জাতীয়

কৃষি উপদেষ্টা হওয়ার পর বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যা বেড়েছে

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, স্বরাষ্ট্রের পাশাপাশি কৃষি উপদেষ্টা হওয়ার পর আমার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু বান্ধবের সংখ্যা বেড়ে গেছে। পাশাপাশি অনুরোধের সংখ্যাও বেড়েছে। অধিকাংশ অনুরোধ আসতেছে কিন্তু এই ভূমি সংক্রান্ত।

Advertisement

দুর্নীতি রোধে সচেতন ও কঠোর হবার আহ্বান জানিয়ে ভূমি কর্মকর্তা ও এসিল্যান্ডদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমার পরিচয় দিয়ে যদি কেউ কিছু করতে চায় বা অবৈধ সুবিধা নিতে চায়, তাহলে আপনারা কেউ কোনো সময়েই তা দেবেন না। প্রথমে বোঝাবেন, না বুঝলে পুলিশে দেবেন, যোগ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

রোববার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে বিসিএস ক্যাডারভুক্ত (প্রশাসন, পুলিশ, বন ও রেলওয়ে) এবং বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের কর্মকর্তাদের ১৩৭তম সার্ভে ও সেটেলমেন্ট প্রশিক্ষণ কোর্স, ২০২৪-২৫ এর সনদপত্র বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।

ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মো. মাহমুদ হাসানের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশ্যে কৃষি উপদেষ্টা বলেন, ভূমি নিয়ে পুলিশের বিশেষ কাজ করার কিছু নেই। কিন্তু সবচেয়ে বেশি অভিযোগ কিন্তু ভূমি সমস্যার কারণেই আসে।

Advertisement

তিনি বলেন, আমরাও (মন্ত্রণালয়) যদি কোনো সময় দুর্নীতি করি তাহলে সত্যটা প্রকাশ করেন, তাতে আমার কিছুতে আফসোস হবে না। সত্যটা প্রকাশ করেন, যেটা সঠিক। সাংবাদিকরা অনুসন্ধান করেন। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মাধ্যমে দুর্নীতি প্রকাশ করে দেন। তাতে আমরা লাভবান হবো, দেশ ও জনগণ লাভবান হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যদি আমরা সোচ্চার না হই, তাহলে দেশ কিন্তু আরও পিছিয়ে পড়বে।

জমি-জমার মামলা সম্পর্কে কৃষি উপদেষ্টা বলেন, জমি জমার মামলা কিন্তু অনেক দিন ধরে চলে। অনেক সময় হয় এমন যে, বাবার মামলা, ছেলেও সমাধান পায় না। পরে নাতি দেখা যায় জমিই চেনে না। এটা কিন্তু চেষ্টা করলে সমাধান সম্ভব, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, দেশের সিভিল সার্ভিস দেশের উন্নয়ন, পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, পরিবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে জবাবদিহি বিহীন সিভিল সার্ভিস ফ্যাসিস্ট শাসন সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। যেহেতু সরকারকে সিভিল সার্ভিসকে নিয়মমাফিক বেতন ভাতা দিতে হয় ও চাকরি হারানোর তাদের ভয় থাকে না সেহেতু তাদের উদ্ভাবনী শক্তি ও দেশসেবার আগ্রহ থাকে না। ফলে সেবা ও সার্ভিস প্রদানের মূল উদ্দেশ্য থেকে তারা দূরে সরে যায়।

আরও পড়ুন রক্ত ঝরবে কিন্তু সীমান্ত সুরক্ষিত থাকবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বিশ্বের উন্নত দেশের উদাহরণ টেনে এই উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন বা সরকার ব্যবস্থার বিবর্তনেও উন্নত দেশগুলোতে আমরা সিভিল সার্ভিসে পরিবর্তন দেখি না। কিন্তু আমাদের দেশে দেখা যায়। প্রজ্ঞা, মেধা, দক্ষতা, স্বচ্ছতা, ন্যায়নিষ্ঠতা, জবাবদিহি, সমতা, দেশপ্রেমের প্রতি দায়বদ্ধতার জন্য আমার মনে হয়, আরও অনেক পথ অতিক্রম করতে হবে সিভিল সার্ভিসকে।

Advertisement

তিনি বলেন, শৃঙ্খলা ও জবাবদিহি থাকলে আন্তঃক্যাডার বিরোধ থাকতো না। সবাই সচিব হতে চাইতো না। রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি তৈরি হতো না। তোষণ নীতি থাকতো না।

আগামী বিশ্বে একটি দেশের উন্নয়নে ভূমির সঠিক ব্যবহার, ভূমি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভূমির মালিকানা ও সরকারি নীতির মাধ্যমে ভূমির সঠিক ব্যবহার, পরিকল্পনা, আরবান প্ল্যানিং, স্পেশাল প্লানিং বিরাট ভূমিকা রাখে।

লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আরও বলেন, এদেশে বড় সমস্যা হচ্ছে দুর্নীতি। এই সমস্যায় বড় ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ জনগণ। অনেক সময়ই তারা সঠিক সহায়তাটা পাননা। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে মাঠ পর্যায়ে দুর্নীতি কমিয়ে আনতে হবে। এসিল্যান্ড হিসেবে আপনারা অনেকে কাজ করেছেন, অনেকে সেখানে যাবেন। আপনারাই পারবেন সাধারণ মানুষকে সহায়তা করতে।

বন বিভাগের অব্যবস্থাপনার কথা উল্লেখ করে কৃষি উপদেষ্টা বলেন, আমি হিল ট্রাকে কাজ করেছি তিন বছর। দেখছি সেখানে গাছ লাগানোই হয়না, কিন্তু কাটার জন্য পয়সা আগে চলে আসে। এদিকে খেয়াল করতে হবে। এখানে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। তাতে সাধারণ মানুষ ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর খুব উপকৃত হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এস এম সালেহ আহমেদ, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) এ. জে. এম. সালাহউদ্দিন নাগরী, ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) মুহম্মদ ইব্রাহিম।

টিটি/এসআইটি/জিকেএস