জমে উঠেছে ঈদের মার্কেটগুলো। দিন যত এগোচ্ছে ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতিও তত বাড়ছে, কিন্তু বিক্রি বাড়েনি। তবে পোশাক, কসমেটিকস ও জুয়েলারির দাম বেশি হওয়ায় বেচাকেনা একটু কম বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। বুধবার (১৯ মার্চ) দুপুরের পর থেকে মৌচাক ও মালিবাগ এলাকার মার্কেট ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।
Advertisement
সরেজমিনে দেখা যায়, মৌচাক ও মালিবাগ এলাকার মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের ভালো উপস্থিতি দেখা গেছে। ক্রেতা টানতে বাহারি ঈদ পোশাকের পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। মৌচাক এলাকায় মৌচাক ও আনারকলি মার্কেট, ফরচুন কমপ্লেক্স, সেন্টার পয়েন্ট ও আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সসহ মালিবাগ এলাকায় হোসাফ টাওয়ারের বিপণিবিতানগুলোতে ক্রেতাদের উপস্থিতি আগের চেয়ে বেড়েছে।
মার্কেটে আসা ক্রেতাদের অভিযোগ, সব ধরনের পোশাকের দাম আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। দোকানে দোকানে ঘুরেও অনেকে সাধ্যের মধ্যে মেলাতে পারছেন না পছন্দের পোশাক। জুতাসহ অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও একই অভিযোগ।
মৌচাক মার্কেটে এম্মি হুসাইন নামের একজন ক্রেতা বলেন, গত বছর যে পাকিস্তানি পোশাকগুলো তিন থেকে সাড়ে তিন হাজারের মধ্যে কিনেছি, এবার সেই একই ধরনের পোশাক ৫ হাজার টাকা চাচ্ছেন। সবকিছুর দাম বেশি। যে কারণে বাজেট কাটছাঁট করতে হচ্ছে।
Advertisement
নিজের ও পরিবারের জন্য কেনাকাটা করতে আসা মিনহাজুর রহমান বলেন, যে পোশাক গত বছর দেড় হাজার টাকায় কেনা যেত, এবার সেটা আড়াই-তিন হাজার টাকা। দাম বাড়ার ফলে এবার মানে ছাড় দিতে হয়েছে। যে কোয়ালিটি প্রত্যাশা করি, তার থেকে কম কোয়ালিটির কিনতে হচ্ছে। মধ্যবিত্তদের জন্য এবার কেনাকাটা কঠিন।
আরও কয়েকজন ক্রেতা বলেন, মেয়েদের পোশাকের দাম বেশি, ছেলেদের পাঞ্জাবির দাম রেঞ্জের মধ্যে থাকলেও শার্ট ও জুতার দাম অনেক বেড়েছে।
দাম বেশি ও কেনাকাটা পরিস্থিতি নিয়ে ফরচুনের প্রিয় শাড়ি গ্যালারির এনামুল হক বলেন, সবকিছুর দাম বেড়েছে। পোশাকের ক্ষেত্রেও সেটা হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঈদের বাজারেও প্রভাব ফেলছে। যে কারণে বিক্রি কমেছে।
এবার ভারত যাওয়া বন্ধ আছে। সে কারণে প্রচুর বিক্রির প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সবমিলে বিক্রি ভালো হলো না। এবার শাড়ির কেনাবেচার অন্যান্য বছরের তুলনায় অর্ধেকের চেয়েও কম।
Advertisement
তবে ভিড় দেখা গেছে রেডিমেড পোশাকের দোকানগুলোতে। রাহা ফ্যাশনের কর্ণধার সাদ্দাম হোসেন বলেন, এ বছর রোজার শুরুতে বিক্রি কিছুটা কম থাকলেও এখন ভালো। খুব যে বেশি হচ্ছে সেটা নয়, অন্যান্য বছরের মতো হবে কি না সন্দিহান।
কে ক্র্যাফটের জামিউল হক বলেন, আগে যেমন এক শ্রেণির মানুষ হাতখুলে খরচ করেছে, তারা এখন নেই। এখন আবার নতুন নতুন ক্রেতা আসছে। কাস্টমারের বেইজ চেঞ্জ হচ্ছে। যে কারণে বিক্রি মিশ্র মনে হচ্ছে।
এসব বিষয়ে ফ্যাশন উদ্যোক্তাদের সংগঠনটির পরিচালক এবং রঙ বাংলাদেশের কর্ণধার সৌমিক দাস জাগো নিউজকে বলেন, অন্যান্য বছরের মতো এবছরও প্রতিটি পোশাক ব্যবসায়ী প্রস্তুতি নিয়েছে ঈদের জন্য। ভারতের বাজার বন্ধ থাকায়, অর্থাৎ কেনাকাটার জন্য ভারত যেতে না পারায় বড় বড় ক্রেতারা দেশের মার্কেটে আছে।
তিনি বলেন, প্রতিবছরই ফ্যাশন হাউসগুলোর বিক্রি বাড়ছে। এবারও বিক্রি হচ্ছে। যদিও শুরুতে বেচাবিক্রি কম হলেও ১৫ রোজার পর থেকে বিক্রি অনেক বেড়েছে। আশা করা হচ্ছে, এ বছর বেচাকেনা অন্যান্য বছরের মতোই হবে।
কয়েক দফা সোনার দাম বাড়ায় মার্কেটে জুয়েলারির বিক্রি ভালো দেখা যায়নি। বুধবার সকালেও একদফা সোনার দাম বেড়েছে। বিক্রি প্রসঙ্গে নিউ স্বর্ণদ্বীপ জুয়েলার্সের নয়ন হোসেন বলেন, মানুষ সংসারের সব খরচ মিটিয়ে তারপর সোনা কেনে। এখন মানুষের হাতে সেই টাকা নেই, অন্যদিকে সোনার দাম বেড়ে যাচ্ছে। যে কারণে বিক্রি খুব কম।
একই ধরনের তথ্য দিয়ে মৌচাক আপন জুয়েলার্সের ব্যবস্থাপক ভজন পাল বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি জুয়েলার্সের জন্য খুব প্রতিকূল। অন্যান্য যে কোনো ঈদের চেয়ে বিক্রি একদম কম।
অন্যদিকে, এবার ঈদে পাঞ্জাবির ভালো বিক্রি দেখা গেছে। অন্যতম বড় পাঞ্জাবির মার্কেট আয়েশা কমপ্লেক্সে তুলি ফ্যাশনের ব্যবস্থাপক বলেন, এ ঈদে পাঞ্জাবির বিক্রি খুব ভালো। সময় যত এগোচ্ছে ক্রেতার চাপ তত বাড়ছে।
ঈদের আগে শেষ সপ্তাহে (আগামী সপ্তাহ) বেচাকেনা প্রচুর বাড়বে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা। উজ্জ্বল কুমার সেন নামের এক বিক্রেতা বলেন, আগামী সপ্তাহে সবাই ঈদের বোনাস পেয়ে যাবে। তখন বিক্রি বাড়বে। অনেকে বেতনও পেয়ে যাবে ঈদের আগে।
ভিড় দেখা গেছে জুতার দোকানগুলোতেও। মালিবাগে বাটার শোরুমের বিক্রয়কর্মী ফরিদ বলেন, আগের চেয়ে বিক্রি বেড়েছে। সামনে আরও বাড়বে আশা করছি।
ভিন্ন কথা বললেন কসমেটিকস বিক্রেতা চন্দন হক। তিনি বলেন, রোজার শেষ অংশে প্রতিদিন আগে ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। সেখানে এখন ৮/১০ হাজার টাকার বিক্রি করতে পারছি না। পরিস্থিতি অনেক খারাপ। মানুষের হাতে টাকা নেই, ব্যবসা-বাণিজ্য খুব খারাপ। আগে একটা ব্যবসা করলে মানুষ লাভবান হইত, এবার লাভ করতে পারছে না। সবার অবস্থা খারাপ।
এনএইচ/এমএএইচ/এমএস