এবারের বিপিএলে দুরন্ত-দুর্বার রংপুর রাইডার্স। নুরুল হাসান সোহানের দলের শৌর্য-বীর্যের সাথে কুলিয়ে উঠতে পারছে না কোনো দল। রংপুরের জয়রথ ছুটে চলেছে উল্কার মতো। ৮ খেলার সবকটিতে জিতে রংপুর শুধু পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষেই নয়, একমাত্র দল হিসেবে সবার আগে শেষ চারে খেলা নিশ্চিত করেছে।
Advertisement
ভাবছেন, রংপুর টানা ৮ খেলায় অপরাজিত, কোনো দল শক্তিতে পেরে উঠছে না সোহান বাহিনীর সাথে; তাহলে হয়তো সেই দলের ব্যাটার ও বোলাররাও রান সংগ্রহ ও উইকেট শিকারেও সবার ওপরে। কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় হলো, বাস্তবে তা হয়নি। রান সংগ্রহে এক নম্বর পজিশন তো বহুদূরে, শীর্ষ পাঁচেও নেই রংপুর রাইডার্সের কোনো ব্যাটার।
এখন পর্যন্ত রংপুর রাইডার্সের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান করা ব্যাটার হলেন খুশদিল শাহ। পাকিস্তানের এই মিডল অর্ডার কাম স্পিনার খুশদিল শাহ ৮ খেলায় ২৭৪ রান করে রান সংগ্রহে ৭ নম্বরে আছেন। এছাড়া শীর্ষ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় সেরা দশে রংপুরের আর কেউ নেই।
৮ খেলায় ২৪৫ রান করে ১১ নম্বরে আছেন সাইফ হাসান। এখন পর্যন্ত যে ৭টি সেঞ্চুরি হয়েছে, সেই সেঞ্চুরিয়ানের তালিকায় আছেন মাত্র একজন রংপুর ব্যাটার (অ্যালেক্স হেলস)।
Advertisement
রান সংগ্রহে সেরা পাঁচে কেউ না থাকলেও প্রথম ১৫ জনের মধ্যে অবশ্য রংপুরের ৪ ব্যাটার জায়গা করে নিয়েছেন। তারা হলেন খুশদিল শাহ, সাইফ হাসান, অ্যালেক্স হেলস (৬ খেলায় ২১৮) এবং ইফতেখার আহমেদ (৮ খেলায় ২০৭)।
সে তুলনায় বোলিংয়ে রংপুরের বোলারদের পারফরম্যান্স তুলনামূলক ভালো। রান সংগ্রহে সেরা পাঁচে রংপুরের কোনো ব্যাটার না থাকলেও উইকেট শিকারে সেরা ৫ বোলারের তালিকায় রংপুর রাইডার্সের ২ জন আছেন। তারা হলেন-আকিফ জাভেদ ও খুশদিল শাহ।
২৪ বছর বয়সী বাঁহাতি আফগান পেসার আকিফ জাভেদ ৬ খেলায় ১৩ উইকেট নিয়ে উইকেট শিকারে তৃতীয়। ১৭ জানুয়ারির শেষ ম্যাচে চিটাগাং কিংসের বিপক্ষে ৩২ রানে ৪ উইকেট শিকার করেন আকিফ। ঠিক তার আগের খেলায় খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে ২৯ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি।
এছাড়া উইকেট শিকারে সেরা পাঁচে আছেন রংপুরের অলরাউন্ডার খুশদিল শাহ। ৮ খেলায় ১১ উইকেট নিয়ে তিনি চতুর্থ স্থানে আছেন। আর উইকেট শিকারীদের মধ্যে সেরা দশে আছেন রংপুর রাইডার্সের বাংলাদেশি অফস্পিনার শেখ মেহেদিও (৮ খেলায় ৯ উইকেট নিয়ে ১০ নম্বরে)।
Advertisement
এর বাইরে দ্রুতগতির বোলার নাহিদ রানা ৭ খেলায় ৯ উইকেট নিয়ে আছেন ১২ নম্বরে এবং মিডিয়াম পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ৭ খেলায় ৮ উইকেট নিয়ে আছেন ১৪ নম্বরে।
অর্থাৎ উইকেট শিকারে সেরা দশে আছেন রংপুর রাইডার্সের ৩ বোলার (আকিফ জাভেদ, খুশদিল শাহ ও শেখ মেহেদী)। আর সেরা ১৫-তে আছেন ৫ জন (আকিফ জাভেদ, খুশদিল, শেখ মাহদি, নাহিদ রানা ও সাইফউদ্দিন)।
শুধু তাই নয়, দুর্বার রাজশাহী অধিনায়ক তাসকিন আহমেদের (১৯ রানে ৭ উইকেট) পরে যে ৪টি সেরা বোলিং স্পেল রয়েছে, তার ৩টিই রংপুর রাইডার্সের ৩ বোলারের-শেখ মাহদি (৪/২৭), নাহিদ রানা (৪/২৭) ও আকিফ জাভেদের (৪/৩২)।
ওপরের পরিসংখ্যান একটি বার্তা দিচ্ছে, রংপুর রাইডার্স কারো ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের ওপর নির্ভরশীল দল নয়। দলটির হয়ে কেউ বা কিছু নির্দিষ্ট পারফরমারই শুধু নিয়মিত ভালো খেলছেন না। বা দলের সাফল্য গুটিকতক পারফরমারের ওপর নির্ভরশীল নয়। পুরো দল একটি ইউনিট হয়ে খেলছে।
ব্যাটিং ও বোলিংয়ে ৮ থেকে ৯ জন প্রায় ধারাবাহিকভাবে খুব ভালো বা অসাধারণ না খেললেও মোটামুটি পারফরম্যান্স দিচ্ছেন এবং সময়ের দাবি মেটাতে পারছেন। ব্যাটিং ও বোলিংয়ে জনচারেক ব্যাটার আর অন্তত ৫ বোলার ধারাবাহিকভাবে প্রায় নিয়মিত ভালো পারফরম করছেন বলেই টিম পারফরম্যান্স হচ্ছে রংপুরের। আর সেই টিম পারফরম্যান্সের সাথেই বাকিরা পেরে উঠছে না। রংপুরের জয়ের কেতন উড়ছেই। সোহানের দল এখনো দুর্দমনীয়।
এআরবি/এমএমআর/জিকেএস