দেশজুড়ে

ময়মনসিংহে এবার যেমন হবে ঈদযাত্রা

ময়মনসিংহে প্রতিবছর ঈদের কয়েকদিন আগে কয়েকটি পয়েন্টে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন ঘরমুখো যাত্রীরা। তবে গত দুই বছর ঈদে অনেকটাই ভোগান্তিহীন ভাবে বাড়ি ফিরতে পেরেছে মানুষ। প্রশাসনের কঠোর নির্দেশনা আর তদারকির কারণে এটি সম্ভব হয়েছে।

Advertisement

তবে এবার কয়েকটি পয়েন্টের মধ্যে শহরে প্রবেশের পর পাটগুদাম ব্রিজ মোড়টি ভোগান্তির মাত্রা বাড়াবে বলে ধারণা করছেন অনেকে। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভোগান্তিহীন ঈদযাত্রা উপহার দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হবে।

শহরে প্রবেশের মূল সড়কে (পাটগুদাম এলাকা) ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত হয়েছে পাটগুদাম ব্রিজটি। কাগজে কলমে এটির নাম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু হলেও স্থানীয়দের কাছে এটি শম্ভুগঞ্জ বা পাটগুদাম ব্রিজ নামেই পরিচিত। এই সেতু পারাপার হয়ে বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার বাসিন্দারা ঢাকায় আসা-যাওয়া করেন। ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়ে কয়েকগুণ বেশি। বেশিরভাগ যানবাহন ঢাকা থেকে ছেড়ে এসে নগরীর মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ড ও পাটগুদাম বাস টার্মিনালে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। আবার অনেক বাস সরাসরি এই সেতু পারাপার হয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিয়ে গেলেও অনেকগুলো পাটগুদাম বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়। তবে ঈদে আগে গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধিসহ নানাবিধ কারণে সড়কের কয়েক কিলোমিটার অংশে যানজটের সৃষ্টি হয়। রমজানে রোজা রেখে গরমের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ যানজটের কবলে পড়ায় অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে যাত্রীরা।

আরও পড়ুন-

Advertisement

এবার উত্তরের ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির ঈদযাত্রায় আশ্বস্তের মাঝেও আশঙ্কায় যানবাহন চালকরা

সংশ্লিষ্টরা জানান, এবারের ঈদে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকা বাসস্ট্যান্ড, ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড, চুরখাই, দিগারকান্দা বাইপাস ও শম্ভুগঞ্জ মোড়সহ ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কে যানজট সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ময়মনসিংহ শহরের পাটগুদাম বাসটার্মিনাল এলাকাসহ আশপাশেও যানজটের মাত্রা বাড়তে পারে। এজন্য বিভাগীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশসহ সিটি করপোরেশন বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করবে। যানজট নিয়ন্ত্রণে রাখতে সড়কে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হবে।

স্থানীয়রা জানান, সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ দখল করে বাজার বসেছে, নির্মাণসামগ্রী সড়কের পাশে ফেলে রাখা হয়েছে। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে এগুলো ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে উচ্ছেদ করা প্রয়োজন। এছাড়া নগরীর পাটগুদাম ব্রিজ মোড়ে সারা বছর যানজট লেগে থাকে। প্রতিদিন ব্রহ্মপুত্রের ওপর সরু পাটগুদাম সেতু পেরিয়ে আশপাশের জেলা শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জে শত শত যানবাহন চলাচল করে। ঈদের আগে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায় কয়েক গুণ। ঈদে ময়মনসিংহ নগরীর ওপর দিয়ে কয়েকটি জেলার গাড়ি যাওয়ায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এরমধ্যে চালকরা পাটগুদাম ব্রিজ মোড়সহ বিভিন্ন মোড়ে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করেন। এমনটি চলতে থাকলে ঈদের আগে যানজট ভয়াবহ মাত্রা ধারণ করবে। এতে বাড়বে ছিনতাইকারী ও চোরের উৎপাত।

নগরীর পাটগুদাম এলাকার বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, স্বস্তির ঈদযাত্রা উপহার দিতে হলে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। প্রত্যেকটি সড়ক থেকে চাঁদাবাজি পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে চালকদের নিয়ম মেনে গাড়ি চালাতে বাধ্য করতে হবে। তাহলে এবারের ঈদযাত্রা হবে আরামদায়ক।

Advertisement

আরও পড়ুন-

ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মহাখালীতে পরিবহন মালিকদের সভা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যেসব স্থানে যানজটের শঙ্কা

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে নিয়মিত বাস চালান আব্দুল হাই। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকা বাসস্ট্যান্ড, ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড, চুরখাই ও দিগারকান্দা বাইপাস এলাকায় যানজটের মাত্রা বাড়তে পারে। এজন্য এসব পয়েন্টে ট্রাকিক ও হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতা থাকবে হবে। কোনো অবস্থাতেই মোড়ে মোড়ে গাড়ি থামতে দেওয়া ঠিক হবে না।

ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কে নিয়মিত বাস চালান জাফর আলী। তিনি বলেন, ঈদের আগে পাটগুদাম ব্রিজ মোড় এলাকায় তীব্র যানজট থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশাসন এই মোড়ে গাড়ি থামানো বন্ধ করতে পারলে যানজট অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।

জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি মো. আলমগীর মাহমুদ আলম বলেন, যেখানে-সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা না করতে চালকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যানজটমুক্ত ঈদযাত্রা উপহার দিতে আমরা চেষ্টা করবো।

ময়মনসিংহের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (প্রশাসন) আবু নাছের মো. জহির বলেন, ঈদে ঢাকা, গাজীপুর ও ময়মনসিংহের ভালুকায় কর্মরত গার্মেন্টস শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণির-পেশার অগণিত মানুষ যাতায়াত করেন। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে গাড়িগুলো যত্রতত্র অবস্থান করাসহ নানাবিধ কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে ঈদে যানজট নিরসনে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। পাটগুদাম ব্রিজ মোড়সহ অন্য মোড়গুলোতে গাড়িকে যত্রতত্র অবস্থান করতে দেওয়া হবে না।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে পুলিশের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। চোর ও ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা হবে। তবে ঘরমুখো যাত্রীদেরও সচেতন থাকতে হবে।

এফএ/এমএস