ধর্ম

মৃত বাবা-মায়ের জন্য যে দোয়া করবেন

সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা মহান রাব্বুল আলামিনের পর একজন মানুষের ওপর সবচেয়ে বেশি ইহসান ও অনুগ্রহ থাকে তার বাবা-মায়ের। মা সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেন, জন্মদান করেন, স্তন্যদান করেন, কোলে-পিঠে বড় করেন। বাবা দিনরাত পরিশ্রম করে তার ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করেন। তার যাবতীয় প্রয়োজন পূরণ করতে সচেষ্ট থাকেন।

Advertisement

বাবা-মায়ের অপরিসীম অনুগ্রহের ঋণ শোধ করার সামর্থ্য কোনো সন্তানের নেই। পৃথিবীতে সন্তানের জন্য বাবা-মায়ের চেয়ে বেশি নিঃস্বার্থ কল্যাণকামীও আর কেউ নেই। তাই সন্তানের কর্তব্য বাবা-মায়ের নেক নির্দেশ মেনে চলা, তাদের খুশি ও সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করা, তারা বার্ধক্য ও অসুস্থতায় অসহায় হয়ে গেলে তাদের দেখাশোনা করা, সেবা করা, কোনোভাবেই তাদের কষ্ট না দেওয়া এবং জীবিত ও মৃত অবস্থায় তাদের জন্য বেশি বেশি আল্লাহর কাছে দোয়া করা।

কোরআনে আল্লাহ তাআলা বাবা-মায়ের সাথে সদ্ব্যবহার করার এবং তাদের জন্য দোয়া করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করবে না এবং বাবা-মায়ের সাথে সদচারণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের ‘উফ’ বলো না এবং তাদের ধমক দিও না। আর তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বল। তাদের জন্য দয়াপরবশ হয়ে বিনয়ের ডানা নত করে দাও এবং বল, ‘হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালনপালন করেছেন’। (সুরা ইসরা: ২৩, ২৪)

বাবা-মায়ের জীবনকালেও তাদের সুস্থতা ও নেক হায়াতের জন্য দোয়া করতে হবে। মৃত্যুর পর ক্ষমা, আখেরাতের মুক্তি ও মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য বেশি বেশি দোয়া করতে হবে।

Advertisement

সন্তানের দোয়া যে বাবা-মায়ের কাজে লাগে, তাদের গুনাহ ক্ষমা করা হয় এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেওয়া হয় তা আল্লাহর রাসুলের (সা.) হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারি। রাসুল (সা.) বলেন, কোনো কোনো ব্যক্তি জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা লাভ করে বলবে আমার এত মর্যাদার অধিকারী কীভাবে হলাম? তাকে বলা হবে, তোমার জন্য তোমার সন্তানের দোয়া ও ইস্তেগফারের কারণে তুমি এত মর্যাদা পেয়েছ। (সুনানে ইবনে মাজা, মুসনাদে আহমদ)

আরেকটি বর্ণনায় রাসুল (সা.) বলেন, আদম সন্তান যখন মারা যায়, তখন তার তিন প্রকার আমল ছাড়া অন্য সব আমলের ধারা বন্ধ হয়ে যায়; ১. সদকায়ে জারিয়া (ফায়েদা অব্যাহত থাকে এ রকম সদকা যেমন মসজিদ নির্মাণ করা, কূপ খনন করে দেওয়া ইত্যাদি) ২. ইলম বা জ্ঞান যা দ্বারা মানুষ উপকৃত হতে থাকে ৩. নেক সন্তান যে তার জন্য নেক দোয়া করতে থাকে। (সহিহ মুসলিম)

বাবা মায়ের জন্য কোরআনে বর্ণিত দুটি দোয়া

১. মৃত ও জীবিত বাবা-মায়ের জন্য আল্লাহর রহমত চেয়ে এ দোয়াটি পড়তে পারেন,

Advertisement

رَّبِّ ارۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّیٰنِیۡ صَغِیۡرًا

উচ্চারণ: রাব্বির-হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা

অর্থ: হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালনপালন করেছেন। (সুরা বনি ইসরাইল: ২৪)

২. হজরত ইবরাহিমের (আ.) এ দোয়াটিও জীবিত ও মৃত বাবা মায়ের মাগফেরাতের জন্য পড়তে পারেন,

رَبَّنَا اغۡفِرۡ لِیۡ وَ لِوَالِدَیَّ وَ لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ یَوۡمَ یَقُوۡمُ الۡحِسَابُ

উচ্চারণ: রাব্বানাগ ফিরলি ওয়া লিওয়ালিদাইয়া ওয়া লিলমুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব

অর্থ: হে আমাদের রব! হিসাব গ্রহণের দিন আমাকে, আমার বাবা-মাকে আর মুমিনদের ক্ষমা করুন। (সুরা ইবরাহিম: ৪১)

এ ছাড়া নিজের ভাষায়ও মৃত বাবা-মায়ের জন্য আল্লাহর ক্ষমা, কবরের আজাব ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাতে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য দোয়া করতে পারেন।

ওএফএফ/জিকেএস