ভঙ্গুর রাষ্ট্রব্যবস্থায় নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নিয়ে শত প্রশ্ন রেখে গেলো মাগুরার সেই ছোট্ট শিশুটি। বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে গত ৫ মার্চ রাতে যৌন নিপীড়নের শিকার শিশুটি কী অপরাধ করেছিল যে এভাবেই তাকে চলে যেতে হবে। গেলো সপ্তাহ ধরে সারাদেশের মানুষের আলোচনায় ছিল ছোট্ট সেই শিশু। দেশজুড়ে হয়েছে প্রতিবাদ-সমাবেশ। তার মৃত্যুতে আত্মীয়-পরিজনের পাশাপাশি কেঁদেছে পুরো দেশ। শিশুটির মৃত্যুর পর নারী ও শিশুর নিরাপত্তার প্রশ্ন আবারও সামনে এসেছে।
Advertisement
গত ৮ মার্চ শিশুটিকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। সেখানকার সর্বাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রয়োগ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি শিশুটিকে। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সকালে তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছিল, দুবার স্থিতিশীল করা গেলেও তৃতীয়বার আর হৃদস্পন্দন ফিরে আসেনি তার।
আরও পড়ুন:
হেলিকপ্টারে মাগুরার পথে শিশুটির নিথর দেহ হঠাৎ ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে কেন? কী করছে পুলিশ? ধর্ষণের বিচার দাবিতে ঢাবিতে ছাত্র-জনতার মশাল মিছিলবৃহস্পতিবার বিকেলে শিশুটি মাগুরায় তার নিজ গ্রামে ফিরেছে, তবে প্রাণহীন হয়ে। শিশুটির এমন মৃত্যু মানতে পারছে না কেউই। প্রশ্ন উঠছে আমাদের নারী ও শিশুরা আসলে নিরাপদ কোথায়?
Advertisement
‘আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা যে কতটা ভঙ্গুর তার একটা উদাহরণ শিশুটির মৃত্যু’, বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ আয়োজিত ‘মাগুরায় শিশু ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদ এবং ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল’ এ অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন:
শিশুটির দাফন সম্পন্ন, ধর্ষণে অভিযুক্তের বাড়িতে জনতার আগুন মাগুরায় শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিচার ৭ দিনের মধ্যে শুরুমাগুরায় শিশু ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী নিশা আক্তার বলছিলেন, ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন করা হয়, অথচ এ দেশে কি না নারীরা অরক্ষিত। যেখানে আট বছরের শিশুকে ধর্ষণ করা হচ্ছে এবং ধর্ষকের কোনো শাস্তি হচ্ছে না। রাতে আমরা টিউশন করে ফিরতে গেলে রিকশাওয়ালা আমাদের দেখে ইভটিজিং করে, বাসে আমরা হয়রানির শিকার হই, আমরা আসলে কোথাও নিরাপদ না। আমরা চাই নারীরা জেগে উঠুক এবং আমাদের ভাইয়েরা আমাদের সাহায্য করবে যাতে আমরা অনিরাপদ বোধ না করি এবং আমরা চাই ধর্ষকের একমাত্র শাস্তি হোক মৃত্যুদণ্ড।’
আরও পড়ুন:
Advertisement
শিশুটির নির্যাতনের ঘটনার পর ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কিছু আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন বলে জানান আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তবে পদক্ষেপ কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন ধর্ষণের প্রতিবাদে রাস্তায় নামা আন্দোলনকারীরা।
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হলে ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন কমবে বলে মতপ্রকাশ করেন নারী অধিকার আন্দোলনের সভানেত্রী মমতাজ মান্নান। তিনি বলেন, একসময় বাংলাদেশে অ্যাসিড নিক্ষেপের প্রবণতা ছিল। কিন্তু দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের মাধ্যমে তা কমানো গেছে। ধর্ষকদের জনসম্মুখে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি।
এসএনআর/এমএমএআর/এমএস