পতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না দেশের শেয়ারবাজার। মাঝেমধ্যে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিলেও পরক্ষণেই দরপতন হচ্ছে। ফলে দিন যত যাচ্ছে, শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের লোকসান ততই বাড়ছে। এতে শেয়ারবাজারের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলছেন বিনিয়োগকারীরা।
Advertisement
সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শুরুতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেলেও শেষ পর্যন্ত দরপতন হয়েছে। মূলত শেষ এক ঘণ্টায় এক শ্রেণির বিনিয়োগকারী বিক্রির চাপ বাড়ানোতে কিছু বড় মূলধনের প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমে যায়। এতে মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। তবে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। ডিএসইতে এদিন ১৩ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে।
ডিএসইতে দাম কমার তালিকায় বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট থাকলেও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় বেশি প্রতিষ্ঠান স্থান পেয়েছে। ফলে এই শেয়ারবাজারে বেড়েছে মূল্যসূচক। তবে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।
এর আগে রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে ডিএসইতে লেনদেনে বিঘ্ন ঘটে। নির্ধারিত সময়ের দেড় ঘণ্টা পর সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে লেনদেন শুরু হয়ে চলে দুপুর ২টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত। পরের ১০ মিনিট অর্থাৎ ২টা ৫০ মিনিট থেকে ৩টা পর্যন্ত পোস্ট ক্লোজিং সেশন চলে। নেটওয়ার্ক সমস্যার সমাধানের পর লেনদেন হলেও শেয়ারবাজারে সার্বিক দরপতন হয়। পরের কার্যদিবস সোমবার ডিএসইতে মূল্যসূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়।
Advertisement
আরও পড়ুন
ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে শেয়ারবাজারশেষের বিক্রির চাপে পতনে শেয়ারবাজারএমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মধ্য দিয়ে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের উর্ধ্বমুখী প্রবণতার দেখা মেলে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ায় লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ৩৪ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
লেনদেনের প্রথম তিন ঘণ্টা সূচকের ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত থাকে।
কিন্তু দুপুর ১টার পর শেয়ারবাজারের চিত্র বদলে যেতে থাকে। দাম বাড়ার তালিকা থেকে বেশ কিছু বড় মূলধনের প্রতিষ্ঠান দাম কামার তালিকায় চলে আসে। ফলে একদিনে দাম কমার তালিকা বড় হয়, অন্যদিকে সবকটি মূল্যসূচক কমে দিনের লেনদেন শেষ হয়।
Advertisement
লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১৬২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ১৬৪টির। ৭৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসই'র প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৯০ পয়েন্টে নেমে গেছে।
অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯২২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৫৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
মূল্যসূচক কমলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪২৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৬২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। সে হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ৬৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে ১৭ ডিসেম্বরের পর ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন হলো।
এই লেনদেনে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে মিডল্যান্ড ব্যাংকের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ২০ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের ১২ কোটি ৮২ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১২ কোটি ৩৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের ফলে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফাইন ফুডস।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- রবি, ড্রাগন সোয়েটার, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, পূবালী ব্যাংক, ওরিয়ন ইনফিউশন, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন এবং ফারইস্ট নিটিং।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৩৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২০৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬১টির এবং ৩০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
এমএএস/এএমএ