দেশজুড়ে

বন্ধ মিনিকেট চাল উৎপাদন, দাম চড়া

সরু চালের জন্য সর্ববৃহৎ ও প্রসিদ্ধ মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগর। এখানকার উৎপাদিত চাল যায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। সেই মোকামের ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের গোডাউনে ধান নেই। এ কারণে বন্ধ হয়ে গেছে চাল উৎপাদন। এ সুযোগে খুচরা বাজারে বেড়েই চলেছে মধ্যবিত্তের সবচেয়ে পচ্ছন্দের মিনিকেট চালের দাম।

Advertisement

খাজানগরের কয়েকটি অটোরাইস মিল ও বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অনেক অটোরাইস মিল মিনিকেট চাল উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের দাবি, বাজারে মিনিকেট ধান পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য তারা চাল উৎপাদন বন্ধ রেখেছেন। তবে এসব কোম্পানির নামে চাল ঠিকই পাওয়া যাচ্ছে খুচরা বাজারে। কিন্তু দামটা আকাশছোঁয়া। মিলগেটে প্রতিকেজি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮১ টাকা কেজি দরে। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে আরও বেশি দামে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে ধান না থাকলেও অনেক মিলারের কাছে প্রচুর ধান রয়েছে। সুযোগ বুঝে চাল উৎপাদন করে ঠিকই বাড়তি মুনাফা অর্জন করছেন। কিন্তু প্রশাসনকে দেখাচ্ছেন ধান নেই।

আরও পড়ুন:

Advertisement

চালের বাজার সম্পর্কে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা

চালের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে কেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতি কুষ্টিয়ার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান বলেন, ‘বাজারে মিনিকেট ধান নেই বললেই চলে। ব্যবসায়ীরা উত্তরবঙ্গ-দক্ষিণবঙ্গ খুঁজে অল্প কিছু ধান নিয়ে আসছেন। তার দাম পড়ছে ২২৫০ টাকা। এত দামে ধান কিনলে চালের দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।’

জয়নাল আবেদীন আরও বলেন, খাজানগরের ৫০ শতাংশ মিলমালিক তাদের উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেকেই ব্যবসা বন্ধ করতে হিসাব-নিকাশ কষছেন।

শিগগিরই চালের দামে লাগাম টানার লক্ষণ দেখছেন না খাজানগরের দাদা রাইস মিলের মালিক আরশাদ আলী। তিনি বলেন, ‘নতুন মিনিকেট ধান উঠতে এখনো দেড় মাসের মতো অপেক্ষা করতে হবে। এর আগে মিনিকেট চালের দাম কমার আর কোনো সুযোগ নেই।’

আরও পড়ুন:

Advertisement

দুই দেশ থেকে এসেছে ৩৫ হাজার টন চাল

এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘গতবছর ব্যাপক বন্যার পর আমরা সরকারকে চাল আমদানির পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু সরকার কী করেছে আমরা জানি না। কৃষি বিভাগ ধান উৎপাদন নিয়ে যে পরিসংখ্যান দেয়, সেটাও একটু যাচাই করে দেখা দরকার।’

রমজানেও কয়েক দফা বেড়েছে চালের দাম। মৌসুমের শুরুতে যে চাল বিক্রি হয়েছিল ৬২-৬৪ টাকা কেজি, সেই চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮১ টাকা দরে।

কুষ্টিয়ার খুচরা বাজারে মিনিকেট ৮৪-৮৬ টাকা কেজি, কাজললতা ৭৬ টাকা এবং মোটা আঠাশ ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কুষ্টিয়ার বাজারে সব ধরনের চালে কেজিপ্রতি ৩-৫ টাকা দাম বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মিনিকেট চালের দাম। কেজিতে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

এদিকে চালের এই বাড়তি দামের কারণ জানতে সোমবার দুপুরে খাজানগরের মোকামে অভিযান চালান কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পার্থ প্রতীম শীল। অভিযানে অনুমোদনের তুলনায় ধানের অতিরিক্ত মজুত ও চালের বস্তায় ওজন কম দেওয়ায় দুটি রাইস মিলকে জরিমানা করা হয়। ইউএনও ছাড়াও অভিযানে অংশ নেন কৃষি বিপণন ও ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুন:

চাল আমদানির সময় বাড়লো

খাজানগরের পলাশ রাইস মিলে অভিযান শেষে পার্থ প্রতীম শীল বলেন, এই মিলের লাইসেন্স যতটুকু পারমিট করে তার চেয়ে অতিরিক্ত মজুত রয়েছে। আমরা সেগুলো বিধান অনুযায়ী তিনদিনের মধ্যে ডিসপোজাল করার নির্দেশ দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, অন্যান্য মিলগুলো পরীক্ষা করে দেখেছি উৎপাদনের তারিখ ও নিট ওজন বস্তার গায়ে লেখা নেই। লিগ্যাল নোটিশ দেওয়ার পাশাপাশি তাদেরও সতর্কতামূলক জরিমানা করা হয়েছে। বাড়তি দামে কেউ যাতে চাল বিক্রি করতে না পারেন, সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

আল-মামুন সাগর/এসআর/এমএস