দেশজুড়ে

বাক্স ভেঙে দরপত্র ছিনিয়ে নিলেন যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা

নওগাঁয় জলমহালের টেন্ডার বাক্স ভেঙে দরপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ২০-২৫ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। রোববার (০২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

Advertisement

পরে বিকেলে এ ঘটনায় সদর মডেল থানায় বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০-১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফয়শাল মাহমুদ পলাশ। ওই এজাহারে আসামিদের তালিকায় জেলা যুবদলের সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জহুরুল ইসলাম শ্যামল, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব খান এরশাদ, পৌর যুবদলের সদস্য সাজু হোসেন, ওমর ফারুক এবং এস এম হাসিবুল বারী’র নাম রয়েছে। এজাহারে উল্লিখিত সাইদুল, শাহজাহান, নিশান, আব্দুর রশিদ, ইয়াছিন আলী নামে বাকি ৫ জনের প্রত্যেকেই তাদের দলেরই নেতাকর্মী বলে জানা গেছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত ২০ একর সরকারি জলমহাল ইজারা দেওয়ার উদ্দেশ্যে গত ৫ জানুয়ারি এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে উপজেলা প্রশাসন। যেখানে অনলাইনে আবেদনের পর ইজারা আবেদনের প্রিন্টেড কপি ও জামানতের মূলকপি সিলগালা খামে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে রক্ষিত টেন্ডার বাক্সে ফেলতে বলা হয়। টেন্ডার বাক্সে এ দরপত্র ফেলতে সময় বেঁধে দেওয়া হয় ৩ কর্মদিবস।

এ সময়ের মধ্যে বুধবার (২৯ জানুয়ারি) ও বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও শেষ কর্মদিবস রোববার (০২ ফেব্রুয়ারি) বাধে বিপত্তি। ওইদিন দুপুর সাড়ে ১২টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় জেলা যুবদলের সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জহুরুল ইসলাম শ্যামল ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব খান এরশাদের নেতৃত্বে উপস্থিত হন ২০-২৫ জন যুবক। এরপর টেন্ডার বাক্স ভাঙতে লোহার রড ও হাতুড়ি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফয়শাল মাহমুদ পলাশ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে ফয়শাল মাহমুদ পলাশকে একটি কক্ষে অবরুদ্ধ রেখে মৎস্যজীবীদের সামনেই বাক্সটি ভেঙে সকল দরপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যান তারা।

Advertisement

এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সদর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের সরাইল গ্রামের মৎস্যজীবী একছাদ আলী বলেন, নিয়ম মেনে অনলাইনে আবেদন করে টেন্ডার বাক্সে দরপত্র জমা দিয়েছিলাম। কবে নাগাদ এসব অনুমোদন দেওয়া হবে, সেটি জানতে ইউএনও অফিসে এসেছিলাম। আসার পর দেখলাম ওরা আমাদের সামনে দিয়ে বাক্স ভেঙে দরপত্র লুট করে নিয়ে গেলো। রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষমতার কাছে আমরা বরাবরই অসহায়। তাই চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া উপায় ছিল না।

মামলার বাদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফয়শাল মাহমুদ পলাশ বলেন, পুরোপুরি সন্ত্রাসী কায়দায় পরিকল্পিতভাবে প্রস্তুতি নিয়ে এসে ওরা টেন্ডার বাক্স ভেঙে দরপত্র লুট করে নিয়ে গেছে। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও আটকাতে পারিনি। এ ঘটনার পর থেকে পুরো পরিষদে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আমরা প্রত্যেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

সোমবার (০৩ জানুয়ারি) সরেজমিন নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে গেলে উপজেলা পরিষদ ভবনের ভেতরের অংশে কোথাও সিসিটিভি ক্যামেরা দেখা যায়নি। তবে প্রধান ফটকের প্রবেশ এবং বাহির পথে তাকালে ২টি সিসিটিভি ক্যামেরা নজরে আসে।

এদিন নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইবনুল আবেদীনের কাছে ওই দুটি ক্যামেরার ফুটেজ চাইলে তিনি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, অল্প কিছুদিন আগে এখানে যোগদান করেছি। এই ভবনে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরাই নেই। বাহিরের ক্যামেরাগুলো নষ্ট।

Advertisement

ইউএনও আরও বলেন, এ ঘটনার আগে কয়েকজন দরপত্র জমা দেওয়ার সময় বর্ধিত করার অনুরোধ জানিয়েছিল। সেটি সম্ভব না হওয়ায় একটা পক্ষ ঝামেলা বাধানোর চেষ্টা করছিল। তারা এটি ঘটিয়েছে কি না সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, টেন্ডার বাক্স ভেঙে দরপত্র লুটের ঘটনায় জড়িত শাহজাহান নামে এক যুবককে এরইমধ্যে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। জড়িতদের বেশিরভাগকেই শনাক্ত করা গেছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। দ্রুত বিচার আইনে মামলা হওয়ায় এক মাসের মধ্যেই এ মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হবে।

ওসি আরও বলেন, টেন্ডার বাক্সের নিরাপত্তায় উপজেলা প্রশাসন পুলিশের কাছে কখনোই সহযোগিতা চায়নি। সেখানে ন্যূনতম সিসিটিভির ব্যবস্থাও করা ছিল না। এর সুযোগ নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে নওগাঁর জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়ালের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি কল রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আরমান হোসেন রুমন/এফএ/জেআইএম