দেশজুড়ে

ফ্ল্যাট ভাড়া নিতে প্রতারণা, থাকতেন অসুস্থতার ভান করে

লাঠি ভর দিয়ে হাঁটেন। অন্যের সাহায্য ছাড়া তেমন চলাফেরা করতে পারেন না। এমন ব্যক্তির সঠিক পরিচয় জেনে যেন নিজের চোখকে অপরাধী মনে করছেন মিয়ানমারের আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনীকে ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া ব্যক্তি। তাকে ফ্ল্যাট ভাড়া দিতে দুই ব্যক্তি প্রতারণা করেছিলেন বলে জানান আতাউল্লাহ যে বাসায় ভাড়া থাকতেন তার মালিক। গত বছরের নভেম্বরে ভবনটির তিনতলার ফ্ল্যাট ভাড়া নেন আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী। এমনটাই জাগো নিউজকে জানিয়েছেন ফ্ল্যাটের মালিক কবির হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার বাসাটি ভাড়া নিতে আতাউল্লাহর সঙ্গে আরও দুই ব্যক্তি এসেছিলেন। তাদের মধ্যে একজন নিজেকে সেনা কর্মমকর্তা ও আরেকজন সাংবাদিক পরিচয় দিয়েছিলেন। ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়ার আগে আমি যখন পরিচয়পত্র চাচ্ছিলাম, তখন ওই দুজনের সেনা কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি নিজেকে আতাউল্লাহর আত্মীয় বলে জানান। তখন তারা বলেছিলেন, পরিচয়পত্র বুঝে দেবেন। আর সাংবাদিক যিনি ছিলেন, তিনি চাকমা বংশধর। রোহিঙ্গা যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তিনি নিজেকে চট্টগ্রামের ট্রলার ও মাছের ব্যবসায়ী পরিচয় দেন। বলেছিলেন, উনি অসুস্থ হওয়ায় ঢাকার পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এখানে এসেছেন।’ কবির হোসেন বলেন, ‘আমার বাসায় উঠেছিলেন গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি (আরসা প্রধান)। তার সঙ্গে ১২ বছরের একটা ছেলে আর আনুমানিক ৩৪-৩৫ বছরের আরেকজন। উনারা মোট এক মাস ১০ দিন ছিলেন আমাদের বাসায়। পরে আমাকে দুই মাসের ২৪ হাজার টাকা ভাড়া পরিশোধ করে ফ্ল্যাটটি তাদের জন্যে ছোট হয়ে যায় বলে ওপরের আরকেটা ফ্ল্যাটে ভাড়ায় উঠেছিলেন। এজন্যই আমি আর পরে তাদের পরিচয়পত্র নেইনি।’

Advertisement

সেনা কর্মকর্তা আর সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে আপনার পরে আর যোগাযোগ হয়েছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে বাড়িওয়ালা বলেন, ‘না, উনারা আর আসে নাই। রোহিঙ্গা এই লোককে যখনই দেখতাম উনি লাঠির ওপর ভর করা। আরেকজনের সাহায্য নিয়ে চলাফেরা করতেন। পরশুদিন র‍্যাব ধরার পর দেখি উনি পুরাপুরি সুস্থ। অথচ এতদিন হাঁটতেই পারতেন না।’

আরও পড়ুন আরসা প্রধান আতাউল্লাহ ৫ সহযোগীসহ গ্রেফতার

একই ভবনের আটতলার যে ফ্ল্যাটটি থেকে গ্রেফতার হন, সে ফ্ল্যাটের দায়িত্বে থাকা খোরশেদ বলেন, ‘ফ্ল্যাটটির মালিক আব্দুল হালিম ইতালি প্রবাসী। তার অবর্তমানে আমি দেখভাল করি। মূলত আমাদের এই ভবনের একটি ফ্ল্যাটে উনারা থাকার সুবাদে আমি তেমন যাচাই-বাছাই ছাড়াই তাকে ভাড়া দিছিলাম। উনাকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে উনি রোহিঙ্গা। আমাকে তার নাম বলা হয়েছে ইমরান। সবসময়ই জুব্বা আর ইসলামি ক্যাটাগড়িতে চলাফেরা করতেন। নামাজ পড়তে যেতেন। তেমন বেরও হতেন না বাসা থেকে। আমাদের ফ্ল্যাটে উনি, তার স্ত্রী আর আরেকজন লোক ছিলেন। মাসে ২০ হাজার টাকা ভাড়া আমাকে দিয়ে আসছিলেন। এখন শুনি উনি এত বড় অপরাধী!’

এদিকে সিদ্ধিরগঞ্জের আবাসিক এই এলাকাটিতে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর প্রধানসহ তার সহযোগীরা বসবাস করে আসছিল এমন খবরে রীতিমতো আতঙ্কিত এলাকাবাসী। ভবনটির আশপাশের বাসিন্দাদের অনেকের মতে, গ্রেফতারদের রিমান্ডে এনে ঠিকঠাকভাবে জিজ্ঞেসাবাদ করা হলে তাদের আরও সহযোগী অপরাধীদের তথ্য মেলার সম্ভাবনা রয়েছে।

Advertisement

গত ১৬ ও ১৭ মার্চ র‌্যাব-১১ এর দুটি টিম নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিপল্লী আবাসিক এলাকায় এবং ময়মনসিংহের নতুনবাজার মোড়ে অবস্থিত গার্ডেন সিটিতে অভিযান চালিয়ে আরসা প্রধান আতাউল্লাহ (৪৮) ও সেকেন্ড ইন কমান্ড মোস্তাকসহ (৬৬) ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। অন্যরা হলেন মনিরুজ্জামান (৩৩), সলিমুল্লাহ (২৭), আসমাউল হুসনা (২৩), আসমত উল্লাহ (২৪), মো. হাসান (৪৩) ও মোসা. শাহিনা (২২)। বাকি দুজন অপ্রাপ্তবয়স্ক।

র‌্যাব জানায়, অভিযানে গ্রেফতার ব্যক্তিদের কাছ থেকে ৫১ লাখ ৩৯ হাজার ১০০ টাকা, ইউএস ডলার ও রিঙ্গিতসহ আরও কিছু বৈদেশিক মুদ্রা, আরসার কমবাট ইউনিফর্ম, মোবাইল ফোন, চাকু, স্টিলের চেইন ও ঘড়িসহ কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারের পর সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ছয়জনকে সোপর্দ করে দুটি মামলা করা হয়েছে। ওই দুই মামলায় তাদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

মো. আকাশ/এসআর/জিকেএস

Advertisement