রাজনৈতিকভাবে ভারত ও পাকিস্তানের সাপে-নেউলে সম্পর্ক। আগে ক্রিকেটারদের আচরণেও ছিল সেই বৈশিষ্ট্য। এক দলের ক্রিকেটার অন্য দলের ক্রিকেটারের দিকে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে যেন তাকাতেই পারতেন না। বাঁকা চোখে হতো কথোপকথন, বিবাদে জড়াতো ক্ষণেক্ষণে।
Advertisement
দিনেদিনে র্যাডক্লিক লাইনের দুই পাশের ক্রিকেটারদের মধ্যে সেই বিরোধের মাত্রা কমেছে। মত বিনিময়ের সময় প্রায়ই তাদের চেহারা হাস্যোজ্জ্বল, গলায় গলায় ভাব দেখা যায়। মাঠে দুই দলের ক্রিকেটাররা একে অপরের সঙ্গে কথাও বলেন অবলীলায়। যেন বহুদিনের সম্পর্ক, একই সঙ্গে ওঠাবসা।
ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের এমন বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ অস্বাভাবিক মনে হয় পাকিস্তানের সাবেক উইকেটরক্ষক ব্যাটার ও সাবেক হেড কোচ মইন খানের কাছে।
আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি হবে ২৩ ফেব্রুয়ারি। ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। হাইভোল্টেজ এই ম্যাচের আগে ক্রিকেটারদের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ নিয়ে কথা বলেন মইন খান।
Advertisement
পাকিস্তানি কানাডিয়ান অভিনেত্রী উশনা শাহের হোস্ট করা একটি পডকাস্টে মইন খান বলেন, ‘এখন পাকিস্তান-ভারত ম্যাচ দেখলে আমি কিছুই বুঝতে পারি না। যেমন, ভারতীয় খেলোয়াড়রা ক্রিজে এলে আমাদের খেলোয়াড়রা তাদের ব্যাট চেক করে, একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ কথা বলে। আজকাল ভারতের সঙ্গে আমাদের খেলোয়াড়দের আচরণ আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়। মাঠের বাইরেও একজন পেশাদার হিসেবে আপনাকে কিছু সীমাবদ্ধতা মেনে চলতে হয়।’
মইন খানের উল্লেখ করেন, আগে পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা ভারতীয়দের সঙ্গে কথা বলতো না। তারা মনে করতেন, বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে দুর্বলতা প্রকাশ পায়।
পাকিস্তানের সাবেক নির্বাচক মইন খান বলেন, ‘আমাদের সিনিয়ররা সব সময় বলতেন যে, ভারতের বিপক্ষে খেলার সময় কোনো রকম ছাড় দেওয়া উচিত নয়। এমনকি মাঠে তাদের সঙ্গে কথা বলারও কোনো প্রয়োজন নেই। যখন আপনি বন্ধুত্বপূর্ণ হন, তারা এটিকে দুর্বলতার লক্ষণ হিসেবে দেখে। আমি মনে করি, আমাদের খেলোয়াড়রা এটি বুঝে না। কিন্তু বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়া মাঠে দুর্বলতার লক্ষণ হিসেবে দেখা হয়। এতে আপনার পারফরম্যান্সে স্বাভাবিকভাবে চাপ চলে আসে।’
মূলত, ২০১৬ সালের পর দুই দেশের ক্রিকেটারদের সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে। ভারতীয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলি যেখানে বিশ্বের অন্যান্য দলের বিপক্ষে আগ্রাসন দেখিয়ে খেলেন, সেখানে পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের সঙ্গে নমনীয় ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতে দেখা যায় তাকে। অন্যদিকে পাকিস্তানের মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবর আজমও ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করে থাকেন।
Advertisement
বরাবরের মতো এবার ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে ভক্তদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ। ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারতকে একবারও হারাতে পারেনি পাকিস্তান। তবে মিনি বিশ্বকাপখ্যাত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বেশি দাপট পাকিস্তানেরই।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে মোট ৫ বার মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। ৩টিতে পাকিস্তান, আর ২টিতে জিতেছে ভারত। সর্বশেষ ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডের ওভাল স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারতকে ১৮০ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতেছিল পাকিস্তান। অর্থাৎ পরিসংখ্যান বিবেচনায় দুবাইয়ে ডিফেন্ডিং পাকিস্তানকেই এগিয়ে রাখবেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
এমএইচ/এএসএম