কিশোরগঞ্জ শহরের নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে ১১টি লোহার দানবাক্স রয়েছে। ৩ মাস ১৪ দিন পর শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকাল ৭টায় এ দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছে। এতে পাওয়া গেছে রেকর্ড ২৯ বস্তা টাকা।
Advertisement
মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৩৫০ জনের একটি দল এই ২৯ বস্তা টাকা গণনার কাজে অংশ নিয়েছে। এবার দানবাক্স খোলার সময় পার হয়ে যাওয়ার অতিরিক্ত একটি টিনের বাক্স বাড়ানো হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক মিজাবে রহমত এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীর উপস্থিতিতে দানবাক্সগুলো খোলা হয়। এছাড়াও এ সময় বিপুল সংখ্যক সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসার সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
Advertisement
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান জানান, এবার তিন মাস ১৪ দিন পর শনিবার সকালে পাগলা মসজিদের ১১টি দানবাক্স খোলা হয়েছে। এতে ২৯ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। পরে মসজিদের দোতালায় এনে টাকা গণনার কাজ শুরু হয়েছে। তিন মাস পর পর দানবাক্সগুলো খোলা হলেও এবার তিন মাস ১৪ দিন পর দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছে। এবারও তাই একটি টিনের ট্রাঙ্ক বাড়ানো হয়েছিল। আশা করা যাচ্ছে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হবে।
টাকা গণনার কাজে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষক ও আইসিটি) মহুয়া মমতাজ, রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম, সিবিএ নেতা আনোয়ার পারভেজ প্রমুখ অংশ নিয়েছেন।
এর আগে সর্বশেষ গত ১৭ আগস্ট পাগলা মসজিদের ১০টি দানবাক্স খোলা হয়েছিল। তখন তিন মাস ২৬ দিনে ৭ কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা পাওয়া যায়। এছাড়া দানবাক্সে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গিয়েছিল।
এর আগে একই বছরের ২০ এপ্রিল পাগলা মসজিদের ৯টি দানবাক্স খোলা হয়েছিল। তখন রেকর্ড ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা পাওয়া যায়, যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছিল। এছাড়াও দানবাক্সে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গিয়েছি। এছাড়া ২০২৩ সালে চারবার খোলা হয়েছিল কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স। চারবারে মোট ২১ কোটি ৮৭ লাখ ৮৫ হাজার ১৮১ টাকা পাওয়া যায়। টাকার পাশাপাশি হীরা, বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকারও পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ।
Advertisement
মসজিদের দান থেকে পাওয়া এসব অর্থ সংশ্লিষ্ট মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় হয়। এছাড়া করোনাকালে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককেও অনুদান দেওয়া হয়েছিল এ দানের টাকা থেকে।
মসজিদটিতে এবার আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুতই এর কাজ শুরু হবে। যার নামকরণ হবে ‘পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স’। এটি নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। সেখানে ৬০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
এসকে রাসেল/এফএ/এমএস