রমজান ও ইদুল ফিতরের সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা। সম্পদশালী মুসলমানদের পাশাপাশি দরিদ্র মুসলামানরাও যেন ইদের আনন্দে শামিল হতে পারে, সে জন্য আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতাআলা ইদুল ফিতরের দিন ফিতরা আদায় আবশ্যক করেছেন।
Advertisement
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রোজাদারের অনৰ্থক কথাবার্তা ও অশালীন আচরণের কাফফারাস্বরূপ এবং গরিব-মিসকিনদের আহারের সংস্থান করার জন্য ফিতরা ফরজ করে দিয়েছেন। যে ব্যক্তি ইদের নামাজের আগে তা পরিশোধ করে আল্লাহর কাছে তা গ্ৰহণীয় দান। আর যে ব্যক্তি ইদের নামাজের পর তা পরিশোধ করে, তাও দানসমূহের অন্তর্ভুক্ত একটি দান। (সুনানে আবু দাউদ: ৬৩০)
পুরুষরা যাদের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করবেনইদুল ফিতরের দিন সকালে যে পুরুষ নেসাব পরিমাণ সম্পদের (সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা সমমূল্যের নগদ অর্থ ও ব্যবসাপণ্য) মালিক থাকে, তার ওপর ওয়াজিব হয় তার নিজের পক্ষ থেকে এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা।
ইদুল ফিতরের দিন সূর্যোদয়ের সময় ফিতরা ওয়াজিব হয়। তাই ইদের দিন সূর্যোদয়ের আগে কোনো শিশুর জন্ম হলে তার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব হবে, ইদের দিন সূর্যোদয়ের পর কোনো শিশুর জন্ম হলে তার পক্ষ থেকে ফিতরা দিতে হবে না।
Advertisement
অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়ে সম্পদশালী হলে তার ফিতরা তার সম্পদ থেকে আদায় করাই নিয়ম। তবে বাবা চাইলে নিজের সম্পদ থেকেও তা আদায় করে দিতে পারেন।
বাবা-মা, স্ত্রী ও প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব নয়। তারা নিজেরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তাদের ওপর ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব হবে এবং তা আদায় করার দায়িত্বও তাদের।
নিজের স্ত্রী ও প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করে দিলে তা আদায় হয়ে যাবে। বিষয়টি প্রচলিত হওয়ায় তাদের থেকে অনুমতি নিয়ে নেওয়া জরুরি নয়। তবে আদায়ের আগে তাদেরকে বলে নেওয়া ভালো।
নারীরা শুধু নিজের ফিতরা আদায় করবেনইদুল ফিতরের দিন সকালে যে নারী নেসাব পরিমাণ সম্পদের (সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা সমমূল্যের নগদ অর্থ ও ব্যবসাপণ্য) মালিক থাকে, তাহলে তার ওপর তার নিজের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। নিজের অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা তার ওপর ওয়াজিব নয়। নিজের স্বামী বা প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করাও তার ওপর ওয়াজিব নয়।
Advertisement
সম্পদশালী বিবাহিতা নারীর পক্ষ থেকে তার স্বামী যদি ফিতরা আদায় করে দেন, তাহলে তা আদায় হয়ে যাবে। স্বামী আদায় না করলে তিনি নিজে আদায় করবেন।
নাতি-নাতনিদের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করতে হবে?সম্পদশালী দাদার ওপর নাতি-নাতনিদের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব নয়। বাবা মারা যাওয়ার কারণে বা সম্পদশালী না হওয়ার কারণে নাতি-নাতনিদের ভরণপোষণের দায়িত্ব যদি দাদার ওপর থাকে, তাহলেও তাদের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা তার জন্য জরুরি নয়।
কেউ যদি কোনো এতিম শিশুর প্রতিপালনের দায়িত্ব নেন, তার ওপর ওই শিশুর পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব নয়। ওই শিশু সম্পদশালী হলে তিনি তার সম্পদ থেকে তার ফিতরা আদায় করে দেবেন।
এ বছর ফিতরা কত টাকা?হাদিসে নবিজি (সা.) উন্নত মানের খেজুর, মধ্যম মানের খেজুর, কিসমিস, পনির ও গম -এই পাঁচটি খাদ্যদ্রব্যের যে কোনো একটির মাধ্যমে ফিতরা আদায় করার অনুমতি দিয়েছেন। এগুলোর মূল্য অনুযায়ী ফিতরার সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারিত হয়। এ বছর (রমজান ১৪৪৬ হিজরি মোতাবেক ২০২৫ খৃষ্টাব্দ) বাংলাদেশ সরকারের ফিতরা নির্ধারণ কমিটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশে ফিতরার পরিমাণ জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১১০ টাকা ও সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ফিতরা কখন আদায় করবেন?ইদের দিন সকালে ইদগাহে যাওয়ার আগে ফিতরা আদায় করা সর্বোত্তম। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইদের নামাজের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার আগে ফিতরা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। (সহিহ বুখারি: ১৫০৯)
সাহাবায়ে কেরাম ইদের আগে ফিতরা আদায় করেছেন এ রকম দৃষ্টান্তও পাওয়া যায়। নাফে (রহ.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) ইদের এক দুদিন আগেই ফিতরা আদায় করে দিতেন। (সুনানে আবু দাউদ: ১৬০৬)
ইসলামি আইনবিশারদগণের নির্ভরযোগ্য মত অনুযায়ী ইদের আগে রমজানের শুরু থেকে বা রমজানের আগেও ফিতরা আদায় করা জায়েজ। তাই রমজানের আগেও কেউ যদি ফিতরার নিয়তে কিছু দান করলে তা ফিতরা গণ্য হবে। তবে ফিতরা ইদের দিন বা রমজানের শেষ দিকে আদায় করাই উত্তম।
ওএফএফ/এমএস