মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের পর অনেকেই অভিবাসন ও ভিসার হার নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। আশার কথা, বর্তমানে বাংলাদেশের ১৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন। ২০২৪ সালের ‘দ্য ওপেন ডোরস রিপোর্ট অন ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনাল এক্সচেঞ্জ’র তথ্য অনুযায়ী, গত শিক্ষাবর্ষের (২০২২-২০২৩) তুলনায় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৬ শতাংশ বেড়েছে। সামনের দিনগুলোতে এ সুযোগ কতটা থাকবে সেটি নিয়ে চিন্তিত অনেকে।
Advertisement
যুক্তরাষ্ট্রে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য কী কী সুযোগ আছে, কীভাবে কোন ভিসায় তারা যেতে পারবে এসব বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্বনামধন্য ইমিগ্রেশন ল’ফার্ম রাজু ল’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রিন্সিপাল অ্যাটর্নি রাজু মহাজন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইসমাইল হোসাইন রাসেল।
জাগো নিউজ: ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ভিসা দেওয়ার হার কমে যাবে- এমন আশঙ্কা করছেন অনেকে। আপনি কী মনে করেন?
রাজু মহাজন: আমি এটা একেবারেই মনে করি না। আমেরিকার আসলে দক্ষ জনশক্তি দরকার। বাংলাদেশে একটি বড় সংখ্যক তরুণ জনসংখ্যা রয়েছে। এরা কিন্তু খুবই দক্ষ। যুক্তরাষ্ট্রে কর্মক্ষেত্রেও তারা সুনাম নিয়ে আছেন। আমার মনে হয় না ভিসার হার কমবে। বিশেষ করে শিক্ষার্থী ভিসা তো একেবারেই কমবে না। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি পোস্ট দেখলাম ফেসবুকে যে লোন নিয়ে কীভাবে পড়তে যাওয়া যায় সেটা নিয়ে তারা ক্যাম্পেইন করছে।
Advertisement
আমরা অদূর ভবিষ্যতে দেখবো বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংক, ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থীদের লোন দেবে, সেই লোন নিয়ে আমেরিকায় পড়তে যাবে। এবং পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করে সেই টাকা শোধ করবে। আমার মনে হয় এতে ভিসার হার আরও বাড়বে
এতদিন দেখতাম ভারত থেকে ছেলে-মেয়েরা লোন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যেত। এতদিন বাংলাদেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সেভাবে প্রস্তুত ছিল না। আমরা অদূর ভবিষ্যতে দেখবো বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংক, ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থীদের লোন দেবে, সেই লোন নিয়ে আমেরিকায় পড়তে যাবে। এবং পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করে সেই টাকা শোধ করবে। আমার মনে হয় এতে ভিসার হার আরও বাড়বে।
আরও পড়ুন
‘যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বন্ধ করা সম্ভব হবে না’ বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক এখন কোন পথে এগোবে বাণিজ্যিক কারণে জোরালো হতে পারে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কজাগো নিউজ: সবার মধ্যে একটা ধারণা অনেক টাকা না থাকলে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়া সম্ভব হয় না। ফলে সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা মেধাবী শিক্ষার্থীরা অনেক সময় এই ধারণা নিয়ে হয়তো চেষ্টাই করেন না বিদেশে পড়তে যাওয়ার। অর্থটা কি তাহলে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য বড় বাধা?
Advertisement
রাজু মহাজন: এটা একবারেই সঠিক নয়। কারণ আমেরিকায় হাজার হাজার ইউনিভার্সিটি। এবং প্রায় সবগুলো ইউনিভার্সিটিতেই পিএইচডি প্রোগ্রাম আছে। পিএইচডি যারা করতে যান অধিকাংশেরই পুরো টিউশন ফি মওকুফ থাকে। এছাড়াও বছরে অন্তত ২০-৩০ হাজার ডলার দেওয়া হয় বসবাসের জন্য। প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী ফুল স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যাচ্ছে। বরং আমি মনে করি দরিদ্র পরিবারের মেধাবীদের জন্য আমেরিকায় যে পরিমাণ সুযোগ আছে সেটি অন্য দেশে তুলনামূলক কম। কেউ যদি মনে করেন তিনি মেধাবী না বা কিছুটা কম মেধাবী বলে স্কলারশিপ পাননি স্নাতক বা স্নাতকোত্তরে, তখন কিছুটা খরচের ব্যাপার আছে। কিন্তু পিএইচডিতে ফুল ফান্ড নিয়েই কিন্তু যাওয়া যায়।
কেউ যদি মনে করেন তিনি মেধাবী না বা কিছুটা কম মেধাবী বলে স্কলারশিপ পাননি স্নাতক বা স্নাতকোত্তরে, তখন কিছুটা খরচের ব্যাপার আছে। কিন্তু পিএইচডিতে ফুল ফান্ড নিয়েই কিন্তু যাওয়া যায়
জাগো নিউজ: শিক্ষার বাইরে যারা পেশাগত কারণে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাতে চান তাদের জন্য কী ধরনের সুযোগ রয়েছে?
রাজু মহাজন: আমেরিকার ইমিগ্রেশন সিস্টেমটা এমনভাবে ডিজাইন করা যে প্রত্যেক পেশার মানুষের জন্যই কোনো না কোনো সুযোগ রয়েছে। আপনি যদি নামকরা কোনো সেলিব্রেটি হোন, ক্রিকেটার হোন তাহলে আপনার জন্য আছে ইবি-১ ভিসা। আপনি যদি খুব মেধাবী শিক্ষার্থী হন, গবেষণা করেন, পাবলিকেশন্স থাকে ভালো, কাজের অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে আপনার জন্য রয়েছে ইবি-২। আবার আপনি খুব কম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হন, শিক্ষিত নন, মাঠে কাজ করেন তাদের জন্য রয়েছে ইবি-৩। আবার আপনি যদি ধর্মীয় কাজে সম্পৃক্ত থাকেন যেমন মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত, চার্চের পাদ্রি হলে আপনার জন্য আছে ইবি-৪।
আপনি ব্যবসায়ী হলে আপনার জন্য আছে ইবি-৫। ফলে যেটা হয় আপনি যে পেশায় থাকেন, শিক্ষায় যে স্তরে থাকুন আপনার জন্য কোনো না কোনো অপশন রয়েছে। গ্রিন কার্ড নিয়েই সেখানে যাওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু আপনাকে সেই ক্যাটাগরির যে শর্তাবলি আছে সেগুলো পূর্ণ করে আপনি আমেরিকায় যেতে পারবেন।
আইএইচআর/এএসএ/এমএস