রাজনীতি

ফারুকের ওপর হামলার ঘটনায় সারজিসকে দায়ী করলেন খোমেনী

জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের নাগরিক সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসানের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ হামলার নেপথ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির সারজিস আলম জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের আহ্বায়ক খোমেনী ইহসান।

Advertisement

শনিবার (৪ জানুয়ারি) রাতে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া পোস্টে এ দাবি করেন তিনি।

ফেসবুক পোস্টে খোমেনী ইহসান লিখেন, ‘জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সমাবেশে হামলার নেপথ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির সারজিস আলম জড়িত। হামলাকারীরা এক সময় যুবদল করলেও বর্তমানে সারজিসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সারজিস আমাদের নাগরিক সমাবেশ বানচালে জড়িত থাকার অডিও ক্লিপস আমি এক ছাত্র উপদেষ্টার কাছে পাঠিয়েছি। সারজিস কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে জড়িত ছিল এবং আন্দোলনকে থামিয়ে দিতে বারবার ষড়যন্ত্র করেও আমাদের হস্তক্ষেপে ব্যর্থ হয়।’

‘সারজিস ৫ আগস্টের পর বিপ্লবী সাজলেও আমরা তার বিরোধিতা অব্যাহত রাখি। সে সচিবালয়সহ বহু জায়গায় নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত ছিল। এ নিয়ে আমরা সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সরকারের কাছে আপত্তি জানাই। পরবর্তী সময়ে ছাত্রদের একজনের কারণে তার বিষয়ে ছাড় দেই। সারজিস হয়তো ভাবছে তার নরমালাইজেশন হয়ে যাওয়ায় সে জবাবদিহির ঊর্ধ্বে উঠে গেছে। না ভাই এমনটি মনে করো না। আমরা সমর্থন প্রত্যাহার করলে তোমরা কয়দিন টিকতে পারবে তা গুনে দেখ। আমরা ছাত্রদের ব্যর্থ দেখতে চাই না বলে তোমাদের সঙ্গে বিরোধিতায় যেতে চাই না। কিন্তু এর মানে এও নয় যে দলগত ছাড় সবার কপালে জুটবে।’

Advertisement

খোমেনী আর লিখেন, ‘তুমি সাবেক ছাত্রলীগ, তুমি এত শক্তিশালী হলে শিবিরের প্রশংসায় গদগদ হতে না। কিন্তু তুমি ছাত্রলীগের দুর্বলতা ঢাকতেই গদগদ করো, কিন্তু তুমি হয়তো জানো না শিবিরকে ম্যানেজ করলেও কারও কারও কাছে শক্তিশালী হওয়া যায় না। জুলাই বিপ্লবের নেপথ্যের শক্তি কাউকে না চেনো সমস্যা নেই। আমাদের সঙ্গে মৈত্রী রাখারও দরকার নেই। কিন্তু কোন সাহসে শহীদ পরিবারদেরকে আমাদের কর্মসূচিতে আসতে বাধা দিয়েছ? কেন আবার হামলা করতে অস্ত্রসহ লোক পাঠিয়েছ? পিস্তল নিয়ে আসলো, ছুরি আনলো কেন? এ কাজ কি লিগ্যাল? কোথায় পেয়েছ এই সন্ত্রাসের এখতিয়ার? আমরা তোমাকে জবাবদিহি ও বিচারের মুখোমুখি করবো ইনশাআল্লাহ।’

তবে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের এক বিবৃতিতে সমাবেশে হামলাকারীদের ভিডিও দেখে চিহ্নিত করে গ্রেফতার দাবি করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় এক যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি জানিয়েছেন নবগঠিত দলটির রাজনৈতিক প্রধান আনিসুর রহমান ও সাংগঠনিক প্রধান মো. শফিউর রহমান।

আরও পড়ুন

ছাত্রদল নয়, বিপ্লবী পরিষদের নেতাকর্মীরা হামলা করেছেন গণঅধিকারের ফারুক হাসানের ওপর হামলা, অভিযোগ ছাত্রদলের বিরুদ্ধে

বিবৃতি বলা হয়, দুপুর ২টায় জুলাইয়ের শহীদ পরিবারের সদস্য ও নাগরিকদের নিয়ে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ সমাবেশ আয়োজন করে। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জুলাইয়ের আহতদের এক মিছিল সমাবেশস্থলে আসে। এর কিছুক্ষণ পর সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান বক্তৃতা করেন। তখন কয়েকজন ব্যক্তি ফারুক কেন বক্তব্য দিল বলে হৈ চৈ করেন। এক পর্যায়ে তারা ফারুকের ওপর হামলা করেন। হামলাকারীরা সমাবেশে চেয়ার ভাঙচুর ও ছোড়াছুড়ি করলে জুলাইয়ের অনেক শহীদের মা ও বোন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এসময় তাদের রক্ষা করতে গিয়ে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক জুলাইয়ে উত্তরায় আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী রাবেয়া আক্তার হামলার শিকার হন।

Advertisement

হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে ও ফারুককে হামলা থেকে বাঁচাতে গেলে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইয়েদ কুতুব, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহকারী সদস্য সচিব আশরাফুল ইসলাম ও রাফসানজানি, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মো. আরিফুল ইসলাম সাকিব, সলিমউল্লাহ ও হিযবুল্লাহ আহত হন।

বিবৃতিতে বলা হয়, সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদ নেতা ফারুক হাসান ও বিপ্লবী পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে লাইভ সম্প্রচারিত হয়েছে। এতে হামলাকারীদের সবার চেহারা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

হামলাকারীদের পরিচয় জানতে বিপ্লবী পরিষদের অনুসন্ধান শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত হামলাকারীদের মধ্যে শরীফ ও হিল্লোল নামের দুজনের পরিচয় জানা গেছে। তারা রাজধানীর শ্যামলী থেকে সমাবেশস্থলে আসেন বলে জানা গেছে।

বিবৃতি উল্লেখ করা হয়, শহীদ পরিবারের সদস্য ও নাগরিক সমাবেশের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ থেকে বিধিগতভাবে অনুমতি নিয়ে নিরাপত্তার আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু হামলার সময়ে শহীদ মিনারে পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও এগিয়ে আসেননি।

সদ্য গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের অভিষেক অনুষ্ঠানকে হামলা করে বানচাল করে দেওয়ার পরও এ বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বিস্ময়কর বক্তব্য দিয়েছেন। যেখানে ভিডিও দেখে পুলিশ সহজেই হামলাকারী ও আক্রান্তদের পরিচয় ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বের করতে পারবে, সেখানে তিনি জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের বিরুদ্ধে ভুল বক্তব্য দিয়েছেন। জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ ও গণঅধিকার পরিষদ একই সঙ্গে আক্রান্ত হওয়ায় উভয় সংগঠন মিলে হামলাকারীদের গ্রেফতার দাবিতে সোচ্চার হতে বিবৃতি আহ্বান জানানো হয়।

কেএসআর/এমএস