সারাদেশে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) টিকার সংকট বেশ কয়েক মাস ধরেই। হাসপাতাল বা টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে টিকা না পেয়ে ফিরে এসেছেন অনেকেই। যদিও গত মাসের শেষে প্রোগ্রাম ম্যানেজার জানান, টিকার ক্রয় জটিলতা কেটেছে। জানুয়ারি মাসের পর আর এ সংকট থাকবে না। এ মাসের মধ্যেই তারা এটি কাটিয়ে উঠবেন।
Advertisement
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, শিশুদের টিকাগুলো সরকারি এবং বিদেশিদের দেওয়া অর্থে কেনা হয়। এখন টিকার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে টিকা ক্রয় সংক্রান্ত জটিলতা কেটেছে।
জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দেশের পশ্চিম সীমান্তের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে টিকা পাওয়া যায়নি। নবজাতকের জন্মের পর প্রথম টিকা বিসিজি দেওয়ার জন্য পার্শ্ববর্তী টিকাদান কেন্দ্রে যোগাযোগ করলে জানানো হয় টিকার সরবরাহ নেই। পরের সপ্তাহে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে টিকার ব্যবস্থা হয়। তবে টিকা নিতে গিয়ে জানা যায়, কেন্দ্রে টিকাদান কার্ডের সরবরাহ নেই। অথচ শিশুদের জন্য এই কার্ড অতিজরুরি একটি বিষয়। জন্মনিবন্ধন করাসহ জীবনের বৃত্তান্ত সংরক্ষণের দলিল হিসেবে কাজ করে এই কার্ড।
কেন্দ্রে টিকাদান কার্ডের সরবরাহ নেই। অথচ শিশুদের জন্য এই কার্ড অতিজরুরি একটি বিষয়। জন্মনিবন্ধন করাসহ জীবনের বৃত্তান্ত সংরক্ষণের দলিল হিসেবে কাজ করে এই কার্ড।
Advertisement
নবজাতকের বাবা হাসিবুর রহমান বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। যে টিকাদানে আমাদের সাফল্য বিশ্বস্বীকৃত, এখন সে টিকার যথাযথ সরবরাহ নেই। অবিলম্বে এ সমস্যার সমাধান হওয়া জরুরি।
আরও পড়ুন ডাক্তার দেখাতে সিরিয়ালের যুদ্ধ, সঙ্গে হাজারো ভোগান্তি জুলাই বিপ্লবে চক্ষু হাসপাতালের তিন লড়াকু চিকিৎসক কেউ ফেরেন হাসিমুখে, কেউ কাঁদতে কাঁদতেএকই চিত্র দক্ষিণের জেলা বরগুনায়। বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল থেকে গত ১৫ জানুয়ারি টিকা না পেয়ে ফিরে যান ১০ থেকে ১২ জন। এর মধ্যে শিশু আসফিয়া তাইয়েবার মা শাহিমা আকতার জাগো নিউজকে বলেন, আমরা যথাসময়ে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। তবে টিকা নেই বলে ফিরিয়ে দিয়েছে। শুধু আমাকে নয়, আমার সঙ্গে আরও ১০/১২জনকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরের সপ্তাহের বুধবার (২২ জানুয়ারি) গিয়ে টিকা দিতে পেরেছি।
এটি শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বরগুনার চিত্র নয়, সারাদেশেই এমন চিত্র বলে স্বীকার করেছেন সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন, ক্রয় সংক্রান্ত দীর্ঘসূত্রতার কারণে এমন সংকট দেখা দিয়েছে। সামনে এমন পরিস্থিতি থাকবে না।
সারাদেশে টিকা পাঠানো শুরু করেছি। এরই মধ্যে ৪০ শতাংশ টিকা পাঠিয়েছি, বাকি ৬০ শতাংশ পক্রিয়াধীন। আমরা টাকা পরিশোধ করেছি, টিকার ফুল শিপমেন্ট হয়ে গেলে আর সংকট থাকবে না। - ইপিআই প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান
Advertisement
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা সারাদেশে টিকা পাঠানো শুরু করেছি। এরই মধ্যে ৪০ শতাংশ টিকা পাঠিয়েছি, বাকি ৬০ শতাংশ পক্রিয়াধীন। আমরা টাকা পরিশোধ করেছি, টিকার ফুল শিপমেন্ট হয়ে গেলে আর সংকট থাকবে না।
আরও পড়ুন ভৈরবে টিকা সংকটে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ১০ হাজার নবজাতক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একমাস ধরে নেই শিশুদের ইপিআই টিকা টাইফয়েড-মশাবাহিত রোগের টিকাও পাবে শিশুরাসরকারি ক্রয় সংক্রান্ত কাজে স্বাভাবিকভাবেই দেরি হয়, এটা জেনেই সামনে যেন এমন সংকট না হয় সেজন্য কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সে ব্যবস্থা নিয়েছি।
ইপিআই কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন সময় (প্রাপ্যতা অনুযায়ী) যক্ষ্মা, ডিফথেরিয়া, ধনুষ্টংকার, হুপিংকাশি, পোলিও, হেপাটাইটিস বি, হিমো-ইনফ্লুয়েঞ্জা বি, হাম ও রুবেলা এই ৯টি রোগের প্রতিষেধক টিকা প্রয়োগ করা হয়। টিকা প্রদানের পর নতুনদের পরবর্তী টিকাদানের তারিখ উল্লেখ করে টিকাদান কার্ড দেওয়া হয়। এছাড়া পুরাতনদের কার্ডে পরবর্তী টিকাদানের তারিখ উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি ১৫ থেকে ৪৯ বছরের নারীদের ৫ ডোজ টিটি টিকা প্রদান করা হয়ে থাকে।
এসইউজে/কেএসআর/এএসএম