ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় এক পুলিশ সদস্যের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে তিন দিন ধরে অবস্থান করছেন নার্সিং কলেজের এক ছাত্রী (২১)।
Advertisement
রোববার (৯ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ওই ছাত্রী পুলিশ সদস্যের চাচার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন।
ওই পুলিশ সদস্যের নাম মোখলেসুর রহমান। তিনি উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের আলতাফ উদ্দিনের ছেলে। বর্তমানে তিনি টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনসে কনস্টেবল পদে কর্মরত।
মেয়েটি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার গৌরিগ্রাম এলাকার বাসিন্দা ও ঢাকার সাভারে অবস্থিত প্রিন্স নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী। তিনি সাভারের আশুলিয়া থানাধীন নবীনগর জালালাবাদ এলাকায় মেসে থেকে পড়ালেখা করেন।
Advertisement
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী জানান, ৩ বছর আগে মোখলেসুর রহমানের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় তার। এরপর কথাবার্তার একপর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মোখলেসুর তখন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরা পশ্চিম থানায় কর্মরত ছিলেন। বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন মোখলেসুর। কিন্তু সম্প্রতি তিনি বিয়ের জন্য চাপ দিলে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান মোখলেসুর। এরপর তার সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেন। এমতাবস্থায় বিয়ের দাবিতে পুলিশ সদস্যের বাড়ি ফুলবাড়িয়ায় চলে আসেন ওই শিক্ষার্থী।
ওই শিক্ষার্থী জাগো নিউজকে বলেন, বিয়ের আশ্বাস দিয়ে কয়েক বছর শারীরিক সম্পর্ক করেছে মোখলেসুর। তার সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক পরিবারও জেনে যায়। সম্প্রতি আমি তাকে আমাকে বিয়ের জন্য বলি। এসময় সে আমার কাছে ১০ লাখ টাকা চায়। টাকা না দিলে বিয়ে করবে না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেয়। আমিও টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। সে আমার সবকিছু শেষ করে সটকে পড়েছে।
তিনি বলেন, বিয়ের দাবিতে শুক্রবার (৭ মার্চ) বিকেলে ফুলবাড়িয়ায় মোখলেসুরের বাড়ির পাশে আসতেই তার ভাইসহ স্বজনরা আমাকে ঘরে প্রবেশ করতে দেয়নি। তার বাড়ির পাশে চাচার বাড়িতে জোর করে নিয়ে যায়। আমি সেখানেই বিয়ের দাবিতে অনশন করছি। আমাকে বিয়ে না করলে আমি আত্মহত্যা করবো।
তিনি বলেন, মোখলেসুরের পরিবারের লোকজন ও তার স্বজনরা আমাকে এই এলাকা থেকে তাড়িয়ে দিতে চাচ্ছে। আমি তাদের হুমকি-ধামকিতেও যাচ্ছি না। এজন্য রোববার (৯ মার্চ) রাতে তারা একটি হায়েস গাড়ি ভাড়া করে এনেছে। আমাকে এই গাড়িতে জোর করে তুলে নিয়ে আমার বাসায় নিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা করছে। সড়কে আমার কোনো ক্ষয়ক্ষতি হলে এর দায়দায়িত্বও মোখলেসুরসহ তার পরিবারকেই নিতে হবে।
Advertisement
তিনি বলেন, আমার সঙ্গে মোখলেসুরের অনেক ছবি রয়েছে। সে আমার সঙ্গে শেষবার দেখা করতে এসে মোবাইল থেকে সবকিছু ডিলিট করে দিয়েছে। তার দুইটা নম্বর থেকে আমার সঙ্গে সারাক্ষণ কথা হতো। এগুলো উল্লেখ করে গত ২৬ জানুয়ারি পুলিশ মহাপরিদর্শক ও টাঙ্গাইল পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। নম্বরগুলো ট্রেকিং করলেই আমার সঙ্গে তার সম্পর্কের প্রমাণ মিলবে।
বক্তব্য জানতে চাইলে পুলিশ সদস্য মোখলেসুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমি ওই মেয়েকে চিনি না। কখনো দেখিনি। হঠাৎ আমাদের এখানে এসে বলছে বিয়ে করতে হবে। এটি কখনোই সম্ভব না।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি ওই মেয়ে আমার বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ তুলে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। আমার কোনো শত্রু হয়ত ওই মেয়েকে দিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। তবে সেই শত্রু কে সেটা আমি চিহ্নিত করতে পারছি না।
ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রুকনুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ঘটনাটি জানতে পেরেছি। তবে ওই মেয়ে এখনো থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কামরুজ্জামান মিন্টু/এফএ/জিকেএস