মুহাম্মদ নঈম উদ্দিন
Advertisement
সৃষ্টিতে-কৃষ্টিতে অনন্য দ্বীপ মহেশখালী। সোনাদিয়া, মাতারবাড়ী-ধলঘাটা এই তিন উপদ্বীপ এবং স্বকীয় সংস্কৃতি নিয়ে পাহাড়ের সঙ্গে মিতালী করে জেগে আছে দ্বীপ মহেশখালী। ৩৮৮.৫০ বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৫ লাখ মানুষের বসবাস মহেশখালীতে। বাংলাদেশের প্রধান তিন ধর্মাবলম্বী মানুষের সহাবস্থানের অনন্য উদাহরণ একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী।
দ্বীপের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শিব চতুর্দশী পূজাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হয় আদিনাথ মেলা। প্রতি বছর ফাগুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে এই মেলা বসে মৈনাক পাহাড়ের পাদদেশে।
দেশীয় এবং নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব পালন করার পাশাপাশি আদিনাথ মেলা হয়ে উঠেছে মহেশখালীর মানুষের প্রাণের মেলা। দেশের অন্য প্রান্তে থাকলেও পলাশ-শিমুল ফুলের গাড় রং মনে করিয়ে দেয় মহেশখালীর আদিনাথ মেলার কথা। আলাদা আলাদা ধর্মীয় উপাসনালয়ে ইবাদত হলেও আদিনাথ মেলাকে কেন্দ্র করে সব ধর্মের অনুসারীরা একত্রিত হয় মেলা প্রাঙ্গণে।
Advertisement
শত বছরের পুরোনো এই মেলা হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে মেলার নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার কাজে অংশ নেন। একে অপরের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে উৎসবকে আনন্দময় করে তোলেন।
এ মেলা থেকে লোকজন রকমারি মনোহারি পণ্য ছাড়াও সারা বছরের গৃহস্থালি পণ্য কিনে থাকে। এছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান, খেলনার দোকান, খাবারের হোটেল, চিনি ও গুড়ের বিখ্যাত জিলাপির দোকান বসে মেলাকে কেন্দ্র করে। এই দ্বীপে আদিনাথ মেলার গুড়ের জিলাপির সুবাস পেতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে।
এখানে শুধু কেনাকাটা নয় চিত্ত বিনোদনের জন্য, পুতুল নাচ, নাগর দোলা, মৃত্যুকূপের আয়োজনও বেশ ব্যাপকভাবে করা হয়। মেলায় হিন্দু-মুসলিম ব্যবসায়ীরা একসঙ্গে দোকান বসান। মুসলিম ব্যবসায়ীরা যেমন মেলায় পূজার সামগ্রী ও হস্তশিল্প সামগ্রী বিক্রি করেন, তেমনি হিন্দু ব্যবসায়ীরাও মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য পোশাক, খাবারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করেন।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই মেলাকে আরও শক্তিশালী করতে প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা। মেলার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও স্থানীয় সংস্কৃতির সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। তার পাশাপাশি মহেশখালীর রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, ধর্মীয় প্রতিনিধিগন, সুশীল সমাজ ও শিক্ষিত ব্যক্তিদের সচেতন দৃষ্টি এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ, চিন্তা চেতনা এই মেলার সৌন্দর্য এবং পরিসর বৃদ্ধি করতে পারে।
Advertisement
ঐক্যের এই বন্ধন শুধু ধর্মীয় গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে আরও বিস্তৃত হোক, এটাই কাম্য।
আরও পড়ুন পানির জন্য সংগ্রাম দেশে দেশে লাশ-মাছ-যাত্রী সবই চলে একসঙ্গে, একই বাহনেলেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
কেএসকে/জিকেএস