‘প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভাবনের জনক’। এই প্রবাদকে সামনে রেখে শেওলা (কচুরিপানা) কাটা মেশিন উদ্ভাবন করে সাড়া ফেলেছেন প্রদীপ বিশ্বাস। প্রদীপ যশোরের মণিরামপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী কুচলিয়া গ্রামের মৃত প্রভাত চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে। জলাবদ্ধ ভবদহ অঞ্চলের কচুরিপানা সমস্যার সমাধান খুঁজতে গিয়েই যন্ত্রটি উদ্ভাবন করেন প্রদীপ।
Advertisement
এরইমধ্যে প্রদীপের তৈরি মেশিন গোপালগঞ্জ পাউবো (পানি উন্নয়ন বোর্ড) কিনে নিয়েছে। এছাড়া দেশের নানা প্রান্ত থেকে যোগাযোগ করে মেশিন ভাড়া, ক্রয় ও তৈরির অর্ডার পাচ্ছেন তিনি।
মণিরামপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে সুন্দলী বাজারে প্রদীপ বিশ্বাসের নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘কুচলিয়া পিকেবি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস’। উদ্ভাবক প্রদীপ বিশ্বাসের বাবা মৃত প্রভাত চন্দ্র বিশ্বাস ছিলেন অভয়নগর উপজেলার একটি জুট মিলের নামকরা মেকানিক। তার মেধার কারণে ‘পণ্ডিত’ নামেই বেশি পরিচিতি ছিলেন। বাবার হাত ধরেই এই পথে আসেন প্রদীপ। পড়ালেখার গণ্ডি বেশি দূর আগায়নি। সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন বাবা প্রভাত চন্দ্র বিশ্বাসের হাত ধরে এই মেকানিক লাইনে আসেন।
মেশিনের উদ্ভাবক প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, নাব্যতা হারিয়ে এ অঞ্চলের খাল-বিল ও নদীতে প্রচুর শেওলা (কচুরিপানা) জন্মেছে। যা সারা বছরই থাকে। এতে করে খাল-বিল ও নদীতে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। মূলত এই শেওলা থেকে পরিত্রাণের উপায় বের করার চিন্তা থেকে তিনি মেশিন আবিষ্কারে নেমে পড়েন।
Advertisement
তিনি জানান, দুই বছর আগে ২২ হর্স-পাওয়ারের ইঞ্জিন, অ্যাঙ্গেল, পাত, কাঠ, চেইন, পেনিয়াম, গিয়ারবক্স, প্লেনসিড ও ১৯টি বিচালি কাটা ছুরি দিয়ে মেশিন বানালেও ঘন শেওলা কাটতে গেলেই মেশিন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ডিঙি নৌকা চালাতে ১১ হর্স-পাওয়ার ও শেওলা কাটতে ২২ হর্স-পাওয়ারের পৃথক দুইটি ইঞ্জিনসহ ৯টি ছুরি পাতের মধ্যে বিশেষ কায়দায় সেট করে মেশিনটি বানানো হয়। প্রায় তিন লাখ টাকা ব্যয় করে মাস খানেক কাজ করে তৈরিকৃত মেশিন শেওলা কাটার উপযোগী হয়।
তিনি আরও জানান, ডিঙি নৌকার ওপর বিশেষ কায়দায় ইঞ্জিনসহ অন্যান্য উপকরণ বসিয়ে শেওলা কাটা (কচুরিপানা) স্থাপন করা হয়। এরপর কচুরিপানার মধ্যে দিয়েই নৌকাটি চালাতে হয়। মেশিনের সাহায্যে ঘন-লম্বাকৃতির শেওলা (কচুরিপানা) কেটে দুই দিকে পড়তে থাকে। কেটে ফাঁকা হয়ে যাওয়া কচুরিপানার ভিতর দিয়ে বয়ে চলে ডিঙি নৌকা।
কেটে ফেলা শেওলা দিয়ে জৈব সার তৈরি সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। এরইমধ্যে তার তৈরিকৃত মেশিন গোপালগঞ্জ পাউবো (পানি উন্নয়ন বোর্ড) কিনে নিয়ে গেছে। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ ধরনের উন্নত মানের মেশিন তৈরি সম্ভব বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না জানান, প্রদীপ বিশ্বাসের কচুরিপানা কাটা মেশিন সম্পর্কে তিনি অবহিত হয়েছেন। দেশীয় প্রযুক্তির এই উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে তিনি উদ্যোগ গ্রহণ করছেন।
Advertisement
এফএ/জিকেএস