আরিফুল ইসলাম তামিম
Advertisement
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সিটি, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন আর পরীক্ষার চাপে মাঝেমধ্যে সবারই ইচ্ছে করে একদিন বন্ধুদের সঙ্গে দূরে কোথাও ঘুরতে যেতে। কিংবা একবেলা রান্না-বান্না করে খেয়ে-দেয়ে সময় পার করতে। শৈশবে হয়তো সবারই চাঁদা তুলে উঠানে বা বাগানে রান্না-বান্না করে খাওয়ার স্মৃতি আছে। যাকে বলা হয় চড়ুইভাতি।
আমরা পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ২৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী। অনার্স জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এখন আর নেই আগের মতো দুরন্তপনা। ব্যস্ততা ঘিরে ধরেছে সবাইকে। তবে সব ব্যস্ততাকে পাশ কাটিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই চড়ুইভাতি আয়োজনের পরিকল্পনা হাতে নিই। কোথায় হবে আয়োজন এ নিয়ে ভাবতে ভাবতে কয়েকদিন চলে যায়। সম্মিলিত সিদ্ধান্তে সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড সমুদ্রসৈকতে আয়োজনের পরিকল্পনা করি।
চড়ুইভাতি আয়োজনের দিনটি ছিল ৩০ জানুয়ারি। সকাল ৭টায় সময় দেওয়া থাকলেও সবেচেয়ে বেশি দেরী করেছে ফাবিহা। সবার আগে এসেছে আজিজ আর প্রান্ত। সকাল ৯টায় সবাই চট্টগ্রাম নগরের অলংকার মোড়ে উপস্থিত হোন। আয়োজনে ১৩ জন ব্যাচমেট যাওয়ার কথা থাকলেও রিয়ান আসতে পারেনি। আমরা বন্ধু রিয়ানকে ভীষণ মিস করেছি।
Advertisement
অলংকার থেকে বাসে চেপে যাত্রা শুরু হতে হতে প্রায় ১০টা। প্রায় ২৫ কিলোমিটার পর বাড়বকুণ্ড নামার বাজারে নেমে রওয়ানা হই আমাদের গন্তব্য অর্থাৎ বাড়বকুণ্ড সমুদ্রসৈকতের দিকে। স্থানীয়দের কাছে স্থানটি বেড়িবাঁধ নামে পরিচিত। চড়ুইভাতি আয়োজনের জন্য অসম্ভব সুন্দর জায়গা। পুরো সমুদ্রসৈকতে কেবল আমরা ১২ জন।
সমুদ্রপাড়ের সবুজ চর মনোমুগ্ধকর। চরের মধ্যে বেশকয়েকটি গাছ যেন সৌন্দর্যে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। গ্রামীণ জনজীবন, পাখির কিচিরমিচির, শীতের সকালের মিষ্টি রোদ, জেলেদের জীবন, মাছধরার দৃশ্য, পাখির ছোটাছুটি, ঢেউয়ের শব্দ ইত্যাদি যেন অন্যরকম নিদর্শন।
আরও পড়ুন নীলা মার্কেটে একদিন সবুজে ঘেরা বাড়বকুণ্ড সমুদ্রসৈকতনির্জন প্রাকৃতিক পরিবেশে রান্না-বান্না শুরু হতে হতে দুপুর ১২টা। প্রতিবার বিরিয়ানি রান্না করলেও এবার সাদা ভাত খেতে চাই। রান্না-বান্নার কাজে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে নিগার। মুরগি ভুনা, সাদা ভাত, আলু ভর্তা, টমেটো ভর্তা, শুঁটকি ভর্তা ইত্যাদির প্রস্তুতি শুরু হয়।
বাতাসের প্রচণ্ড গতি থাকায় চুলায় আগুন ধরাতে বেশ ভোগান্তি হয়। আমাদের বন্ধু প্রান্ত খুব সহজেই আগুন ধরানোর কাজটি করে। তবে প্রান্তকে সহযোগিতা করে রবিন। আগুন ধরার কাজ শেষ হলে প্রথমে মুরগি রান্না শুরু হয়। এরপর একে একে সব রান্না হয়। এরমধ্যে কেউ গান শুনছে, কেউ ছবি তুলছে। এ ছাড়া দলবেঁধে সৈকতে হাঁটাহাঁটি, জলে দাপাদাপি যেন ভিন্ন রকম একটি আনন্দময় মুহূর্ত।
Advertisement
দুপুরে জোয়ারের সময় পানি বেড়ে যাওয়ায় অপূর্ব রূপ ধারণ করে বাড়বকুণ্ড সমুদ্রসৈকত। রান্না শুরু করতে দেরি হওয়ায় দুপুর গড়িয়ে গেলেও রান্না শেষ হয়নি। ততক্ষণে সবার প্রচণ্ড ক্ষুধা লেগে যায়। তবে কারো এ নিয়ে মন খারাপ হয়নি। বিশেষ দিনগুলোর আনন্দ তো এখানেই।
দুপুরের খাবার খেতে খেতে বিকেল হয়ে যায়। সবুজ চরে সবাই গোল হয়ে বসে একবেলা খাওয়ার যে প্রশান্তি; তা সত্যিই অন্যরকম। খাওয়া শেষ হতে হতে গোধূলি নেমে আসতে শুরু করে। সবাই শেষ মুহূর্তে নিজেকে ক্যামেরাবন্দি করে নেন। সূর্য যখন পশ্চিম দিগন্তে হারিয়ে যাচ্ছে; তখন আমাদেরও বিদায়ের পালা। সব গুছিয়ে রওয়ানা হই বাড়ির পথে।
ফিরতে ফিরতে মনে হচ্ছিলো সমুদ্রপাড়ের নতুন এ স্মৃতিগুলো একসময় হয়তো অতীত হবে। তবে দিনগুলো বরাবরের মতোই থাকবে জীবন্ত। এ আয়োজন আমাদের শুধু আনন্দই দেয়নি বরং বন্ধুত্বের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করেছে। বাড়বকুণ্ডের সৈকতে কাটানো মুহূর্ত ২৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের স্মৃতির অ্যালবামে চির অমলিন হয়ে থাকবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম।
এসইউ/জিকেএস