দেশজুড়ে

লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসবের প্রস্তুতি সভায় দুই পক্ষের হাতাহাতি

নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দে হিন্দু ধর্মালম্বীদের স্নান উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি সভায় ‘ফ্যাসিস্টদের দোসর’ আখ্যা দেওয়া নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।

Advertisement

বুধবার (১৯ মার্চ) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে ও কার্যালয় প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে।

সম্মেলনকক্ষে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি জয় কে রায় চৌধুরী বাপ্পি এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলার কমিটির সেক্রেটারি শিপন সরকার শিখন একে অপরকে উদ্দেশ করে ‘ফ্যাসিস্টদের দোসর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। সেইসঙ্গে সভা শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে তাদের অনুসারীরা একে অপরের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে যান।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা হিন্দু নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী ৪ ও ৫ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দে হিন্দু ধর্মালম্বীদের ধর্মীয় স্লান উৎসবকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে প্রস্তুতি সভার আয়োজন করা হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন ও সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।

Advertisement

সভার এক পর্যায়ে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি জয় কে রায় চৌধুরী বাপ্পি লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি সরোজ কুমার সাহা ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সেক্রেটারি শিপন সরকার শিখনকে ‘ফ্যাসিস্টদের দোসর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। পরে সভায় উপস্থিত অন্যদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলেও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে দফায় দফায় তারা হাতাহাতিতে লিপ্ত হন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসব উদযাপন পরিষদের বর্তমান সভাপতি সরোজ কুমার সাহা। ২০১৫ সালে লাঙ্গলবন্দ স্নানে ১০ জনের মৃত্যুর ঘটনায় তৎকালীন উদযাপন পরিষদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ মনে করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। নতুন কমিটিতে তৎকালীন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের সুপারিশে সরোজ কুমার সাহাকে কমিটির সভাপতি করা হয়েছিল। সেইসঙ্গে ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত টানা ১০ বছর ধরে তিনিই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এই দীর্ঘ মেয়াদে দায়িত্বে থাকায় অন্যদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে তাদের বিপরীতে সম্প্রতি বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি জয় কে রায় চৌধুরী এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা গয়েশ্বর রায় চৌধুরীর মেয়ে অর্পনা রায়ের নেতৃত্বে লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসব উদযাপন ফ্রন্ট নামের একটি নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এ নিয়ে দুই পক্ষের লোকজনদের মধ্যে বিরোধ চলমান। সে বিরোধের সূত্র ধরেই জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে জয় কে রায় চৌধুরী বাপ্পি বলেন, ‘বিশৃঙ্খলার ঘটনা নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে রাজি না। তবে এতটুকু বলবো জেলা প্রশাসক এবং জেলা পুলিশ সুপার বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব নিয়েছেন। উনারা দুই পক্ষের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন। আমরা উনাদের সিদ্ধান্তে শতভাগ একমত।’

Advertisement

লাঙ্গলবন্দ স্নান উদযাপন পরিষদের সভাপতি সরোজ কুমার সাহা বলেন, লাঙ্গলবন্দ স্নান উদযাপনের জন্য আমাদের একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। বিগত দিনগুলোতে আমরা এই কমিটির মাধ্যমে লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসব উদযাপন করে আসছি। এর মধ্যে আরেকটি কমিটি আত্মপ্রকাশ করে আজকে এই বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছে। এগুলো হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য ভালো লক্ষণ নয়।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, সম্মেলনকক্ষে আমাদের সামনে এমন কোনো ঘটেনি। বাইরে হয়তো কিছু হতে পারে। তবে স্নান উৎসবকে কেন্দ্র করে একটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে।

মোবাশ্বির শ্রাবণ/এসআর/এমএস