ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেছেন, যারা আমাদের ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে তাদের চিহ্নিত করেছি। সেসব টাকা উদ্ধারের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক সহায়তায় কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে আমরা অ্যাটাচমেন্ট (আদায়ের মাধ্যমে সমন্বয়) শুরু করবো। আশা করছি আগামী তিন মাসের মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াবে।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এসময় ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তৌহিদুল আলম খান, পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, যারা ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন তাদের নামে, বেনামে, স্থাবর, অস্থাবর যেসব সম্পত্তি আছে সেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। কোনো কোনো গ্রাহক আছেন গুলশানে যাদের এক হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এগুলো নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি ব্যাংকের পক্ষে। যারা এই ব্যাংক থেকে সবচেয়ে বেশি টাকা নিয়েছেন তাদের ধরতে কার্যকরী উদ্যোগ নিয়েছি।
ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, আতঙ্ক এবং গুজবে ব্যাংক খাত থেকে আস্থা হারিয়েছেন আমানতকারী। আবার ব্যাংক খাতে অনিয়ম ছিল না- তা বলবো না। ব্যাংকিং খাতে বহুমাত্রিক ও বহু পাক্ষিক অনিয়ম হয়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংকে আন্তর্জাতিক এবং দেশীয়সহ পাঁচটি অডিট ফার্ম কাজ করছে। তাদের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবো। এতদিন এ ব্যাংকে যত অনিয়ম হয়েছে এখন তা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ। এখন আমরা ঋণ অবলোপন থেকে এবং মন্দ মানে খেলাপি হয়ে যাওয়া ঋণ আদায়ের চেষ্টা করছি। পাশাপাশি বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং রেমিট্যান্সের ওপর জোর দিয়েছি।
Advertisement
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, দেশের কঠিন সময়েও ন্যাশনাল ব্যাংক দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত তৈরি পোশাকশিল্প ও কারখানার পাশে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। বিশেষত এলসি সুবিধা প্রদানসহ পোশাককর্মীদের বেতন-ভাতা সময়মতো পরিশোধ নিশ্চিত করায় ন্যাশনাল ব্যাংক সদা সচেষ্ট। এর সঙ্গে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রেও ন্যাশনাল ব্যাংক সচেষ্ট। ন্যাশনাল ব্যাংক এই অক্টোবর পর্যন্ত ৯০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায় করেছে এবং চলতি বছরের মধ্যে আরও ৪০০ কোটি টাকা আদায়ের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
এর আগে গত ২০ আগস্ট বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ন্যাশনাল ব্যাংকের আগের পরিচালকদের অনেকেই চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের নামে-বেনামে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ছিলেন। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ব্যাংকটিকে এস আলম গ্রুপের হাত থেকে মুক্ত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ন্যাশনাল ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ২৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খাতা-কলমে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৩৬৫ কোটি বা মোট বিতরণ করা ঋণের ২৯ শতাংশ। যদিও প্রকৃতপক্ষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেশি। ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ১১ হাজার ৬৯৮ কোটি।
ইএআর/কেএসআর/জিকেএস
Advertisement