বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যার মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে তার পরিবার। বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ে ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ।
Advertisement
এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন আবরার ফাহাদের ভাই আবরার ফাইয়াজ। তখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আবরারের বাবা। তিনি বলেন, আবরার ফাহাদের স্মৃতির কথা কী আর বলব, অনেক স্মৃতিতো আছে। পরে এক সময় বলবোনি।
বুয়েট ও অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আর যেন কোনো বাবা-মায়ের বুক এমনভাবে খালি না হয় এমন আশা প্রকাশ করেন তিনি। কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন আবরারের বাবা।
আবরার ফাহাদের বাবা বলেন, বাবা-মা তাদের সন্তানদের পাঠায় শিক্ষার জন্যে। কিন্তু তারা সঙ্গদোষে বা খারাপ রাজনীতির কারণে বিপথে চলে যায়। কোনো বাবা-মাই চান না তার সন্তান খারাপ হোক।
Advertisement
রোববার (১৬ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আসামিদের (ডেথ রেফারেন্স) মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন এবং আপিল খারিজ করে এই রায় দেন।
রায় ঘোষণার পর হাইকোর্টের সামনে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, আদালতের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। রায় যাতে অতিদ্রুত কার্যকর হয় সেটাই এখন আমাদের চাওয়া।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে র্যাগিং আছে, সেটার পরিবর্তন চাই। ছাত্ররা যাতে ভালোভাবে বসবাস করতে পারে এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে আমরা সবার কাছে আবেদন জানাই। বাবা-মা অনেক কষ্ট করে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার জন্য পাঠান। তারা যদি পড়ালেখা বাদ দিয়ে অন্য কিছুতে জড়ায় তাতে বাবা-মা কষ্ট পান। তাই শিক্ষার্থীদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়ানো উচিত নয়।
প্রতিবাদী তারুণ্য ক্যাটাগরিতে এবার আবরার ফাহাদকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) দেওয়া হচ্ছে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে বরকত উল্লাহ বলেন, তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত দিয়েছে এতে আমরা গর্বিত। এজন্য সরকারের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
Advertisement
এ সময় আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ বলেন, আজকে যে রায়টি হয়েছে, এতে আমরা সন্তুষ্ট। হাইকোর্ট থেকে এত দ্রুত একটি রায় আসবে এটি আমরা এক বছর আগেও চিন্তা করিনি। এটা হয়তো পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সম্ভব হয়েছে। এখনো হয়তো অনেকগুলো স্টেপ বাকি আছে। সেগুলো যাতে দ্রুত সম্পন্ন হয় সেটা আমাদের চাওয়া থাকবে। সাড়ে পাঁচ বছর হয়ে যাচ্ছে আমরা এটা নিয়ে আছি। আরও কতদিন লাগবে আমরা জানি না। এতে একটা দৃষ্টান্ত উপস্থাপিত হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিণতি আর কারো না হয়। এজন্য আমাদের চাওয়া যত দ্রুত সম্ভব বাকি স্টেপগুলো সম্পন্ন হোক।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতিতে পরিবর্তন আসছে কি না এটা যারা রাজনীতি করেন তারা বলতে পারবেন। আমরা সবসময় চাই, যে পরিণতি আবরার ফাহাদের হয়েছে তা যাতে আর কোনো শিক্ষার্থীর না হয়।
আবরার ফাইয়াজ বলেন, একজন আসামির কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়াটা আমাদের জন্য হতাশার। কারণ, আমরা অপেক্ষায় আছি কবে এদের রায় কার্যকর হবে। তার মধ্যে আমরা জানতে পারছি, একজন পালিয়ে চলে গেছে। এটা কেন লুকিয়ে রাখা হলো, এটার কোনো পরিষ্কার উত্তর আমরা পাইনি।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অসম চুক্তি এবং পানি আগ্রাসন নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের জেরে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নৃশংস কায়দায় পিটিয়ে হত্যা করে সংগঠনটির ক্যাডাররা। পরে রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। দায়ের হয় হত্যা মামলা। ওই মামলায় সব মিলিয়ে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপর ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। এরমধ্যে ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। এছাড়া পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এফএইচ/এএমএ/জিকেএস