তিস্তাপাড়ের অধিক ভাঙনকবলিত ২০ কিলোমিটার তীর রক্ষা বাঁধের কাজ শিগগির শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন পানিসম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
Advertisement
তিনি বলেন, তিস্তাপাড়ের বেশি ভাঙনপ্রবণ ৪৩ কিলোমিটার এলাকার তীররক্ষা বাঁধের জন্য ২৪৩ কোটি টাকার অনুমোদন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া গেছে। তবে প্রথম বছরে তিস্তার অধিক ভাঙনপ্রবণ ২০ কিলোমিটার এলাকার তীর রক্ষা বাঁধের কাজ করা হবে। পর্যায়ক্রমে তিস্তার অধিক ভাঙনপ্রবণ বাকি ২৩ কিলোমিটার এলাকার তীর রক্ষা বাঁধের কাজও দ্রুত করা হবে।
শনিবার (২২ মার্চ) ঢাকার গ্রিন রোডস্থ পানি ভবনের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ব পানি দিবস-২০২৫ উপলক্ষ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘পানি খাতে সংস্কার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, সদিচ্ছা থাকলে সমন্বয় করে দ্রুত কাজ করা যায়, এটাই একটা বড় সংস্কার। পানি উন্নয়ন বোর্ডের চলমান কাজে কোথাও গুণগত মানের ঘাটতি পরিলক্ষিত হলে মন্ত্রণালয়ের গঠিত মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক মল্লিক সাঈদ মাহবুবসহ কমিটির অন্য সদস্যদের জানানোর অনুরোধ করেন উপদেষ্টা।
Advertisement
তিনি বলেন, আগামী বর্ষা মৌসুমে দেশের যেসব জায়গায় ঘূর্ণিঝড় বা বেশি বন্যায় ভাঙনের ঝুঁকি রয়েছে সেসব এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় অফিসগুলোকে ইমারজেন্সি বেসিসে কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জিও ব্যাগ এবং ব্লক প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জরুরি অবস্থায় রেসপন্স করার জন্য কী কী ব্যবস্থা হাতে নেওয়া হয়েছে তার তালিকা এপ্রিল মাসের মধ্যে জমা দিতে তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুননদী রক্ষায় জাতিসংঘের পানি আইনে অনুস্বাক্ষর করুন: আনু মুহাম্মদতিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনার ফিজিবিলিটি স্টাডির মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়েছে দুই শর্তে এবং সেটা হচ্ছে পাওয়ার চায়না তিস্তাপাড়ের মানুষের কাছে গিয়ে তাদের পরিকল্পনার কথা বলবে। যারা নদী নিয়ে কাজ করেন তাদের সঙ্গে কথা বলবে। এরই মধ্যে তিস্তাপাড়ের ৫ জেলায় গণশুনানি হয়েছে। এখন বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে আলোচনা করা হবে, ওই বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে আলোচনার জন্য চীন থেকেও তাদের বিশেষজ্ঞ টিম আসবে। সবার সম্মতি নিয়েই আসলে কতটুকু উপকার হবে এটা বুঝে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, নোয়াখালীতে গত বন্যার পরে পানি নামছিল না। বন্যার সময় নোয়াখালীতে পানি নামছিল না কারণ সেটা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, সাগর থেকে জোয়ার উঠে আর নামতে পারছে না, কারণ সেখানে খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। সেটা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি।
উপদেষ্টা বলেন, শিল্পে পানি ব্যবহার নীতিমালাও প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। খুব শিগগির আমরা সেটির বাস্তবায়নে যাবো। আলোচনা সভায় পানি নীতি এবং জাতীয় পানিসম্পদ পরিকল্পনা হালনাগাদ করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
Advertisement
তিনি বলেন, আগামী ১৪ এপ্রিল নদীগুলোর স্থানীয় নামসহ বাংলাদেশের নদ-নদীর একটা সম্পূর্ণ তালিকা আমরা প্রকাশ করতে পারবো। নদী দখল ও দূষণরোধে প্রত্যেক জেলা থেকে একটা করে কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ঢাকার ৪টি নদীসহ বাকি ৭ বিভাগের ৭টি নদী এবং কক্সবাজার জেলার বাঁকখালী নদীসহ মোট ১২টি নদী এবং সেই সঙ্গে রংপুর জেলার শ্যামা সুন্দরী খাল এবং ঘাগট নদী মিলিয়ে মোট ১৪টি নদীর কর্মপরিকল্পনা খুব দ্রুত চূড়ান্ত করে ফেলতে পারবো। এর মধ্যে ১০টি নদীর দখল ও দূষণমুক্তকরণে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড, পরিকল্পনা কমিশন এবং জরুরি ফান্ড দিয়ে যতটুকু পারা যায় দ্রুত কাজ শুরু করা হবে। এছাড়া ঢাকার ৪টি নদী দখল ও দূষণমুক্তকরণে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং বিশ্ব ব্যাংক অর্থ দিয়ে সহায়তা করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
উপদেষ্টা আরও বলেন, ভবদহ এবং বিল ডাকাতিয়ার জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধানে আমরা কাজ শুরু করে দেবো। আড়িয়াল বিল ও চলনবিল নিয়েও আমরা শুরু করেছি। এছাড়া সবচেয়ে দূষিত লবণদহ, তুরাগ ও হাড়িধোয়া এই ৩ নদীসহ টাঙ্গাইলের লৌহজং নদী, হালদা নদী, তিতাস, কপোতাক্ষ, সালদা, ময়ূর, আড়াইকুড়ি, বেতনা, গড়াই, ঘাঘট, বড়াল, সুতাং এবং মগড়া এই নদীগুলোকে দখল ও দূষণমুক্তকরণে প্রাথমিকভাবে বেছে নেওয়া হয়েছে।
সভায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরএএস/ইএ/জেআইএম