রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার শিশুরা এখন আক্রান্ত হচ্ছে রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস বা আরএসভি ভাইরাসে। এটি মূলত শীতের শেষে বসন্তের আগমনে অর্থাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ঘটছে। তাছাড়া বর্তমানে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে দেখা মিলছে ফুসফুসের ছোট শ্বাসনালীতে প্রদাহ এবং শ্বাসকষ্টসহ নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের।
Advertisement
চিকিৎসাবিদরা বলছেন, আরএসভি ভাইরাসঘটিত রোগের মাধ্যমে শিশুর সর্দি, ক্ষুধা হ্রাস, কাশি, হাঁচি ও জ্বর হতে পারে। আবার স্ট্রিট ফুডের প্রতি ভালোবাসাও শিশুর অন্যান্য রোগের জন্ম দিচ্ছে।
সম্প্রতি রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে এসব চিত্র উঠে এসেছে।
এদিন মুগদা হাসাপাতালে কথা হয় তানিয়ার সঙ্গে। তার ৭ বছরের মেয়ে শিশু নাফিজা আরএসভি ভাইরাসে আক্রান্ত। পরবর্তীতে তা নিউমোনিয়ায় রূপ নেয়। গত ১১ ফেব্রুয়ারি মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করান তিনি। এখন বেশ ভালো আছে তার সন্তান।
Advertisement
তানিয়া জাগো নিউজকে বলেন, আমার সন্তানকে নিয়ে নরসিংদী থেকে এখানে এসেছি। চিকিৎসকদের পরামর্শে এখানে ভর্তি করেছি। শুরুতে শিশুর সর্দি, কাশি, জ্বর ছিল। পরে শ্বাসকষ্টসহ নিউমোনিয়া দেখা দেয়। এখন ভালো আছে। আগামীকাল ছুটি (ছাড়পত্র) দিতে পারে হাসপাতাল।
শ্বাসকষ্টসহ ১০ মাসের শিশু আমিন দেওয়ানকে হাসপাতালে এনেছেন কাউসার দেওয়ান। পরিবার জানায়, বাচ্চাটি এখন ভালো অনুভব করছে। তার (আমিন দেওয়ান) নিউমোনিয়া দেখা দিয়েছে। চিকিৎসক বলেছেন, সে ভাইরাসে (আরএসভি) আক্রান্ত। তার শ্বাসকষ্ট, জ্বরসহ এখনও কিছু সমস্যা আছে। তবে তা আগের চেয়ে অনকটা ভালো।
হাসপাতালটিতে জ্বর, খিঁচুনি নিয়ে ভর্তি রয়েছে ১৬ মাস বয়সী শিশু সিনথিয়া। তার বাবা রুবেল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, মেয়েটির হঠাৎ প্রচণ্ড জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি দেখা দেয়। এরপরই মুগদা হাসাপাতালে ভর্তি করাই। এখন বেশ কয়েকটি পরীক্ষা করানো হয়েছে। কিছু ওষুধ এখান থেকে পাচ্ছি, কিছু বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে। তবে খিঁচুনি হওয়ার পরই ভয় পেয়ে যাই।
কর্মরত চিকিৎসকরা জানান, সাধারণত ৩ মাস থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুদের জ্বরের প্রথম দিন খিঁচুনি হতে পারে। আবার পরিবার (বাবা-মা, ভাই-বোন) অথবা নিকটাত্মীয় কারো জ্বরজনিত খিঁচুনির ইতিহাস থাকলে এ সম্ভাবনা থাকে। তবে আতঙ্কিত না হয়ে আক্রান্ত শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। আমরা শিশুদের ওষুধ দিচ্ছি, সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরতে পারছেন শিশুসহ অভিভাবকরা। তবে ওষুধের স্বল্পতা আছে। ম্যাক্সিমাম ওষুধ সরবরাহ করছি, যেগুলো নেই সেগুলো বাইরে থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে।
Advertisement
চিকিৎসকদের আন্তরিকতা ও সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যমে বেশ কম সময়ের মধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠছে এক একটি শিশু। বর্তমানে হাসপাতালের ৭ তলায় শিশু ওয়ার্ডে মোট ১০৩ জন শিশুকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে মুগদা হাসপাতালের শিশু বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, এখানে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশুদের এই ওয়ার্ডে (শিশু ওয়ার্ড) ভর্তি করানো হয়। যার সিংহভাগ ওষুধ ও পরীক্ষা হাসপাতাল থেকেই করা হয়ে থাকে। আমরা চেষ্টা করি শিশুদের ভালো মানের সেবা দিতে।
আরএসভি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট নিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরএসভি ভাইরাস শিশুদের বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের ক্ষেত্রে এ জটিলতা বেশি দেখা যেতে পারে। তাছাড়া এর মাধ্যমে ফুসফুসের ছোট শ্বাসনালীতে প্রদাহ হতে পারে, যার ফলে শ্বাসকষ্ট হয়। এর মাধ্যমে ফুসফুসের সংক্রমণ, ব্রঙ্কিওলাইটিস বা হাঁপানি দেখা দিতে পারে। আবহাওয়াজনিত প্রভাব ছাড়াও স্ট্রিট ফুডের কারণে শিশুর ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিচ্ছে।
এ বিষয়ে মুগদা হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু মেডিসিন) ডা. মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, এখন আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত (শীত থেকে বসন্ত) ও স্ট্রিট ফুডের কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। বিশেষ করে আরএসভি ভাইরাসে আক্রান্ত বেশি দেখা যাচ্ছে। এর মাধ্যমে নিউমোনিয়াসহ জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট হয়। এছাড়া অ্যাজমা, ডায়রিয়া, অন্ত্রের নানা রোগ রয়েছে। তবে অ্যাজমা হলে দ্রুতই সেরে উঠছে, হয়তো দুই বা তিনদিন সময় লাগছে। আর অন্ত্রের বিষয় হলে সেখানে শিশুর সম্পূর্ণ সেরে উঠতে চার থেকে পাঁচ দিন সময় লাগছে। পরামর্শ থাকবে শিশুদের বাইরের খাবার বিশেষ করে স্ট্রিট ফুড থেকে দূরে রাখতে।
ইএআর/এএমএ/এএসএম