অর্থনীতি

জমজমাট ঈদ মার্কেট, পা ফেলার জায়গা নেই মৌচাক-মালিবাগে

ঈদের আগে প্রায় দশদিন বাকি থাকলেও অনেকেই ঢাকা ছাড়বেন ২৬ তারিখেই। সে হিসাবে তারা আছেন মাত্র ৪ বা ৫ দিন। ফলে মধ্য রমজানেই এবার ঈদ সামনে রেখে জমজমাট কেনাকাটা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন বিপণিবিতানে দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা।

Advertisement

শুক্রবার মৌচাক ও এর আশপাশের মার্কেটগুলো ঘুরে প্রচুর মানুষকে নানান পণ্য কিনতে দেখা গেছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত শুক্রবারই সর্বোচ্চ ভিড় ছিল। দিন যত যাচ্ছে, কেনাকাটাও ততই বাড়ছে। এর পাশাপাশি মৌচাক-মালিবাগ এলাকার ফুটপাতেও কেনাবেচা জমেছে। ক্রেতা আর বিক্রেতাদের চাপে এ এলাকায় যেন পা ফেলার জায়গা নেই।

শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে মৌচাক, আনারকলি, ফরচুন ও সেন্ট্রাল পয়েন্ট মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে- দুপুরের পর থেকে প্রচুর ক্রেতা এসেছেন। দোকানগুলো ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমে মুখর। অনেক দোকানে ক্রেতার চাপে দম ফেলার ফুরসৎ পাচ্ছেন না বিক্রেতারা।

আনারকলি মার্কেটে সুমি ফ্যাশনের কর্ণধার ফরিদ উদ্দিন বলেন, আজ আর কাল (শুক্র-শনিবার) এবারের ঈদের সর্বোচ্চ কেনাকাটা হবে। কারণ আগামী যে শুক্রবার আছে, তার আগে অনেকেই বাড়ি চলে যাবে। দুপুর থেকে আজ মার্কেটে প্রচুর ক্রেতা।

Advertisement

বিক্রি কেমন হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবার রোজার শুরুতে কিছুটা ঢিলেঢালা ছিল। এখন অনেক বেড়েছে। শেষ পর্যন্ত আরও বাড়বে বলে মনে হচ্ছে।

আরও পড়ুন

জমে উঠেছে জুতার বাজার, দাম বেশির অভিযোগ ক্রেতার ভারতের শাড়ি ও পাকিস্তানের সারারা-গারারার চাহিদা বেশি মেয়েদের পছন্দ পাকিস্তানি থ্রি পিস, ছেলেদের কাশ্মীরি পাঞ্জাবি

এদিকে মৌচাক মার্কেটে দিলু রোড থেকে আসা ক্রেতা ফিরোজ হোসেন ও তার পরিবার দুপুর থেকে কেনাকাটা করেছেন। বিকেলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, টার্গেট ছিল আজ-কালকের মধ্যে পুরো কেনাকাটা শেষ করার। এজন্য পুরো পরিবার নিয়ে এসেছি।

তিনি বলেন, ক্রেতার ভিড় বেশি। বিক্রেতারা দাম চাচ্ছেন বেশি। অনেক কিছুর দাম বেশি মনে হয়েছে। পোশাক থেকে শুরু করে প্রসাধনী সব কিছুর দামই বেড়েছে।

Advertisement

এদিকে এ বছর পোশাকের দাম কিছুটা বেশি হওয়ায় সার্বিক ব্যবসায় প্রভাব পড়েছে জানিয়ে উর্মি ফ্যাশনের মহিউদ্দিন বলেন, দোকানে ক্রেতাদের উপস্থিতি অনেক থাকলেও বেচাকেনা কম হচ্ছে। গত বছরের এমন সময়ের তুলনায় এ বছর ৩০ শতাংশ কম বিক্রি হচ্ছে।

তিনি বলেন, পাইকারি পর্যায়ে পোশাকের দাম বেড়েছে। এ বছর পোশাক পাইকারি কিনতে ১৫ শতাংশ বেশি দাম দিতে হয়েছে। কিন্তু ক্রেতারা গত বছরের দামেই কেনার চেষ্টা করছেন। সেজন্য অনেক ক্রেতা ফিরে যাচ্ছেন।

এদিকে মৌচাক-মালিবাগ এলাকায় ফুটপাতেও প্রচুর দোকান বসেছে। সেগুলোতেও ছিল ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়।

মৌচাকে আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের সামনে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখা গেলো, ব্যস্ত সময় পার করছেন বিক্রেতারা। কথা বলার চেষ্টা করা হয় সেখানকার জুতার দোকানি বিদ্যুত হোসেনের সঙ্গে। তার ভাসমান জুতার দোকানে একের পর এক ক্রেতা আসছেন। কেউ জুতা পছন্দ করছেন। পছন্দ হলে করছেন দরদাম। এসব সামাল দিতে গিয়ে কথা বলার সুযোগই পাচ্ছেন না তিনি।

আরও পড়ুন

ছুটির দিনে জমজমাট নিউমার্কেট, খুশি বিক্রেতারা যমুনা ফিউচার পার্ক: এ যেন এক গোলকধাঁধা

একই এলাকার আরেক বিক্রেতা বলেন, বিক্রি সবচেয়ে বেশি আজ আর কাল, এরপর চাঁদরাতে। দুপুর থেকে বেশ ভালো বিক্রি হয়েছে। এ রাতেও কম হবে না।

তিনি বলেন, ফুটপাতে যারা কেনাকাটা করতে আসেন, তাদের হাতে টাকা আসে শেষ মুহূর্তে। তাই ক্রেতাদের ভিড়ও থাকে শেষ দিকে। এখন বেচাকেনা প্রতিদিন বাড়বে।

ফুটপাতে শুক্র-শনিবার এমন ভিড় সামাল দিতে হয় এই দোকানিদের। তাই চাপ থাকলেও তাতে অভ্যস্ত তারা।

শুক্রবার দেখা গেলো, মৌচাক থেকে মালিবাগ মোড় হয়ে শান্তিনগর পর্যন্ত এলাকায় সড়কের দুই পাশের ফুটপাতে ভাসমান দোকানগুলোতে হাজার হাজার মানুষ। প্রায় প্রতিটি দোকানের সামনে উপচেপড়া ভিড়। মানুষের চাপে সড়কে গাড়ি চলাচল স্থবির হয়ে পড়েছে। ফুটপাতে হেঁটে যাওয়াও দুষ্কর।

সবখানে জামাকাপড়, জুতার দোকানে ভিড় বেশি। আবার শেষ মূহুর্তে বেল্ট, টুপি, ঘড়ি, চশমার দোকানেও ভিড় আছে। তুলনামূলক দাম কম হওয়ায় স্বল্প আয়ের লোকজন ফুটপাতে কেনাকাটা করেন বেশি। আবার অন্যরাও আসেন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিতে।

সেখানে আমিনুল নামের একজন ক্রেতা বলেন, ঈদের পাঞ্জাবি আগেই কিনেছেন। জুতা কিনতে হবে। তবে কেনাকাটার চেয়ে এখানে আসতে ভালো লাগে। দাম কম থাকে। তাই পছন্দ হলে অন্যদের জন্যও কিছু কেনা যায়।

এনএইচ/এমএইচআর/এমএস