শুক্রবার সাদা পোশাক আর হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে এক লাখ রোহিঙ্গা সমবেত হন কক্সবাজারের উখিয়া শরণার্থী শিবিরে। একটিতে নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার কথা, গণহত্যা বন্ধের দাবি তো আরেকটিতে জাতিগত মর্যাদার প্রত্যাশা। আর রোহিঙ্গা মুসলিমদের এসব দাবির কথা শুনতে এবং সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিতে স্বয়ং ক্যাম্পে হাজির জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
Advertisement
বাংলাদেশে চার দিনের সফরে আসার একদিন পরই শুক্রবার (১৪ মার্চ) কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সঙ্গে ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে সলিডারিটি ইফতারে অংশ নেন তারা।
বলতে গেলে সারাদিনই রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। দিনের প্রথমভাগে ক্যাম্প ঘুরে রোহিঙ্গাদের খোঁজ-খবর নেন তিনি। এসময় তরুণদের সঙ্গে কথা বলেন জাতিসংঘ মহাসচিব। খোঁজ-খবর নেন নারী ও শিশুদেরও। এরপর বিকেলে এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে সলিডারিটি ইফতারে অংশ নেন।
জাতিসংঘ মহাসচিবকে কাছে পেয়ে আবেগে আপ্লুত রোহিঙ্গারা। নিজ দেশে মর্যাদার সঙ্গে ফিরে যেতে চান তারা, চান নিরাপদ পরিবেশ।
Advertisement
আরও পড়ুন:
এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করলেন ড. ইউনূস ও জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা কমে যাওয়ায় জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্বেগ ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের দুঃখ গাঁথা শুনছেন জাতিসংঘ মহাসচিবরোহিঙ্গাদের আশার বাণী শোনান জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে দুটি স্পষ্ট বার্তা পেয়েছেন তিনি। প্রথমটি হচ্ছে, আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়। ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই মিয়ানমারে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের অধিকার নিশ্চিত করে কোনো ধরনের বৈষম্যের শিকার তারা যেন না হয়, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘দ্বিতীয়ত, রোহিঙ্গারা আরও ভালো পরিবেশ চায় ক্যাম্পে। দুর্ভাগ্যবশত যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য অনেক দেশ সম্প্রতি নাটকীয়ভাবে মানবিক সহায়তা কমিয়ে দিয়েছে। এ কারণে আমাদের মানবিক সহায়তার মধ্যে খাবারের রেশন কমাতে হয়েছে। তিনি প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে বলেন, আমি আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। যত দেশে সম্ভব আমি কথা বলবো, যাতে করে ফান্ড (তহবিল) পাওয়া যায় এবং এর থেকে আরও খারাপ পরিস্থিতি না আসে।’
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ভুলে যাবে, এমনটি প্রত্যাশা করেন না উল্লেখ করে গুতেরেস বলেন, ‘আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জোরালো আওয়াজ তুলবো। কেননা সম্মানের সঙ্গে এখানে বসবাসের জন্য এই সম্প্রদায়ের মানবিক সহায়তা অত্যন্ত জরুরি।’
Advertisement
আরও পড়ুন:
প্রত্যাবাসনের আশায় বুক বাঁধছেন রোহিঙ্গারামিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ২০১৭ সালে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায় দেশটির সেনাবাহিনী। হত্যা করে নারী, শিশুসহ বহু রোহিঙ্গা মুসলিমকে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো যেটিকে এথনিক ক্লিনজিং বা জাতিগত নিধন বলে অ্যাখ্যা দেয়। সে বছর ২৫ আগস্ট রাতে প্রাণ বাঁচাতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম নাফ নদ পার হয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশ করে। আশ্রয় নেয় বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে। টানা কয়েক মাসে বাংলাদেশে প্রবেশ করে সাড়ে মাত লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম। নারী-শিশুসহ এখন প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে ৮ লাখ আসে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। দীর্ঘ ৮ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। বরং গত কয়েক মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই নিয়েছেন আর ৬০ থেকে ৭০ হাজার।
বারবার বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরানোর চেষ্টা করলেও সাড়া নেই মিয়ানমার সরকারের। নিজ দেশে ফিরতে না পেরে অসহায় রোহিঙ্গা মুসলিমরা।
এসএনআর/এমএমএআর/এমএস