আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মূল্যস্ফীতি কমাতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ থাকা এবং ব্যক্তি করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন গণমাধ্যমের শীর্ষ নির্বাহীরা।
Advertisement
বুধবার (১৯ মার্চ) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক এবং শীর্ষ কর্মকর্তারা এ সুপারিশ করেন। সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তার উপস্থিত ছিলেন।
এসময় জনকণ্ঠের প্রধান প্রতিবেদক কাওসার রহমান বলেন, বাজেটের লক্ষ্য হওয়া উচিত মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা। জনগণের সুবিধা হয় এমন পদক্ষেপ নিতে হবে। তবেই সেই পদক্ষেপ পরবর্তী সরকার অব্যাহত রাখবে।
বাজেটে রেমিটেন্স প্রবাহ ও রপ্তানির ধারা অব্যাহত রাখার পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিতে হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিনিয়োগ যাতে গতিশীল হয়, সেই ব্যবস্থা বাজেটে রাখতে হবে।
Advertisement
আরটিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশিক রহমান বলেন, ব্যক্তি করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ টাকা করার সুপারিশ করছি। ক্যাশলেস ব্যবস্থা প্রচলনের বিকল্প নেই। এ ব্যবস্থা গ্রামেও চালু করতে হবে। তবে কালো টাকার ছড়াছড়ি কমবে।
সমকালের হেড অব বিজনেস মো. জাকির হোসেন বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা এমনভাবে বাড়াতে হবে, যাতে একজন মানুষ এক মাস এটা দিয়ে চলতে পারে।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের সহযোগী সম্পাদক শামীম আব্দুল্লাহ জাহেদী বলেন, বাজেট শুধু আয়-ব্যয়ের হিসাব না, এটার একটা দর্শন থাকতে হবে। বাজেটের দর্শন হবে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। মানুষ ভালো কাজ করলে পুরস্কার পাবে সেই ব্যবস্থা বাজেটে থাকতে হবে।
গ্রাহকদের কেবল অপারেটরদের দেওয়া ফি থেকে টেলিভিশন চ্যানেল এবং সরকার যাতে একটা অংশ পায় সেই পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান আব্দুল্লাহ জাহেদী।
Advertisement
জাগো নিউজ২৪ডটকমের সম্পাদক কে এম জিয়াউল হক বলেন, আগামী বাজেটে সব ধরনের শিল্পের সুরক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাই।
একই সঙ্গে অনলাইন গণমাধ্যমের সহায়তায় আগামী বাজেটে দিক-নির্দেশনা রাখার অনুরোধ জানান তিনি।
আরও পড়ুন সাংবাদিকদের বেতন ৩০ হাজারের নিচে নামলে পত্রিকা বন্ধ: প্রেস সচিব ‘মিডিয়া হাউজগুলো কারা নিয়ন্ত্রণ করে’ প্রশ্ন বুলুর ১৬ বছর সংবাদপত্র সুবিধা পায়নি, বরং আক্রমণের শিকার হয়েছেমূল্যস্ফীতি কমাতে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে যুগান্তরের সম্পাদক আব্দুল হাই শিকদার বলেন, করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ টাকার ওপরে করা যায় কি না, সেটি ভেবে দেখবেন।
তিনি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা বাড়ানো ও টিসিবির আওতা বাড়ানোর সুপারিশ করেন। সঙ্গে তিনি রেশন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার অনুরোধ জানান।
বাস্তবমুখী বাজেট প্রণয়নের অনুরোধ জানিয়ে যুগান্তর সম্পাদক বলেন, যারা কর দেওয়ার যোগ্য তাদের আয়করের আওতায় আনার জন্য নজর দিতে হবে।
দৈনিক প্রথম আলোর হেড অফ অনলাইন শওকত হোসেন মাসুম বলেন, একটা বাজেটে কি পরিমাণ কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে, সেই হিসাব আমরা পাই না। এমন ব্যবস্থা করতে হবে যাতে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে কত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলো সেটি জানা যায়।
বাজেট বক্তৃতার সংস্কার চেয়ে তিনি বলেন, বাজেট বক্তৃতার আকার ক্রমেই বেড়েছে। সেখানে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বিবরণ কোনো কাজে লাগে না। বাজেট বক্তৃতা অহেতুক বড় করা হয়।
দেশ রূপান্তরের মাসুম বিল্লাহ বলেন, কৃষিতে বরাদ্দ বাড়িয়ে আগের জায়গায় নিয়ে যাওয়া উচিত। এছাড়া সরকারি প্রকল্পে ভ্যাট-ট্যাক্স অব্যাহতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
ডেইলি স্টারের চিফ অফ অপারেশন মিজানুর রহমান বলেন, কর ব্যবস্থা যত বেশি অটোমেশন করা হবে, কর ব্যবস্থার তত উন্নতি হবে।
স্বাস্থ্য খাতে এবার আরও বেশি ফোকাস দেওয়া উচিত। শিক্ষা খাতকে পুনর্নির্মাণ না করলে মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে বলেও মন্তব্য করেন মিজানুর রহমান।
ডিবিসি নিউজের সম্পাদক লোটন একরাম বলেন, এবার আশা করি সাধারণ মানুষের বাজেট হবে। এবার বাজেটে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্বপ্নকে দেখতে পাবো।
করমুক্ত আয় সীমা ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করি এবার বাজেটে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়ার জটিলতা কমবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা বাড়ানো উচিত। বয়স্ক ভাতা কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা হওয়া উচিত।
এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক মনিউর রহমান বলেন, বাজেটে কর্মসংস্থান বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
চ্যানেল আই-এর সাংবাদিক রিজভী নেওয়াজ বলেন, তথ্য বিকৃতির মাধ্যমে রপ্তানিসহ জিডিপির তথ্য দেওয়া হয়েছে। তথ্য বিকৃতির মাধ্যমে আমরা কি ধরনের ভুল তথ্য পেয়েছি এবং সেই কারণে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি আশা করি এ বিষয়টি বাজেট বক্তৃতায় থাকবে।
উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার ফলে যে ঝুঁকি রয়েছে, সেই বিষয়টি কীভাবে মোকাবিলা করব সেই বিষয়ে ব্যবসায়ীদের অবহিত করার অনুরোধ জানান তিনি।
আরএমএম/এমআইএইচএস/জিকেএস