‘যতদিন না সাধারণ ছাত্রদের ভেতরে ছাত্র রাজনীতির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হবে, ততদিন ছাত্র শিবির ক্যাম্পাসগুলোতে ঘোষণা দিয়ে কোনো কর্মসূচিতে যাবে না। ছাত্র শিবির সাধারণ ছাত্রদের মাঝ থেকে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে ভীতি দূর করতে চায়,’ বলেছেন চট্টগ্রাম মহানগর (উত্তর) ছাত্রশিবিরের সভাপতি ফখরুল ইসলাম।
Advertisement
শনিবার (৩০ নভেম্বর) চট্টগ্রামে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। চকবাজার থানার ডিসি রোডের আরইসরা ভবনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি বলেন, ‘সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রশিবির আছে। কিন্তু আমরা ছাত্রলীগের মতো দখলদারিত্বের রাজনীতি করতে চাচ্ছি না। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমরা আমাদের একইনীতি অবলম্বন করছি।’
ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১৬ বছর ছাত্রলীগ যেমন ছাত্ররাজনীতির নামে দমনপীড়নের চিন্তা ছাত্রদের মাঝে রয়েছে। ছাত্রশিবির চায় এই ধরনের আধিপত্যবাদী ছাত্ররাজনীতি যেন না থাকে। সবাই যেন রাজনীতির প্রতি আন্তরিক হয়। যে সাধারণ ছাত্র সে তার প্রতিষ্ঠানে যাবে, তার দায়িত্ব পালন করবে।’
Advertisement
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিবিরের এই নেতা বলেন, ‘অনেকে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক, মহসিন ও চট্টগ্রাম কলেজ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করেছেন। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, সাধারণ ছাত্ররাই ক্যাম্পাসগুলো পরিচালনা করছে। সাধারণ ছাত্রের ভেতর ছাত্রশিবির, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা আছেন। এককভাবে যে শিবির আধিপত্যবাদ কি সেটাতে আমরা বিশ্বাসী নয়।’
‘সম্প্রতি চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইস্যুতে অনেক গণমাধ্যম ছাত্রশিবিরকে দোষারোপ করেছেন। আমরা অনুরোধ করবো আপনারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন, আসলে সেখানে কি ঘটেছিল। সাধারণ ছাত্রদের ভূমিকা যেটাই ছাত্রশিবির সেটাতেই সমর্থন দেবে। মূলত ওইখানে হলো খোলাকে কেন্দ্র করে গন্ডগোল হয়েছিল। সাংবাদিকরা ভালোভাবে তদন্ত করলে বিষয়গুলো আরও ভালো করে উঠে আসবে।’ তিনি যোগ করেন।
সঠিক তথ্য প্রচারের অনুরোধ জানিয়ে সাংবাদিকদের নগর শিবির সভাপতি বলেন, ‘সাংবাদিক বা পত্রপত্রিকা যে বিষয়টি প্রকাশ করে মানুষ আগে তা বিশ্বাস করে। পরে মানুষ সেটা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে। আপনারা যখন নিউজ করেন, আমরা খুব বেশি কষ্ট পাই আপনাদের শিরোনাম দেখে। অনেক সময় সত্যতা যাচাই না করে আমাদের দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে। সামনে থেকে বিষয়টি খেয়াল রাখতে সাংবাদিকদের অনুরোধ করব। অনেক বেশি সচেতনতার সঙ্গে বিবেকবান হয়ে আপনারা সংবাদ প্রচার করবেন।’
ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ৩৬শে জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে একটি ফ্যাসিবাদ শক্তিকে দেশ থেকে দূর করেছি। আমরা চাই না নতুন কোনো ফ্যাসিবাদ এসে আমাদের সামনে উপস্থিত হোক। এক্ষেত্রে সাংবাদিক ভাইয়েরা সবচেয়ে বেশি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। আমরা দেখেছি বিগত সরকারের আমলে হাউস পলিসির কারণে আপনারা অনেকে ফ্যাসিবাদের বাইরে আসতে পারেন নাই। আমরা এমন হাউজ পলিসি চাই না, যে হাউস পলিসি ফ্যাসিবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা করে, সহযোগিতা করে।’
Advertisement
শিবির ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে নয় জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অবশ্যই ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে নই, আমরা আধিপত্যবাদ ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে। আমরা চাই এদেশে নতুন কোনো আধিপত্যবাদ ছাত্র রাজনীতি বা নতুন কোনো আধিপত্যবাদ আমাদের যেন গ্রাস না করে। আমরা চাই না নতুন কোনো আধিপত্যবাদ, নতুন কোনো ফ্যাসিবাদ আমাদের ওপর এসে পড়ুক।’
লিখিত বক্তব্যে শিবির সভাপতি বলেন, ‘পতিত স্বৈরচার জুলাই বিপ্লবকে বেহাত করতে নানান ষড়যন্ত্রের পাঁয়তারা করে আসছে। চট্টগ্রামেও এরই মধ্যে কয়েক দফা ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনো পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের তৎপর পরিলক্ষিত হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন ব্যানারে।’
‘দায়িত্বশীল ছাত্র সংগঠন হিসেবে শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে সর্বোত্তমভাবে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করে থাকি। যেহেতু এই সংগঠন মানুষ দ্বারা পরিচালিত তাই মাঝে মধ্যে ছোটখাট ত্রুটিবিচ্যুতি হওয়া স্বাভাবিক এবং তা সংশোধনযোগ্যও বটে।’ বলেন ফখরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বদা আমাদের গঠনমূলক সমালোচনা ও সংশোধনীকে স্বাগত জানায়। এ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্মানিত সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজকে আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী মনে করি। দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আপনাদের গঠনমূলক সমালোচনা আমাদের অব্যাহত অগ্রযাত্রাকে আরও বেশি গতিশীল করবে।’
ছাত্রশিবিরের চট্টগ্রাম মহানগর (উত্তর) সেক্রেটারি তানজীর হোসেন জুয়েলের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন নগর (উত্তর) ছাত্রশিবিরের অর্থ সম্পাদক মুমিনুল হক, আফিস সম্পাদক খুররম মুরাদ, প্রকাশনা সম্পাদক আবরার হাসান রিয়াদ ও প্রচার সম্পাদক সালাউদ্দিন আকাশ।
এএজেড/এমআরএম/এএসএম