প্রবাস

দুই মাসে ৯০০ যাত্রীকে বিমানবন্দর থেকে ফেরত দিয়েছে মালয়েশিয়া

ভিজিট ভিসার ৯০০ যাত্রীকে বিমানবন্দর থেকেই ফিরিয়ে দিয়েছে মালয়েশিয়া। চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাসে সীমান্ত সুরক্ষা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা মোট ২ হাজার ৬৫৪ বিদেশিকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং কাগজপত্র পরীক্ষার পর তাদের মধ্যে থেকে প্রকৃত পর্যটক নন এমন ৯০০ জনকে দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

Advertisement

সন্দেহজনকদের মধ্যে শতকরা হিসেবে ৩৪ শতাংশ যাত্রীকে বিমানবন্দর থেকেই আটক অথবা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে আর এই যাত্রীদের মধ্যে বড় সংখ্যক হচ্ছে বাংলাদেশি যাদের চাকরির কথা বলে, ভ্রমণ ভিসা বা ভিজিট ভিসায় মালয়েশিয়ায় পাঠাতে চেয়েছিল দুই দেশের চক্র।

এ বিষয়ে শ্রম অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অবৈধ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশি ও মালয়েশিয়ার অসাধু ব্যক্তি বা অপরাধ চক্র জড়িত। এক্ষেত্রে দুই দেশের বিমানবন্দরের দায়িত্বরতদের একটি গ্রুপও জড়িত বলে বিভিন্ন সময় প্রমাণও মিলেছে। বিশেষ করে মালয়েশিয়া সরকার সেদেশের বিমানবন্দরে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে সরকারি কর্মচারীদের জড়িত থাকার প্রমাণ পায় এবং তাদের গ্রেফতারের উদাহরণও আছে। যদিও বাংলাদেশে সেই অর্থে দায়িত্বরত অসাধুদের বিষয়ে খুব একটা পদক্ষেপ নেই।

বিশ্লেষকরা বলছেন, একইসঙ্গে কর্মীদেরও সচেতন হতে হবে। জানতে হবে নিয়ম-কানুনও। শ্রমবাজার বন্ধ না কি খোলা আছে সেই তথ্য জানা খুব সহজ। তারপরও চক্রের খপ্পরে পড়ে কর্মীরাও অবৈধ পথে পা বাড়ান আর শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীরাই হন।

Advertisement

অবৈধ উপায় বা ভুয়া পরিচয়ে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা করা বাংলাদেশিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ৪৫ জনকে ফেরত পাঠায় দেশটির বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করা ৬৮ জন বিদেশিকে আটক করে মালয়েশিয়ার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা সংস্থা (একেপিএস)। এদের মধ্যে ৪৫ জন বাংলাদেশি।

একেপিএস বিবৃতিতে জানায়, আটকরা মূলত পর্যটক হিসেবে প্রবেশের দাবি করলেও তারা ইমিগ্রেশন কাউন্টারের দিকে এগোননি। বরং বিমানবন্দরের খাবারের দোকান ও অন্যান্য জায়গায় ঘোরাফেরা করছিলেন এবং বিশেষ কারো জন্য অপেক্ষা করছিলেন বলে সন্দেহ করা হয়।

আরও পড়ুনমালয়েশিয়ায় বিমানবন্দরে ৯ বাংলাদেশি গ্রেফতারফাইভ জি স্পিডে তারাবি পড়া থেকে বেরিয়ে আসতে হবে: আজহারীএকটি নতুন পৃথিবী গড়ার প্রত্যাশা

পাকিস্তানি ১৬ জন, বাংলাদেশি ৪৫ জন ও ভারতের সাতজনকে কেএলআইএ ইমিগ্রেশন অপারেশন অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে তাদের মালয়েশিয়ায় প্রবেশের অনুমতি না দিয়ে ‘নোটিশ টু লিভ’ (এনটিএল) দিয়ে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

Advertisement

২৪ জানুয়ারি, ভুয়া পরিচয়ে ভিন্ন কাজের উদ্দেশ্যে মালয়েশিয়ায় প্রবেশকালে কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক হয় ১২ বাংলাদেশি। তাদের আটক করে কেএলআইয়ের ইমিগ্রেশন পুলিশ।

পুলিশ জানায়, ১২ বাংলাদেশি মালয়েশিয়ান ফিশারিজ অ্যাকাডেমির প্রশিক্ষণার্থী সেজে দেশটিতে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন। তারা একটি আমন্ত্রণপত্র প্রদর্শন করে। যাচাই করে দেখা যায় আমন্ত্রণপত্রটি ভুয়া। এরপর তাদের আটক করা হয়।

এ ব্যাপারে মালয়েশিয়ান ফিশারিজ অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে ২৫ জানুয়ারি একটি বিবৃতি বলা হয়েছে, বাংলাদেশি কোনো ব্যক্তিকে মালয়েশিয়ান ফিশারিজ একাডেমিতে প্রশিক্ষণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তারা ইমিগ্রেশন পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে মালয়েশিয়ান ফিশারিজ অ্যাকাডেমির লোগো সম্বলিত পোশাক পরিধান করেছে।

২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট- কেএলআইএ টার্মিনাল-১ থেকে সন্দেহজনক অবস্থান ও ঘোরাফেরা করার সময় বাংলাদেশিসহ একদল বিদেশিকে আটক করে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

বিমানবন্দরের অপারেশন কন্ট্রোলের ডেপুটি চিফ সুরেশ নাদারজাহ জানান, এই দলটি বিমান থেকে নেমে সরাসরি ইমিগ্রেশন কাউন্টারে না গিয়ে ইমিগ্রেশন পরিদর্শন এড়াতে এবং ‘কাউন্টার সেটিং’ সিন্ডিকেট সদস্যদের সংকেতের জন্য অপেক্ষা করতে যায়। সেখানে ২৪ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে বিমানবন্দরের ভেতরে থাকা ফাস্ট ফুড দোকানে এবং যাত্রীদের বসার স্থানে সময় পার করছিলেন। কেউ কেউ আবার দোকান থেকে পানীয় কিনে দুই দিন ধরে অবস্থান করছিলেন।

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বিমানবন্দর ‘কাউন্টার সেটিং’ বা ‘বিশেষ কাউন্টার লেন’ এর পদ্ধতি ব্যবহার করে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকার সন্দেহে ইমিগ্রেশন বিভাগের ৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এছাড়া এসপিআরএম এই ‘কাউন্টার সেটিং’ এ যুক্ত থাকায় সিন্ডিকেটের আরও ১০ জন এজেন্টকেও গ্রেফতার করা হয়।

এমআরএম/জেআইএম