আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ইকসু) নির্বাচনের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।
Advertisement
ইকসু নির্বাচনের দাবিতে প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া ছাড়াও মতবিনিময় সভা করেছে ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ অন্যান্য সংগঠন। তাদের দাবি, ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে ছাত্র সংসদ সংক্রান্ত বিধান অন্তভুর্ক্ত করে ইকসু প্রতিষ্ঠা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, দলীয় নির্বাচিত সরকার ছাড়া ইকসু গঠন সম্ভব নয়। কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন আইনে (১৯৮০) ছাত্র সংসদ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো রাখা হয়নি। এমনকী ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধনের সময়ও ছাত্র সংসদের বিধান অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়েছে। ফলে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব ও বিগত প্রশাসনগুলোর অনীহায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ গঠন করা হয়নি।
তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান আইনি কাঠামো দিয়ে অধ্যাদেশ প্রণয়ন করে প্রশাসন চাইলে ছাত্র সংসদ গঠন করতে পারে। সংবিধি ও অধ্যাদেশ প্রণয়নের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন-১৯৮০ এর সিন্ডিকেট ক্ষমতা ও কার্যাবলী ২০ (জ)(ঝ) ধারায় বলা হয়েছে, চ্যান্সেলরের অনুমোদন সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সংবিধি প্রণয়ন, সংশোধন বা বাতিল করবে এবং অধ্যাদেশ প্রণয়ন, সংশোধন বা বাতিল করবে। এছাড়া সংবিধি প্রণয়ন ৩২ (২) ধারায় বলা হয়েছে, যেকোনো সময়ে সিন্ডিকেট সংবিধি প্রণয়ন করতে পারবে এবং তা সংশোধন বা বাতিল করতে পারবে।
Advertisement
এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস গঠন এবং সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে ইকসু অপরিহার্য। আমরা গত কয়েক বছর ধরে ইকসুর দাবি জানিয়ে আসছে। আমরা মনে করি, এটি শিক্ষার্থীদের সমষ্টিগত প্রয়োজনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, ‘সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত প্রধান প্রধান নীতিমালার কথা উল্লেখ রয়েছে। সব বিষয়ে নীতিমালা থাকবে না এটি স্বাভাবিক। ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আইনের দোহাই দেওয়া ঠুনকো অজুহাত।’
ইবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, ছাত্ররাজনীতি হওয়া দরকার ছাত্র সংসদ কেন্দ্রিক। দলীয় সরকার নয়, এ সরকারের আমলেই ইকসু গঠনের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার দাবি জানাই।
তবে ইকসু গঠনে কিছুটা সময় নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে ইবি ছাত্রদল। সংগঠনটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পারভেজ বলেন, ‘দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে স্বৈরাচারী সরকারের কারণে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম অবাধে করতে পারেনি। তাই আমরা মনে করছি ইকসু গঠনে প্রশাসনকে আরও সময় নেওয়া উচিত।’
Advertisement
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবি শাখার সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব ইকসু গঠন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ছাত্র সংসদের বিকল্প নেই।’
ইকসু গঠনে আইনি বাধা প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক আইন প্রশাসক ও আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট চাইলে নীতিমালা তৈরি করে ছাত্র সংসদ গঠন করতে পারে। অনেকেই নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ছাত্র সংসদ গঠনের কথা বলেন। কিন্তু আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয় নিজেই এটি করতে পারে।’
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘ছাত্র সংসদ সংক্রান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো নেই। তাই ছাত্র সংসদ গঠন করতে হলে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ, আদালতের আদেশ ও সংসদ কর্তৃক পাস করা নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে। দলীয় নির্বাচিত সরকার ছাড়া এটি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।’
এসআর/জেআইএম