স্বাস্থ্য

চিকিৎসকদের ওপর হামলা: নিউরোসায়েন্সে আজও বন্ধ অস্ত্রোপচার

চিকিৎসকদের ওপর আউটসোর্সিং কর্মীদের হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে দ্বিতীয় দিনের মতো অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে।

Advertisement

গতকাল বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে নিউরোমেডিসিন বিশেষজ্ঞ সহযোগী অধ্যাপক ডা. গুরুদাস মন্ডলের যোগদান ঘিরে হাসপাতাল পরিচালকের সঙ্গে অন্য চিকিৎসকদের বাগবিতণ্ডা হয়। সেখানে পরিচালকের পক্ষ হয়ে আউটসোর্সিং কর্মীরা চিকিৎসকদের ওপর হামলা করেন। এতে দুজন চিকিৎসক আহত হন। প্রতিবাদে চিকিৎসকরা জরুরি ও বহির্বিভাগের সেবা চালু রেখে হাসপাতালের নিয়মিত অস্ত্রোপচার বন্ধ ঘোষণা করেন।

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে কথা বলে জানা গেছে, চিকিৎসকদের নিয়মিত অস্ত্রোপচার বন্ধের কর্মসূচি চলমান রয়েছে। পরিচালক ডা. কাজী দ্বীন মুহাম্মদ ও যুগ্মরিচালক বদরুল আলমকে অপসারণ না করা হলে আরও বড় কর্মসূচিতে যাবেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ঘটনার সূত্রপাত বুধবার সকালে। সহযোগী অধ্যাপক গুরুদাস মন্ডল যোগদান করতে এলে প্রতিবাদ করেন অন্য চিকিৎসকরা। এ নিয়ে বেশ হট্টগোলও হয়।

Advertisement

এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ জাগো নিউজকে বলেন, বড় হাসপাতাল কর্মকর্তা-কর্মচারী অনেক। এদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থাকতে পারে। তবে মারামারির ঘটনা ঘটেনি।

পরিচালকের সিকিউরিটির দায়িত্বে নিয়োজিত স্টাফরা জানান, একজন চিকিৎসক জয়েন করতে এসেছিলেন। পরিচালক মহোদয় জয়েন নেননি। কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসকরা এসে পরিচালকের সঙ্গে এ বিষয়ে খারাপ আচরণ করেন। যে কারণে আউটসোর্সিংয়ের স্টাফদের খারাপ লেগেছে। তারা এটার প্রতিবাদ করেছেন।

আরও পড়ুন ডা. গুরুদাস মন্ডলকে ঘিরে উত্তপ্ত নিনস, বন্ধ নিয়মিত অস্ত্রোপচার

মোবাইল ফোনে নিনস শাখা ড্যাবের সাধারণ সম্পাদক ডা. জালাল উদ্দিন রুমি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ডা. গুরুদাস মন্ডল স্বাচিপ (স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ) করেন। তিনি জুলাই বিপ্লবের সময় শান্তি মিছিলেও অংশ নিয়েছেন। চার মাস আগে আমরা পাবনা বদলি করেছিলাম তাকে। পরিচালক দ্বীন মোহাম্মদ সাহেব উনাকে আবার নিয়ে এসেছেন। এটা তো উনি ঠিক করেননি। উনি নিজেও তো শান্তি সমাবেশে গেছেন, বক্তব্য দিয়েছেন। ৪ আগস্ট শেখ হাসিনার বাসায় গেছেন, তার পক্ষে অবস্থান জানান দিয়েছেন। এখন আবার তিনি এ রকম একটা অন্যায় কাজ করবেন, এটা আমরা আশা করিনি। আমাদের এখানে আওয়ামী লীগপন্থি ছাড়া বিএনপি-জামায়াতসহ সব চিকিৎসক এ ঘটনায় মর্মাহত। আমরা ৪০-৫০ জন ডাক্তার গিয়ে দ্বীন মোহাম্মদ সাহেবকে জিজ্ঞেস করেছি। কেন আপনি এ কাজটা করলেন? এটা করে চলে আসার পর আমরা ৪২০ নম্বরে বসেছি।

তিনি বলেন, আমরা চলে আসার পর পরিচালকের গত ১০ বছরের মেয়াদে নিয়োগ পাওয়া আউটসোর্সিংয়ের কর্মীদের বলেন, আমাদের শায়েস্তা করতে। তারা পুরো হাসপাতালে মহড়া দিয়েছে। মিছিল করেছে। এতে তাদের সামনে পড়েছে আমাদের দুজন ডাক্তার। তাদের মারধরও করা হয়েছে। সব ডাক্তার মিলে সামনে দাঁড়ানোর পর তারা পিছু হটে।

Advertisement

ডা. জালাল উদ্দিন রুমি বলেন, আমরা আউটডোর ও জরুরি সেবা চালু রেখেছি। ইনডোরের নিয়মিত অস্ত্রোপচার আপাতত বন্ধ রেখেছি। আমরা বড় কর্মসূচিতে যেতে চাই না। পুরো শাটডাউন করার পক্ষে আমরা না। কিন্তু যদি প্রশাসন তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণি দিয়ে চিকিৎসকদের হেনস্তা করে আমরা বাধ্য হবো। আমাদের দাবি, এ প্রশাসন অপসারণ করতে হবে। এরা হাসিনার দোসর। আমরা তাদের চাই না। দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য। পরিচালক ডা. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ ও যুগ্ম পরিচালক বদরুল আলম মন্ডলের অপসারণ করতে হবে। অন্যথায় বড় কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো।

এ অবস্থায় হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যেও দেখা গেছে আতঙ্ক। একজন আরেকজনকে বলতে শোনা গেছে, ‘হাসপাতালে কোনো ঝামেলা হয়েছে বোধহয়।’ ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোগীদের অপেক্ষায় থাকতেও দেখা গেছে সেবার জন্য।

এসইউজে/বিএ/এএসএম