ঈদুল ফিতরের বেশ বড় ছুটিকে কাজে লাগাতে ভ্রমণ পিপাসুরা ছুটে আসবেন কুয়াকাটায়। তাই তাদের বরণে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পর্যটকদের সেবা দেওয়া ১৬টি পেশার ব্যবসায়ীরা। এই লম্বা ছুটিকে সামনে রেখে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায় ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে অগ্রিম হোটেল বুকিং। শুধু হোটেলই নয়, নিজেদেরকে সার্বিকভাবে প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
Advertisement
হোটেল কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবার (২১ মার্চ) পর্যন্ত ইতোমধ্যে প্রায় প্রথম শ্রেণির হোটেলগুলোর ৫০-৬০ শতাংশ এবং দ্বিতীয় শ্রেণির হোটেলগুলোর ৩০-৪০ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা, সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা এবং পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় স্টেক হোল্ডার, ১৬টি পেশার প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি, ট্যুরিস্ট পুলিশের সমন্বয়ে বৈঠক হয়েছে।
পর্যটকদের বরণে হোটেল-মোটেলগুলো সেজেছে রঙিন সাজে, সৌন্দর্যমণ্ডিত করা হয়েছে যাতায়াতের পথগুলো। রঙিন হচ্ছে প্রতিটি হোটেলের কক্ষগুলো। প্রতিটি আবাসিক হোটেল-রিসোর্ট নেমেছে পর্যটক আকর্ষণের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতায়।
আগামী ৩১ মার্চ (সোমবার) বা ১ এপ্রিল (মঙ্গলবার) মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। তবে ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর ধরে ঈদের ছুটি নির্ধারণ করেছে সরকার। এবার ২৯ মার্চ (শনিবার) থেকে শুরু হচ্ছে ঈদুল ফিতরের ছুটি। টানা পাঁচ দিনের ছুটি (২৯, ৩০, ৩১ মার্চ এবং ১ ও ২ এপ্রিল) থাকার কথা ছিল ২ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর মাঝখানে একদিন (৩ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার) অফিস খোলা রাখার কথা ছিল। এরপর আবার ৪ ও ৫ এপ্রিল (শুক্র ও শনিবার) দুদিনের সাপ্তাহিক ছুটি। সেই হিসাবে ২৬ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ১১ দিনের মধ্যে মাত্র দুদিন অফিস খোলা ছিল। তবে ‘নির্ধারিত ছুটি বিধিমালা, ১৯৫৯’ অনুযায়ী, দুটি ছুটির মাঝখানে নৈমিত্তিক ছুটি নেওয়ার নিয়ম নেই। তাই মাঝখানের কর্মদিবসগুলোতে ছুটি নিয়ে কেউ চাইলেই টানা ছুটি নিতে পারবেন না। মাঝখানে ছুটি নিলে টানা ছুটি হয়ে যায়।
Advertisement
এই পরিস্থিতিতে ২৮ এপ্রিল থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিন ছুটির সুযোগ করে দিতে ৩ এপ্রিলও নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা করে সরকার। সেক্ষেত্রে এবার সবমিলিয়ে টানা ৯ দিন ছুটি ভোগ করতে পারবেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক) সেক্রেটারি জেনারেল জহিরুল ইসলাম জানান, পুরো রমজান মাসজুড়ে পর্যটকশূন্য ছিল কুয়াকাটা, সেই সুযোগে হোটেল-মোটেলগুলো পরিপাটি করে তাদের প্রস্তুতি সেরে নিয়েছে। ঈদের টানা ছুটিতে লাখো পর্যটকের আগমন ঘটবে কুয়াকাটায় এমনটাই আশাবাদী তারা।
এদিকে সৈকতে দীর্ঘদিন পর্যটক কম থাকায় পুরো সৈকতজুড়ে তৈরি হয়েছে ভিন্নতা। শীত মৌসুমের শেষে বর্ষার শুরুতে সৈকতে উঁচু ঢেউ, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, বর্ষার একটি আমেজ উপভোগে অনেকেই ছুটে আসবেন কুয়াকাটায়।
সিকদার রিসোর্ট অ্যান্ড ভিলাসের এজিএম আল-আমিন খান উজ্জ্বল বলেন, আমাদের রিসোর্টে ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র এখন পর্যন্ত বেশ বুকিংয়ের ফোন আসছে। ইতোমধ্যে ৬০ শতাংশ অগ্রিম বুকড হয় গেছে। আশা করছি বাকি দিনগুলোতে আমরা পুরোপুরি বুকিং পাবো। পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে ইতোমধ্যে আমরা সুইমিং, হোটেলের বাড়তি সৌন্দর্য বর্ধনসহ নানা আয়োজন হাতে রেখেছি।
Advertisement
কুয়াকাটা ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কেএম বাচ্চু জানান, পর্যটকদের আগাম সম্ভাবনাকে ঘিরে আমরাও প্রস্তুতি নিয়েছি যাতে পর্যটকদের পুরোপুরি সেবা ও বিনোদন দিতে পারি। ইতোমধ্যে আমাদের কাছে অনেকগুলো বুকিং এসেছে, প্রতিটি উৎসবের ছুটি ঘিরে আমরা প্রস্তুতি রাখি দেশ-বিদেশের পর্যটকদের জন্য।
কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম জানান, ঈদ ঘিরে বাড়তি পর্যটকদের আগমনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি সেরেছে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি। নিয়মিত নিরাপত্তার পাশাপাশি অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট, স্কাউট থেকে বেশ কয়েকটি টিমে ভাগ করে স্বেচ্ছাসেবক ও সৈকতে রেস্কিউ টিমের সদস্য কাজ করবে। যাতে বাড়তি ভাড়া বা কোনো ধরনের হয়রানির শিকার পর্যটকরা না হন।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের ইনচার্জ শাখাওয়াত হোসেন তপু জানান, ঈদের বন্ধে পর্যটকদের নিরাপত্তায় সার্বিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। লেম্বুরবন থেকে রামনাবাদ চ্যানেল পর্যন্ত বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকবে ট্যুরিস্ট পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম। জল-স্থল পথে সার্বক্ষণিক আমরা পর্যটকদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছি।
আসাদুজ্জামান মিরাজ/এফএ/এমএস