আন্তর্জাতিক

এশিয়ায় দ্রুত বাড়ছে ডিজিটাল লেনদেন, কমছে নগদ অর্থের ব্যবহার

এশিয়ায় দ্রুত বাড়ছে ডিজিটাল লেনদেন, কমছে নগদ অর্থের ব্যবহার

এশিয়ায় দ্রুতগতিতে নগদ অর্থের লেনদেন কমে যাচ্ছে। তার জায়গা নিচ্ছে কিউআর কোড ও স্মার্টফোনভিত্তিক ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতিগুলো। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পেমেন্ট প্রসেসিং কোম্পানি ওয়ার্ল্ডপে’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে এশিয়ায় মোট লেনদেনের প্রায় ৪৭ শতাংশ নগদ অর্থে হতো, যা ২০২৭ সালের মধ্যে মাত্র ১৪ শতাংশে নেমে আসতে পারে।

Advertisement

ক্যাশলেস লেনদেনে এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের নিজস্ব ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম চালুর উদ্যোগ। এতে পশ্চিমা ক্রেডিট কার্ড ব্র্যান্ডগুলোর প্রভাব কমছে এবং দেশীয় পেমেন্ট সেবাগুলো জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

জনপ্রিয় হচ্ছে ডিজিটাল লেনদেন

ভারতের মুম্বাইয়ে এখন অনেক মোটরসাইকেল কুরিয়ার কোম্পানি খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দ্রুত সরবরাহ করছে, যেখানে পুরো লেনদেন স্মার্টফোনের মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে। এ ধরনের বেশিরভাগ সেবায় নগদ অর্থ গ্রহণ করা হয় না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে ২০১৯ সালে যেখানে মোট লেনদেনের ৭১ শতাংশ নগদ অর্থে হতো, ২০২৭ সালের মধ্যে সেটি কমে ১০ শতাংশ হতে পারে।

আরও পড়ুন>>

Advertisement

চীনের ডিপসিকের সাফল্যে কাঁপছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি বাজার বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধের শঙ্কা বাড়াচ্ছে ট্রাম্পের কঠোর শুল্কনীতি ১২ লাখ রুপি পর্যন্ত আয়ে করছাড় পাচ্ছেন ভারতীয়রা

২০১৬ সালে ভারত সরকার ইউনিফাইড পেমেন্টস ইন্টারফেস (ইউপিআই) চালু করে, যা রিয়েল-টাইম মোবাইল পেমেন্ট সিস্টেম হিসেবে কাজ করছে। পিডব্লিউসি ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ অর্থবছরে দেশটিতে ইউপিআই’র মাধ্যমে ১৩১ বিলিয়নের বেশি লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে।

এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনীতি চীনেও ডিজিটাল পেমেন্টের আধিপত্য বাড়ছে। দেশটির ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ আলিপে ও অন্যান্য ডিজিটাল পেমেন্ট অ্যাপ ব্যবহার করছে। ২০২৭ সালের মধ্যে চীনে নগদ লেনদেন কমে মাত্র ৩ শতাংশে দাঁড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ক্যাশলেস লেনদেন বৃদ্ধির কারণ

বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোনের জনপ্রিয়তা বাড়ার ফলে ক্যাশলেস লেনদেনও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আগে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট কম থাকায় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের হার কম ছিল। তবে এখন স্মার্টফোনের মাধ্যমে সহজেই পেমেন্ট করা যাচ্ছে, ফলে নগদ লেনদেনের প্রয়োজন কমে আসছে।

পূর্বাভাস বলছে, বিশ্বব্যাপী দোকানগুলোতে স্মার্টফোন-ভিত্তিক পেমেন্টের গড় ব্যবহার ২০২৭ সালের মধ্যে ৪৬ শতাংশে পৌঁছাবে, যা ক্রেডিট কার্ডের ২২ শতাংশ গড় ব্যবহারের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।

Advertisement

আন্তর্জাতিক পেমেন্ট নেটওয়ার্ক থেকে স্বাধীন হওয়ার চেষ্টা

বর্তমানে এশিয়ার দেশগুলো ক্রেডিট কার্ড কোম্পানিগুলোর ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নিজেদের পেমেন্ট নেটওয়ার্ক তৈরি করছে। ভারত ও চীন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর প্রতিযোগিতায় নিজস্ব ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা চালু করেছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোও কিউআর কোড-ভিত্তিক ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। থাইল্যান্ডের প্রম্পটপে এবং সিঙ্গাপুরের পেনাও ব্যবহারকারীরা পরস্পরের মধ্যে সহজেই অর্থ স্থানান্তর করতে পারছেন। একইভাবে, অঞ্চলজুড়ে একটি আন্তঃসীমান্ত রিয়েল-টাইম পেমেন্ট সিস্টেম তৈরির বিষয়ে গবেষণা চলছে।

এনটিটি ডাটা ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট কনসাল্টিং-এর গবেষক আকিরা ইয়ামাগামি বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো একটি ‘এশিয়ান পেমেন্ট ব্লক’ গঠনের চেষ্টা করছে, যা বিদেশি পেমেন্ট নেটওয়ার্ক থেকে স্বাধীন হবে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার-নেতৃত্বাধীন এই উদ্যোগগুলোতে লেনদেনের খরচ কম রাখার জন্য বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এই পেমেন্ট সিস্টেমগুলোর টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে নতুন উদ্ভাবন চালিয়ে যেতে হবে। একই সঙ্গে, গ্রাহক ও ব্যবসায়ীদের জন্য সাশ্রয়ী ফি নিশ্চিত করতে হবে।

সূত্র: নিক্কেই এশিয়াকেএএ/