দেশজুড়ে

একজন চিকিৎসক দিয়েই চলছে পাবনার মা ও শিশু কেন্দ্র

ব্রিটিশ আমলে প্রসূতি সেবায় পাবনার গোবিন্দা এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয় পাবনা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র নামে একটি হাসপাতাল। কালের বিবর্তনে সব বদলালেও ভাগ্য বদলায়নি এ হাসপাতালটির। মাত্র একজন অস্থায়ী চিকিৎসক ও কিছু অস্থায়ী জনবল দিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। এতে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয়রা।

Advertisement

দরিদ্রদের চিকিৎসা সেবার লক্ষ্যে ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত এ হাসপাতাল সে সময় শিশু ও প্রসূতি সেবায় অনেকটা ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়। হাসপাতালে অনুমোদিত স্থায়ী পদের সংখ্যা ৭টি। এর মধ্যে প্রহরী, পরিচ্ছন্ন ও নিরাপত্তাকর্মীর পদ ৩টি। বাকি পদের মধ্যে একজন করে মেডিকেল অফিসার (ক্লিনিক), ফিমেল মেডিকেল অ্যাটেনডেন্ট, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ও সহকারী নার্সিং অ্যাটেনডেন্ট পদ রয়েছে। তবে এসব পদের একটিতেও স্থায়ী লোকবল নেই। মেডিকেল অফিসার (ক্লিনিক) পদে গত ৮ নভেম্বর একজন চিকিৎসক অতিরিক্ত দায়িত্বে এ হাসপাতালে চিকিৎসা দিচ্ছেন।

গোবিন্দার বাসিন্দা শাহিদা বলেন, সপ্তাহে দু’দিন এখানে বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। ডাক্তার কম থাকায় এ সেবা সঠিকভাবে আমরা পাচ্ছি না। আবার ওষুধের পরিমাণও খুবই কম। অধিকাংশ ওষুধ বাইরে থেকেই কিনতে হয়।

হাসপাতালের ডেলিভারি ওয়ার্ডের বারান্দায় ঘোরাফেরা করছিলেন রুবেল হোসেন। অন্যান্য ক্লিনিকে গেলে সিজারের প্রবণতা বেশি থাকলেও এখানে নরমাল ডেলিভারিকে গুরুত্ব দেওয়া হয় জেনে স্ত্রী ফেরদৌসী খাতুনের ডেলিভারি করাতে এনেছেন।

Advertisement

তিনি বলেন, মাত্র একজন ডাক্তার এখানে। আয়া দু’একজন। নার্সও কম। যার জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সমস্যা আছে। রোগীরা চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন কোনোমতে। ডাক্তারসহ দরকারি আয়া নার্স থাকলে এ সেবা আরও ভালো হতো।

স্থানীয় বাসিন্দা মোবারক হোসেন বাবর বলেন, আমি এই হাসপাতালে জন্ম নিয়েছি। আমার জন্মের পর হাসপাতালটির যে অবস্থা ছিল এখনো ঠিক সেই অবস্থাই আছে। একজন মাত্র ডাক্তার। তিনিও কখনো কখনো থাকেন না। তখন রোগীরা অন্য ক্লিনিকে যায়। ফলে অযথা সিজারের শিকার হয়, তাদের ব্যয় বাড়ে। কর্তৃপক্ষের উচিত হাসপাতালটির দিকে নজর দেওয়া। জনবল বাড়ানোসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নও করা উচিত।

হাসপাতাল সূত্র বলছে, ১৯৭৫ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের অধীনে আসে হাসপাতালটি। ১০ বেড নিয়ে শুরু হওয়া হাসপাতাল ২০ থেকে ৩০ বেডে উন্নীত হয়। দু’একবার অবকাঠামোগত সংস্কার হলেও নতুন বরাদ্দে হয়নি সম্প্রসারণ। শুরুতে মাসে এ হাসপাতালে ৩০০টিরও বেশি রোগীর নরমাল ডেলিভারি হলেও চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় জনবল ঘাটতির কারণে সেটি কমেছে। চিকিৎসক না থাকায় দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ ছিল সিজার। ব্যাহত হয়েছে নরমাল ডেলিভারিও। অতিরিক্ত দায়িত্বে একজন চিকিৎসক আসার পর বর্তমানে মাসে ৫০-৬০টি নরমাল ও ২-৩টি সিজারিয়ান ডেলিভারি হচ্ছে।

হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মা ও শিশু হাসপাতালে মাত্র একজন চিকিৎসকের পক্ষে মাকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হলেও শিশুর চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে ডেলিভারির পর শিশুদের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীর স্বজনদের। এছাড়া ব্যথামুক্ত ডেলিভারির জন্য স্থায়ীভাবে নেই অ্যানেস্থেশিয়া চিকিৎসকের পদ। ৮-১০ ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হলেও প্রসূতি সেবায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা আল্ট্রাসনোগ্রামের জন্য নেই মেশিন ও জনবল। এসব পদ তৈরির পাশাপাশি সার্বিক সেবার মান বাড়াতে আয়া ও নার্সসহ বেশ সংখ্যক জনবল বৃদ্ধিতে ঊর্ধ্বতনদের সুদৃষ্টি প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Advertisement

পর্যাপ্ত জনবল ও প্রয়োজনীয় বরাদ্দের মাধ্যমে রোগীদের সর্বোচ্চ মানের সেবা দেওয়া সম্ভব জানিয়ে মা ও শিশু হাসপাতালে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মেডিকেল অফিসার (ক্লিনিক) উর্মি সাহা জানান, নার্স, আয়া ও চিকিৎসক থেকে শুরু করে সবখানেই আমাদের জনবলের ঘাটতি রয়েছে। এরমধ্যেও আমরা চেষ্টা করছি প্রসূতি ও শিশুর সেবা দেওয়ার। আমাদের এখানে মা ও শিশুদের সেবা দেওয়ার কথা। কিন্তু মায়ের পর্যাপ্ত সেবা নিশ্চিত করতে পারলেও শিশুর তেমন সেবা আমাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয় না। কারণ এখানে কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ নেই। ফলে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর বাচ্চার কোনো সমস্যা হলে বাইরে পাঠাতে হয়। এছাড়া নরমাল ডেলিভারি এখানে ব্যাপক হয়। নরমাল ডেলিভারিতে ব্যথার জন্য গর্ভবতীদের ভয় বেশি। এক্ষেত্রে একজন অ্যানেস্থেশিয়া চিকিৎসক হলে ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি সম্ভব। এছাড়া আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট ও জনবল বরাদ্দসহ হাসপাতাল সম্প্রসারণের কথাও বলেন এ কর্মকর্তা।

এফএ/এএসএম