নবিজি (সা.) তখন মক্কায় ইসলাম প্রচার করছিলেন। হজের মৌসুমে মক্কায় আরবের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হজের জন্য মানুষ আসতো। তাদেরকেও তিনি ইসলামের দাওয়াত দিতেন। একবার হজের মৌসুমে আকাবা নামক স্থানে মদিনার খাযরাজ গোত্রের সাত ব্যক্তির সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। তারা তখন মূর্তিপূজা করত। আল্লাহর রাসুল (সা.) তাদের ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানান। এর আগে তারা মদিনায় বসবাসরত ইহুদিদের কাছ থেকে আল্লাহর রাসুলের (সা.) সম্পর্কে শুনেছিল এবং জানতে পেরেছিল যে তিনি আল্লাহর প্রেরিত নবি। এ কারণে তারা আল্লাহর রাসুলের (সা.) আহবানে সাড়া দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করে।
Advertisement
তারা মদিনায় ফিরে গিয়ে আল্লাহর রাসুলের (সা.) বার্তা প্রচার শুরু করে। পরের বছর মদিনার বারো জন ব্যক্তি নবিজির (সা.) সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন এবং আকাবায় তার হাতে বায়আত (অঙ্গীকার) করেন। এটিই ছিল আকাবার প্রথম বায়আত। তাদের সঙ্গে আল্লাহর রাসুল (সা.) মুসআব ইবনে ওমায়েরকে (রা.) পাঠালেন তাদের কোরআন শেখানো ও ইসলামি শিক্ষা প্রদান করার জন্য। মুসআব (রা.) মদিনায় আসআদ ইবনে জুরারার (রা.) মেহমান হন।
মুসআবের (রা.) মদিনায় আগমনের খবর শুনে মদিনার বড় গোত্র আওসের সর্দার সাদ ইবনে মুআয ও উসাইদ ইবনে হুযাইর তার সঙ্গে দেখা করতে যান। প্রথমে উসাইদ (রা.) গিয়েছিলেন মুসআবকে ইসলাম প্রচারে বাধা দিতে। কিন্তু মুসআবের কথা শুনে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। পরে সাদ ইবনে মুআযও (রা.) মুসআবের (রা.) কাছ থেকে ইসলাম সম্পর্কে শোনেন এবং তিনিও ইসলাম গ্রহণ করেন।
ইসলাম গ্রহণের পর সাদ (রা.) তার গোত্রের কাছে গিয়ে ঘোষণা দেন, হে বনু আবদিল আশহাল, তোমরা জানো আমি তোমাদের মধ্যে কেমন ব্যক্তি?তারা বলল, আপনি আমাদের সর্দার এবং আমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।সাদ (রা.) বললেন, তাহলে জেনে রাখ, তোমাদের পুরুষ ও নারীদের সঙ্গে কথা বলা আমার জন্য হারাম যতক্ষণ না তোমরা আল্লাহ এবং তার রাসুলের প্রতি ইমান আনো।
Advertisement
সেদিন সন্ধ্যার মধ্যেই আওস গোত্রের সবাই ইসলাম গ্রহণ করে। সাদ ইবনে মুআযের (রা.) ইসলাম গ্রহণ ছিল মদিনায় ইসলামের দাওয়াতের জন্য একটি বড় বিজয়। এরপর দ্রুত মদিনায় ইসলাম ছড়িয়ে পড়তে থাকে। কিছুদিনের মধ্যে মদিনার প্রায় প্রতিটি ঘরে ইসলামের আলো পৌঁছে যায়।
মক্কায় তখন মুশরিকদের সঙ্ঘবদ্ধ অত্যাচার নির্যাতনে মুসলমানদের অবস্থা বিপর্যস্ত। নবিজির (সা.) দীর্ঘ ১৩ বছরের ইসলাম প্রচারের পরও মক্কার বেশিরভাগ মানুষ বিশেষত মক্কার নেতৃস্থানীয় ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বেশিরভাগ ইমান গ্রহণ করেনি। এক পর্যায়ে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মদিনায় হিজরতের নির্দেশ আসে। মুসলমানরা ধীরে ধীরে মক্কা ছেড়ে মদিনায় চলে যাওয়া শুরু করেন।
মক্কার কফেররা যখন বুঝতে পারে মুসলমানরা মদিনায় চলে যাচ্ছে, নবিজিও মদিনায় চলে যাবেন, তখন তারা নবিজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম) হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে। এক রাতে তারা নবিজির বাড়ি ঘিরে রাখে। নবিজি (সা.) সকালে দরজা খুলে বের হলে তারা একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে হত্যা করবে এই ছিল তাদের পরিকল্পনা। নবিজি (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের এই পরিকল্পনার কথা জেনে যান। রাতেই তিনি তাদের চোখে ধুলো দিয়ে বাড়ি থেকে বের হন এবং সাহাবি আবু বকরকে (রা.) সাথে নিয়ে মদিনার পথে বের হয়ে পড়েন।
মুশরিকদের সব প্রচেষ্টা ও চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়ে আল্লাহ তাআলা তার রাসুলকে মদিনায় পৌঁছে দেন। নবিজির (সা.) নেতৃত্বে মদিনায় ইসলামের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। মদিনা থেকেই পরবর্তীতে পুরো আরবে এবং সারা পৃথিবীতে ইসলামের শাসন ও দাওয়াত ছড়িয়ে পড়ে।
Advertisement
ওএফএফ/জিকেএস