৈষম্য বেড়েছে। দরিদ্র আরও দরিদ্র হয়েছে। ধনী আরও ধনী হয়েছে।’
Advertisement
যে লক্ষ্য নিয়ে মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম হলো, সেই লক্ষ্য অর্জন হয়নি। আমরা স্বাধীনতার সুফল মোটেও পাইনি। আমাদের স্বাধীনতা কেবল স্বাধীনতা ছিল না। এটা ছিল একটা মুক্তির সংগ্রাম। আমরা তো মুক্ত হতে পারিনি। আমাদের মুক্তির তো সব সময় একটা মূল কথা থাকে, অর্থনৈতিক মুক্তির। সেটা তো ঘটেনি। মুক্তির স্বাদ আমরা পাইনি।’
অর্থনৈতিক যে উন্নতি ঘটেছে সেটা হচ্ছে, মানুষের শ্রমের জন্য। শ্রম যারা দিয়েছে, সেই শ্রমের ফল থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছে। শ্রমের ফলে যে সম্পদ তৈরি হয়েছে, সেই সম্পদ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে।
সমস্যা কোথায় রয়ে গেলো?মানুষের মধ্যে বৈষম্য বেড়েছে। দরিদ্র লোক আরও দরিদ্র হয়ে গেছে। ধনী আরও ধনী হয়েছে। এক শ্রেণির হাতে চলে গেছে সব সম্পদ। কাজেই স্বাধীনতার লক্ষ্য বা মুক্তির লক্ষ্য আমরা অর্জন করতে পারিনি।
কারণটা কী?কারণটা হচ্ছে- দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাষ্ট্রক্ষমতা চলে গিয়েছিল বুর্জোয়াদের হাতে। বুর্জোয়ারা যে উন্নতি চায়, সেই উন্নতি হচ্ছে পুঁজিবাদী উন্নতি। বাংলাদেশে পুঁজিবাদী উন্নতি হয়েছে ঠিকই। পুঁজিবাদী উন্নতি বৈষম্য সৃষ্টি করে, বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করে, দেশপ্রেমের ঘাটতি তৈরি করে। ফলে সম্পদ পাচার হয়ে গেছে। বড় লোকরা আমাদের দেশের সব সম্পদ পাচার করে বিদেশে নিয়ে গেছে। মানুষ বিশ্বাস করে বা আস্থার ফলে ব্যাংকে টাকা গচ্ছিত রাখে, সেখানে ব্যাংকাররা নিজেরাই রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা নিয়েছে। নিজেরাই টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। কাজেই নিঃস্বকরণ ঘটেছে।
Advertisement
অর্থনৈতিক যে উন্নতি ঘটেছে সেটা হচ্ছে, মানুষের শ্রমের জন্য। শ্রম যারা দিয়েছে, সেই শ্রমের ফল থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছে। শ্রমের ফলে যে সম্পদ তৈরি হয়েছে, সেই সম্পদ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। তাও মালিকদের জন্য, মেহনতি মানুষের জন্য নয়।
এসইউজে/এএসএ/জেআইএম