তথ্যপ্রযুক্তি

মোবাইলে ১০০ টাকা রিচার্জে ৪৪ টাকা ব্যবহার করতে পারবেন গ্রাহক

মোবাইল ফোনে কথা বলা এবং ইন্টারনেট ব্যবহারে ফের খরচ বাড়ছে। বর্তমানে মোবাইল ফোন সেবায় সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ। এটি বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। শিগগির এ নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে।

Advertisement

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, মোবাইল ফোন সেবায় বিদ্যমান সম্পূরক শুল্কের সঙ্গে আরও ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপর্যায়ে থেকে অনুমোদন দিয়েছে। দুটি মন্ত্রণালয় থেকেও অনুমোদন মিলেছে। এখন প্রজ্ঞাপন হলে তা কার্যকর করা যাবে।

জানা যায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল ফোন সেবায় সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী, বর্তমানে মোবাইলে ১০০ টাকার রিচার্জ করলে সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট ও সারচার্জ দিতে হয় ২৮ দশমিক ১ টাকা। রেভিনিউ শেয়ার ও মিনিমাম ট্যাক্স দিতে হয় ৬ দশমিক ১ টাকা, পরোক্ষ কর দিতে হয় ২০ দশমিক ৪ টাকা। অর্থাৎ, গ্রাহক ১০০ টাকা রিচার্জ করলে সবমিলিয়ে কর বাবদ কাটা পড়ে ৫৪ দশমিক ৬ টাকা।

অন্তর্বর্তী সরকার সম্পূরক শুল্ক আরও ৩ শতাংশ বাড়ালে কর দিতে হবে ৫৬ দশমিক ৩ টাকা। যার মধ্যে সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট ও সারচার্জ কাটবে ২৯ দশমিক ৮ টাকা। রেভিনিউ শেয়ার ও মিনিমাম ট্যাক্স কাটবে ৬ দশমিক ১ টাকা, পরোক্ষ কর কাটবে ২০ দশমিক ৪ টাকা। গ্রাহক ১০০ টাকা রিচার্জ করলে সবমিলিয়ে কর দিতে হবে ৫৬ দশমিক ৩ টাকা। ফলে গ্রাহক ১০০ টাকায় ব্যবহার করতে পারবেন মূলত মাত্র ৪৩ টাকা ৭০ পয়সা।

Advertisement

আরও পড়ুন

টেলিযোগাযোগ খাতে অস্থিরতার শঙ্কা, বাড়বে ইন্টারনেটের দাম ইন্টারনেটের দাম কমাতে বিটিআরসিকে প্রস্তাব আইআইজিএবিরবিটিআরসির ২ কমিশনারের নিয়োগ বাতিল

এদিকে, মোবাইলে ফোন সেবায় দফায় দফায় খরচ বাড়ায় ইন্টারনেট গ্রাহক কমছে। তাছাড়া অনেকে ডাটা ব্যবহারের খরচে কাটছাঁট করছেন। এতে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়ার বদলে উল্টোপথে হাঁটছে দেশের মানুষ।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী—গত নভেম্বর মাসে মুঠোফোনের গ্রাহক ছিল ১৮ কোটি ৮৭ লাখ, যা গত জুনের চেয়ে ৭৩ লাখ কম। অন্যদিকে জুনের চেয়ে মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯৭ লাখ কমে ১৩ কোটি ২৮ লাখে নেমেছে।

মোবাইল অপারেটরস কমিউনিটি অব বাংলাদেশ নামে ফেসবুকে একটি গ্রুপ রয়েছে। সেখানে প্রায় ৪৩ হাজার গ্রাহক যুক্ত। এ গ্রুপে মূলত মোবাইল ফোন সেবা, কলরেট, ইন্টারনেটের গতি বিষয়ে গ্রাহকরা তথ্য আদান-প্রদান করেন।

Advertisement

আহমেদ শাকিল নামে একজন গ্রাহক সেখানে লিখেছেন, সরকার মোবাইল ফোন সেবার ইন্ডাস্ট্রি থেকে বড় আকারে রাজস্ব তুলতে চায়। অথচ দেশের ধনী-গরিব সব শ্রেণির মানুষ এখন মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটে যোগাযোগে অভ্যস্ত। এটা মৌলিক অধিকার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্পূরক শুল্ক বাড়ছে মানে এ টাকাটা সরকারের পকেটে যাবে। এখানে সরকার দায়ী। সরকারকে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে।

জুবায়ের আল মামুন নামে আরেকজন লিখেছেন, মোবাইলে কল দিয়ে কথা বলা বাদই দিয়েছি। প্রয়োজনে মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ বেশি ব্যবহার করি। এবার থেকে মোবাইল রিচার্জ আরও কমানোর পথে হাঁটা ছাড়া উপায় নেই।

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ইন্টারনেট পরিষেবায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা তলানিতে আছি। কিন্তু ভ্যাটের ক্ষেত্রে বিশ্বের সর্বোচ্চ স্থানে। যেখানে দেশের ৪৮ শতাংশ মানুষ এখনো ইন্টারনেট সেবার বাইরে, সেখানে নতুন করে উচ্চহারে করারোপ নাগরিকদের ইন্টারনেট সেবা বিমুখ করবে। নতুন করে বৈষম্য সৃষ্টি করবে।

বিষয়টি নিয়ে বিটিআরসি ও সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কথা বলতে রাজি হননি। তাদের ভাষ্য, ‘আগে প্রজ্ঞাপন হোক, তারপর বিষয়টি নিয়ে বলা যাবে।’ তারা এখনো বিষয়টি নিয়ে অবগত নয় বলেও দাবি করেন।

এএএইচ/ইএ