ইসলামে শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাতটি বিশেষ ফজিলতপূর্ণ রাত। রাসুল (সা.) বলেছেন,
Advertisement
يطلع الله إلى خلقه في ليلة النصف من شعبان، فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن.আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে তার সৃষ্টিকুলের দিকে দয়ার দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫)
এ রাতটিই আমাদের দেশে ‘শবে বরাত’ হিসেবে পরিচিত। হাদিসে বর্ণিত ফজিলত ও আমলের বাইরেও এ রাতটিকে ঘিরে আমাদের দেশে অনেক রকম ভুল ধারণা, ভুল প্রথা ও আমল প্রচলিত রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে। যেমন অনেকে এ রাতে হালুয়া-রুটি বানানো, নিজেরা খাওয়া ও বিতরণ করাকে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ কাজ মনে করেন। অনেককে বলতে শোনা যায়, শবে বরাতে হালুয়া-রুটি বানালে আরশের নিচে ছায়া পাওয়া যাবে। তারা এ কথাটিকে নবিজির (সা.) হাদিস মনে করেন। অথচ নবিজির (সা.) সাথে এই কথাটির দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই। এটি সম্পূর্ণ মনগড়া ও বানোয়াট একটি কথা যা নবিজির (সা.) কথা হিসেবে প্রচার করা হয়।
অনেককে বলতে শোনা যায়, ওহুদ যুদ্ধে যখন নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দাঁত মোবরক শহীদ হয়েছিল, তখন তিনি কিছুদিন কোনো প্রকার শক্ত খাবার খেতে পারতেন না। সেই ঘটনার প্রতি সমবেদনা জানিয়ে এই দিনে ঘটা করে হালুয়া-রুটি খাওয়া হয়। এটিও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা। ওহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল শাওয়াল মাসের ৭ তারিখ। ওই ঘটনার সাথে শাবানের ১৫ তারিখ বা শবে বরাতের কোনো সম্পর্ক নেই।
Advertisement
শবে বরাতে হালুয়া-রুটি বানানো, খাওয়া বা বিতরণের প্রচলন নবিজি (সা.) ও সাহাবিদের যুগে ছিল না এবং এ রাতে হালুয়া-রুটি খাওয়া বা বিতরণের বিশেষ কোনো ফজিলত নবিজি (সা.) তার কোনো সাহাবি থেকে বর্ণিত হয়নি। হালুয়া রুটি বানানো, খাওয়া বা বিতরণ করা শবে বরাতের বিশেষ কোনো আমল নয়। শবে বরাতের জরুরি বা বিশেষ আমল মনে করে হালুয়া-রুটি বানালে, খেলে বা বিতরণ করলে তা বিদআত ও নাজায়েজ কাজ গণ্য হবে।
তবে এ রাতের বিশেষ আমল বা ফজিলতপূর্ণ আমল মনে না করেও কেউ যদি এ রাতে হালুয়া-রুটি বানায় বা বিতরণ করে, তাহলে তা নাজায়েজ হবে না। সদকা ও হাদিয়া সব সময়ই নেক আমলের অন্তর্ভুক্ত। সাধারণভাবে প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন বা দরিদ্রদের হালুয়া-রুটিসহ যে কোনো খাবার খাওয়ানো, হাদিয়া পাঠানো নাজায়েজ কোনো কারণ নেই। কিন্তু এটিকে শবে বরাতের বিশেষ আমল মনে করা বা এ রকম ভুল ধারণা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে এ রাতে হালুয়া-রুটি বানানো ও বিতরণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
ওএফএফ/জেআইএম
Advertisement