ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকের গচ্ছিত আমানতের সুরক্ষায় গঠন করা হবে ‘আমানত সুরক্ষা তহবিল’। ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য পৃথক তহবিল গঠন করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পৃথক হিসাবের মাধ্যমে পরিচালিত হবে এ তহবিল। এমনই এক নতুন আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
Advertisement
এতে বলা হয়েছে, ব্যাংক আমানত বিমা আইন ২০০০ এর আওতাধীন প্রতিষ্ঠিত আমানত বিমা ট্রাস্ট তহবিলে জমা করা অর্থ আমানত সুরক্ষা তহবিলে (ব্যাংক কোম্পানি) প্রারম্ভিক জমা হিসেবে স্থানান্তরিত হবে। যেখানে মোট সুরক্ষিত আমানতের আনুপাতিক হারে তহবিলের আকার নির্ধারণ হবে। আমানতকারীর সর্বোচ্চ সুরক্ষা আমানতের পরিমাণ হবে দুই লাখ টাকা। সবোর্চ্চ এ সীমা তিন বছর পর পর পর্যালোচনা করা হবে।
জনমত গ্রহণের জন্য উন্মুক্ত এই খসড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে আমানত সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রিমিয়ামের মাধ্যমে পরিচালিত এক পৃথক তহবিল তদারকি করবে এ কর্তৃপক্ষ। অধ্যাদেশের খসড়া প্রণয়ন করে তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
অধ্যাদেশে আমানত সুরক্ষা বলতে বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠান অবসায়নের (দেউলিয়া) ক্ষেত্রে এর আমানতকারীদের সুরক্ষিত আমানত পরিশোধের নিশ্চয়তা প্রদান এবং আমানত সুরক্ষা ব্যবস্থা মানে আমানত সুরক্ষার জন্য কার্যকরী পদ্ধতি। সরকারের আমানত, সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের আমানত, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান-স্বশাসিত সংস্থা ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আমানত, সদস্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত, সদস্য প্রতিষ্ঠানের বৈদেশিক শাখায় সংগৃহীত আমানত, বিদেশি সরকারের আমানত, বিদেশি সরকারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের আমানত ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আমানত এ অধ্যাদেশের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে।
Advertisement
আমানত সুরক্ষা তহবিলের উৎস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে- সদস্য প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বা অন্য কোনো উৎস থেকে নিয়মিত সংগৃহীত আর্থিক সম্পদ। বার্ষিক প্রিমিয়াম, বিনিয়োগ থেকে আয় এবং নতুন ব্যাংকের ক্ষেত্রে পরিশোধিত মূলধনের শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ প্রারম্ভিক জমা।
আরও পড়ুন রেমিট্যান্সে নতুন রেকর্ডের আভাস, ২২ দিনেই এলো ২৪৪ কোটি ডলার ব্যাংকে ক্ষুদ্র আমানতকারীর হিসাব ও স্থিতি বেড়েছেঅধ্যাদেশের খসড়ায় আমানত সুরক্ষা তহবিলে বলা হয়েছে, সুরক্ষা সীমা অতিক্রম করা আমানতকারীদের অতিরিক্ত অর্থের দাবি লিকুইডেটরের মাধ্যমে করতে হবে। নিরাপদ আমানতের জন্য সাত দিনের মধ্যে পরিশোধের সময়সীমা এবং তহবিলের আয়কর ছাড়ের বিষয়টিও স্পষ্ট করা হয়েছে। প্রিমিয়াম সময়মতো পরিশোধ না করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরও আমানতকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অধ্যাদেশ আনার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
খসড়া অধ্যাদেশটি ব্যাংক আমানত বিমা আইন-২০০০ এর স্থলাভিষিক্ত হবে, যেখানে সর্বোচ্চ পরিশোধের সীমা ছিল এক লাখ টাকা। সরকার এটি বাস্তবায়নের জন্য একটি আমানত সুরক্ষা ব্যবস্থা গঠন করবে, যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক আমানত সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মিত দায়িত্ব যেমন রেগুলেটরি, সুপারভাইজরি ও রেজুলেশন সম্পর্কিত কার্যক্রম থেকে আলাদা ও স্বাধীন হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক তার ক্ষমতা ও দায়িত্ব কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য সংগঠনের কাঠামোর মধ্যে একটি আলাদা বিভাগ গঠন করবে। এটি ডিপোজিট প্রোটেকশন ডিভিশন নামে পরিচিত হবে।
Advertisement
আমানত সুরক্ষা ব্যবস্থার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সাত সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ। এ পর্ষদের চেয়ারম্যান হবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। পরিচালনা পর্ষদ প্রতি তিন বছর অন্তর কমপক্ষে একবার সুরক্ষিত আমানতের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করবে। বিধিবিধান, বিনিয়োগ নীতি এবং ঝুঁকি নির্ভর প্রিমিয়াম হারের তদারকি করবে। যা ব্যাংক সংকট মোকাবিলায় সহায়তার জন্যও তহবিল বরাদ্দ করবে।
আমানত তহবিল বিষয়ে খসড়া অধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে, আয়কর আইন ২০২৩, ব্যবসায়িক মুনাফা আইন ১৯৪৭ বা অন্য কোনো বিদ্যমান কর আইন নির্বিশেষে আমানত সুরক্ষা তহবিলের আয়, মুনাফা বা প্রাপ্তির ওপর কোনো আয়কর, অতিরিক্ত কর বা ব্যবসায়িক মুনাফা কর প্রযোজ্য হবে না। যদি কোনো সদস্য প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নির্ধারিত প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়, তবে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের চলতি অ্যাকাউন্ট থেকে সংশ্লিষ্ট পরিমাণ অর্থ কেটে আমানত সুরক্ষা তহবিলের সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টে জমা করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিলম্বিত প্রিমিয়ামের ওপর জরিমানা আরোপ করতে পারবে। সরকারি ট্রেজারি বন্ড বা ট্রেজারি বিলের মধ্যে যে হার সর্বোচ্চ, সেই হার অনুযায়ী সুদ প্রযোজ্য হবে।
ইএআর/কেএসআর/জিকেএস